মোঃ রায়হান মোল্লা : খুলনায় প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর এতেই অকালে ঝরছে কত জনের তরতাজা প্রাণ। আবার কেউ কেউ আহত হয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছে। তবুও হুঁশ হচ্ছে না এসব অদক্ষ ও অবৈধ ড্রাইভারদের। প্রতিদিনের খবরের কাগজ খুললেই দেশের কোন না কোন জায়গার দুর্ঘটনার খবর মিলে। এটি এখন ডাল ভাতে পরিণত হয়েছে। তবে এর জন্য দায়ী কে?
অধিকাংশই দেখা গেছে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ এবং অবৈধ ড্রাইভার গাড়ি চালাতে গিয়েই এরকম হাজারো দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। সড়ক আইন ঠিক মত মানছে না তারা। উপযুক্ত শাস্তির বিধান থাকলেও সেটির যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সহজেই এরা পার পেয়ে যাচ্ছে। পরবর্তিতে আবারও এরকম কান্ড ঘটাচ্ছে। এদের কারণেই সড়কগুলো অনিরাপদ থেকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সড়ক কি আদৌ নিরাপদ হবে এমন প্রশ্ন জাগে জনমনে। দিন দিন সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে। জুলাই মাসে মাত্র ২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিলো সেই তুলনায় গেলো মাসে খুলনার বিভিন্ন সড়কে গাড়ি দুর্ঘটনায় ৯ জন অকাতরে প্রাণ দিয়েছে এবং সাথে গুরুতর আহত হয়েছে ৫ জন। এদের মধ্যে ছাত্র, সরকারী চাকরীজীবী ও ভিক্ষুকসহ অন্যান্যরাও রয়েছে।
।। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ এবং অবৈধ ড্রাইভার গাড়ি চালাতে গিয়েই এরকম হাজারো দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। সড়ক আইন ঠিক মত মানছে না তারা। উপযুক্ত শাস্তির বিধান থাকলেও সেটির যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সহজেই এরা পার পেয়ে যাচ্ছে। পরবর্তিতে আবারও এরকম কান্ড ঘটাচ্ছে। ।।
এরই একাংশ হিসেবে গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যা ৮টায় নগরীর আড়ংঘাটা বাইপাস লতার মোড়ে নির্মাণাধীন ক্যান্সার হাসপাতালের সামনে রাস্তার উপর গাড়ী রেখে মোটর সাইকেলে থাকা তিনজন কথা বলছিলো। এসময় খুলনা যশোর গামী ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মনিরুল ইসলামের (৪৯) মৃত্যু হয় এবং বাকী দুইজন গুরুতর আহত হয়। নিহত মনিরুল সাতক্ষীরা গোবিন্দ কাটি গ্রামের জবেদ আলি সরদারের ছেলে।
একই দিনে (২৮ আগস্ট) রাত পৌনে ১১ টায় খানজাহান আলী সেতুর (রূপসা সেতু) ওপর ঢাকাগামী সৌদি পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ দুর্ঘটনায় নগরীর টুটপাড়া মহিরবাড়ি ছোট খালপাড় এলাকার জাহিদুর রহমানের ছেলে মোটরসাইকেল আরোহী আব্দুল আলীম (৫৫) নিহত ও সাথে থাকা তার ছোট ভাই আব্দুল জলিল আহত হন।
গত ২৫ আগষ্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফুলতলা উপজেলার বেজেরডাঙ্গা এলাকায় যশোর খুলনা মহাসড়কে আফিল ব্রিক্স এর খুলনাগামী ইট বোঝাই ট্রাক (যশোর উ ১১-০০৪৫) ও যশোরগামী নম্বরবিহীন সুজকি জিক্সার মটরসাইকেল এর মধ্যে মুখোমুখী সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় চালক ফুলতলা উপজেলার বেগুনবাড়িয়া গ্রামের মোশাররফ হোসেন এর একমাত্র পুত্র মিনহাজ হোসেন রাজ (২১) ও আরোহী অভয়নগর উপজেলার তালতলা সিরাজকাঠি গ্রামের মোঃ রাজিবুল সরদারের পুত্র তাজিকুর রহমান ফাহাদ (২০) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। নিহত দু জনই আকিজ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র।
গত ১৮ আগস্ট বিকেল ৫টায় ফুলতলার শিকিরহাট ঘাট এলাকায় একটি ট্রাকে (যশোর ট ১১-২৬১৮) করে সার নিতে আসে চালক সোহেল ও হেলপার আব্দুর রহমান। ট্রাকটি ঘোরানোর সময় পেছনে থাকা সারের বস্তার স্তুপের মাঝে চাপা পড়ে ট্রাক হেলপার আব্দুর রহমান (৪৫) নিহত হন। সে যশোরের রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা জমির উদ্দিনের পুত্র।
এর আগে, গত ১৮ আগস্ট সকালে ডুমুরিয়া উপজেলার চৌরঙ্গী মোড়ে খানজাহান আলী (৬৫) নামে এক ভিক্ষুক খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এ সময় খুলনাগামী একটি বালু বোঝাই ট্রাক পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি নিহত হন। ওই বৃদ্ধ উপজেলার উখড়া গ্রামের মৃত বাদল শেখের ছেলে।
গত ১১ আগস্ট রাত পৌনে ৮ টায় মোটরসাইকেলযোগে ২ জন ময়ূরব্রীজ পার হয়ে জয়বাংলা মোড়ের দিকে যাচ্ছিল। মোটরসাইকেলটি ওই এলাকার গাজী মার্কেটের নিকট পৌঁছালে পেছন থেকে একটি দ্রুতগামী ট্রাক তাদের ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেল চালক মেজবাহ উদ্দীন (২২) ) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সাথে থাকা মাসুম বিল্লাহ গুরুতর আহত হয়। নিহত মেজবাহ সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা উপজেলার নজরুল ইসলামের ছেলে।
গত ১৬ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় অভয়নগর থানার সিদ্দিপাশা গ্রামের রাজমিস্ত্রির হেলপার হাসান ও শরিফুল মিনার পুত্র মোঃ রিয়াজ মোটরসাইকেলযোগে ফুলতলা থেকে খুলনা অভিমুখি যাচ্ছিলো । এসময় বিপরিত দিক খুলনা হইতে যশোর মুখী প্রাইভেট কারের (যার নং ঢাকা মেট্রো গ -২৭-৭২৮৮) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলে থাকা হাসান নিহত হন।
গত ৩ আগস্ট বুধবার ভোরে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান স্বরূপ কুমার দাস (৪২) কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলযোগে রূপসা সেতুর বাইপাস সড়ক দিয়ে গিলাতলার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন দিক থেকে আসা দ্রুতগামী মাল বোঝাই ট্রাক (যশোর ট- ১১- ৪৪৩৪১০) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ সময় মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশে একটি গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লেগে স্বরূপ কুমার দাস নিহত হন। সে ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা গ্রামের হরিদাস কুমার দাসের ছেলে।
খুলনা ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মনিরা সুলতানা জানান, ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮ ধারায় এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরা হাজিরা না দিয়ে পলাতক থাকলে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ট্রাকগুলো হুটহাট করে নির্ধারিত সময়ের বাইরে শহরে ঢুকে পড়ছে এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নম্বরবিহীন বা বৈধ কাগজ পত্রবীহিন গাড়ীগুলো ধরপাকড়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।