UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় বছর জুড়ে আলোচনায় বেসরকারি জুটমিল শ্রমিক আন্দোলন

koushikkln
ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শেখ বদরউদ্দীন , ফুলবাড়ীগেট : ২০২২ সালের শুরু থেকেই খুলনার খানজাহান আলী থানা এলাকার মিরেরডাঙ্গা ও আটরা শিল্প এলাকায় শুরু হয় বেসরকারী জুট মিল শ্রমিকদের আন্দোলন। ধারাবাহিক এ আন্দোলন কর্মসূচি সারা বছর ধরেই চলছে এমনকি বছরের শেষ মাসে এ আন্দোলন আরো তিব্র হতে শুরু করেছে । ৬ দফা দাবিতে মহসেন, সোনালী, এ্যাজাক্স, জুট স্পিনার্স সহ ব্যক্তি মালিকানা জুট মিল শ্রমিকদের আন্দোলন এখনো অব্যাহত রয়েছে। দাবি আদায়ে সভা-সমাবেশ, মিল গেটে বিক্ষোভ, ভুখা মিছিল, গণমিছিল, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন শেষে নভেম্বর মাসে ঘোষনা করা হয় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি , কর্মসূচি ঘোষনার পর আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এমপি , যেখানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান , শ্রম কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বৈঠকে বসেই বিভিন্ন মালিকদের ফোন দেন এবং শ্রমিকদের নায্য পাওনা পরিশোধের জন্য তাগিদ কড়া তাগিদ দেন শ্রমিকের পাওনা শ্রম আইন মোতাবেক পরিশোধ না করলে মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার ও হুশিয়ারী দেন তিনি।

মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার এ্যাজাক্স জুট মিলটি ২০১৪ সালের ২২ মে বন্দ ঘোষণা করা হয় মিল বন্দের প্রায় ৭ বছর অতিবাহিত হলেও মিল মালিকের কাছে ৬১০ জন শ্রমিক কর্মচারীর বর্তমানে চুড়ান্ত পাওনা রয়েছে ২৩ কোটি টাকা। সোনালী জুট মিলটি দির্ঘদিন বন্দ থাকলেও বর্তমানে আংশিক চালু থাকলেও আনুমানিক ২৪শ শ্রমিক কর্মচারীদের প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। মহসেন জুট মিলটি ৯ বছর আগে বন্দ ঘোষনা করা হলেও মিল কতৃপক্ষের কাছে প্রায় সোয়া ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে, শিরোমনি শিল্প এলাকার জুট স্পিনার্স মিল ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে আংশিক উৎপাদনে রয়েছে, শ্রমিক কর্মচারীদের কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া কিছুদিন আগে শ্রমিকদের পাওনা টাকা একটা অংশ পরিশোধ করা হলেও এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে মিলের শ্রমিক নেতারা।

আটরা শিল্প এলাকার আফিল জুট মিলটি দির্ঘদিন ধরে বন্দ থাকলেও নভেম্বর এর শেষ সপ্তাহ থেকে শ্রমিক কর্মচারীদের চুড়ান্ত বকেয়া পরিশোধ করা শুরু করেছে মিল কতৃপক্ষ এ মিলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শ্রম আইন মোতাবেক হয়নি , বা অনেক শ্রমিক তাদের পাওনা বুঝে পাইনি বলে খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বছরের শুরু থেকেই বকেয়া মজুরি প্রদান ও মিল চালুর দাবিতে বেসরকারী পাট, সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানের শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয় খুলনার শিল্পাঞ্চলে। দফায় দফায় সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল আর সভা সমাবেশের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে আন্দোলন। এমনকি ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে খুলনার বন্দকৃত জুট মিলের শ্রমিকরা। ৬ দফার মধ্যে বকেয়া মজুরি পরিশোধ বন্ধ মিল চালু, বেসরকারী জুট মিল শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা, ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুসরন করে মিল চালানো, সম কাজে সমমুজুরি প্রদান, নতুন মুজুরি কমিশন ঘোষণা, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ি মজুরি প্রদান করা শ্রমিকদের মূল দাবি।

বন্ধকৃত মহসেন জুট মিলের শ্রমিক নেতা কাজী আমির মুন্সি বলেন নিজের জীবন যৌবন পার করলাম মিলে কাজ করেছে অথচ বয়সের শেষ সময়ে এসে মিল মালিকের কাছে নিজের পাওনা টাকা পড়ে থাকলেও টাকার অভাবে ঔষধ কিনে খেতে পারছিনা। বেসরকারী পাট, সুতা, বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল খান বলেন আমরা ধারাবাহিকভাবে শান্তিপুর্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি বর্তমান সরকার একযোগে সরকারী পাটকল শ্রমিকদের যাবতিয় পাওনাদী পরিশোধ করেছে অথচ বেসরকারী জুট মিলের শ্রমিকরা বছরের পর বছর তাদের চুড়ান্ত পাওনা মিল মালিকের কাছ থেকে না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে বসরকারী জুট মিল শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এ শ্রমিক নেতা।