ঊষার আলো প্রতিবেদক : ইতিমধ্যেই গরম পড়তে শুরু করেছে। শীত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে যে গরম অনুভব হচ্ছে ঠিক তার সাথে শুরু হয়েছে অসহ্য যন্ত্রনা আর তা হলো মশার কামড়। সকাল নেই, সন্ধ্যা নেই, নেই রাত বিরতীহীনভাবে কামড়ে চলছে মশা। মশার কামড়ে অনেকটাই চোখে মুখে শষ্যের ফুল দেখছে দৌলতপুরবাসী। এমন কোন স্থান নেই যেখানে মানুষ একটু স্বস্তিতে দাঁড়াতে বা বসতে পারে যায়। আর রাতে তো মশারী ছাড়া ঘুমানো দায় হয়ে পড়েছে। যদিও গরমে অনেকই মশা নিবারণের জন্য মশার কয়েল জ্বালিয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাচ্ছে তবে রক্ষা মিলছে না। আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়টা মশার প্রজনন মৌসুম বলে ধরা হয়। এ অবস্থায় নগরীর দৌলতপুর থানাধীন সমগ্র এলাকায় বেড়েছে ব্যাপক মশার উপদ্রব। মশা নিধনে কেসিসি’র বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহিত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
ফলে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হচ্ছে মানুষ দৌলতপুরসহ সর্বস্তরের মানুষেরা।
সরেজমিনে দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকার বসবাসরত বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে বেশ গরম পড়া শুরু করেছে। হঠাৎ এমন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া কারণ বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে আর যদি গরম শরীরে কিছুটা মানিয়ে নেয়া গেলেও বাঁচা দায় হয়ে পড়েছে মাশার উৎপাত বা কামড়ে।
দিনের বেলায় কিছুটা উৎপাত কম থাকলেও সন্ধ্যার পর শুরু হয় প্রচন্ড তান্ডব। কামড়াতে কামড়াতে পা ফুঁলিয়ে ফেলে। নগরীর দৌলতপুরের অধিকাংশ এলাকায় পানি নিষ্কাশন পথগুলো আবর্জনায় ভরাট, আশাপাশের বনজঙ্গল, আবাসিক গৃহস্থালীর ব্যবহৃত বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলাসহ ড্রেনেজ লাইন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার দরুন যে জলবদ্ধতার বা নোংরা দুঃর্গন্ধ স্থান সৃষ্টি হচ্ছে মূলত এখান হতেই মশার লার্ভা বা বংশবিস্তার ঘটছে বলে এলাকাবাসীর অভিমত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দৌলতপুর অধিকাংশ এলাকায় অপরিচ্ছন্ন ড্রেন, অসংখ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোটছোট খানাখন্দ যেখানে কোটি কোটি মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে। এলাকার ময়লার স্তুপ, ঝোপঝাড়, রাস্তার পাশে থাকা ডাস্টবিন, ছোটবড় ময়লার স্তুপ, পরিত্যাক্ত পলিথিনসহ বিবিধ স্থানে মশা জন্ম নিচ্ছে। দৌলতপুর খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশের চায়ের দোকানদার মজিবুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ঙ্কর মশার উপদ্রব শুরু হয়। চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে কেনাবেচা করা যায় না। তাছাড়া কাস্টমার মশার কামড়ে দোকানে বসতে চাইনা। ফলে রাতে কিছুটা কেনাবেচা কমে গেছে।
দৌলতপুর ইস্পাহানী কলোনীর বাসিন্দা ইউসুফ হোসেন বলেন, ঘরে বসে কাজ করার সময় প্রচুর মশায় কামড়ায়, মশার কয়েল জ্বালিয়ে কাজ হচ্ছে না। আরও আছে এলাকার বাসিন্দারা ময়লা সরাসরি ড্রেনে ফেলার কারণে ড্রেন নোংরা হওয়ায় মশা রাজত্ব শুরু করেছে। দেয়ানা উত্তরপাড়া বাসিন্দা দৌলতপুর খুচরা কাচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ পলাশ হোসেন বলেন, গরমে সমগ্র এলাকায় প্রচুর মশা বেড়েছে। দিনে বড় মশা আর সন্ধ্যা হলে ছোট মশা। মশা শুধু রাতে না, দিনেও মশার জ্বালায়। সারাদিন মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখলেও কাজ হচ্ছে না। কয়রা হতে দৌলতপুর আসা আবজাল বলেন, সারারাত লঞ্চে বসে এসেছি। প্রচুর মশায় কামড়েছে। লঞ্চে বাতাস থাকলেও কাজ হয়নি। এ ব্যাপারে ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, এ ওয়ার্ডে মশা নিধনে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। আমার ওয়ার্ডে একটি ফগার বা কামান মেশিন আর তিনটি স্প্রে মেশিন রয়েছে যা ব্যক্তিগতভাকে আমার একটি জনকল্যানের কাজে ক্রয় করা। আমার ওয়ার্ডে মশার লার্ভা ও ডিম নিধনের জন্য সপ্তাহের ছয়দিনই কার্যক্রম চালানো হয়। প্রতিনিয়ত একদিন ফগার আর একদিন স্প্রে করা হয়। এছাড়া কেসিসির সমান্বয়ে গঠিত মশা নিধনের জন্য ক্রাশ অভিযানের আওতায় ১৫ দিন পরপর ছয়টি ফগার আর ছয়টি স্প্রে দিয়ে মশা নিধনের কার্যক্রম অব্যহতআছে। এ ব্যাপারে কেসিসি সূত্র জানান, মশক নিধনে কেসিসির কার্যক্রম দ্বিগুণ করা হয়েছে। মশা মারতে প্রতিটি ওয়ার্ডে লার্ভিসাইট, অ্যাডাল্টি সাইট ও কালো তেল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মশক নিধনে জনবলও বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা মারার ওষুধের পরিমানও বাড়ানো হয়েছে।
সবমিলিয়ে দৌলতপুর থানাধীন এলাকায় যে পরিমানে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি কারণে চরম বিব্রতকর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে দৌলতপুরবাসী। মশা নিধনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে দৌলতপুরে সর্বমহল।