বিদ্যুৎস্পৃটে মৃত্যু রকি হত্যা দেখিয়ে আইসিটি ট্রাইব্যুনালে ৩১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
# ছাত্রনেতা পরিচয়ে স্বাক্ষর, এনআইডি নেয় প্রতারক চক্র
# অভিযোগে তালিকায় পেশাসাংবাদিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও
ঊষার আলো প্রতিবেদক: কতিপয় প্রতারক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালীন খুলনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কলেজ শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান রকির মৃত্যু হত্যা ও তার পিতাকে বাদী দেখিয়ে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাহায্যের কথা বলে ওই প্রতারক চক্রের তিন সদস্য হতভাগ্য পিতা মো: রফিকুল ইসলাম গাজীর কাছ থেকে স্বাক্ষর, এনআইডি ও কাগজপত্র নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা ওই অভিযোগ পেশাজীবীসহ ১৪ সাংবাদিক, খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৯ কাউন্সিলর, চিকিৎসক, সাবেক মেয়র, এমপি ও আওয়ামী লীগ রাজনীতিকসহ ৩১৫জনকে আসামী করা হয়। শুধু তাই নয়, আসামীর তালিকা থাকা সাংবাদিকদের অধিকাংশই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এমন ঘটনায় বিব্রত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম খুলনার নোটারি পাবলিকে হলফনামা দিয়েছেন।
গত ২১ নভেম্বর রকিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন জমা দেওয়া হয়। একটি অপ্রত্যাশিত মৃত্যু নিয়ে এমন প্রতারণার ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করে বিচার চেয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রতিবেশীরা।
নিহতের বাবার হলফনামা ও অনুসন্ধানে জানাগেছে, খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনে সরব ছিলেন খুলনার সরকারি ব্রজলাল(বিএল) কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রকিবুল হাসান রকি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এই শিক্ষার্থী গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। কিন্তু ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতন সংবাদে পাইকগাছার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয় উল্লাস প্রকাশ করে। এ সময় বিজয় উল্লাসে কাঁচা বাঁশের লাঠিতে জাতীয় পতাকা টাঙাতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ঘটনাস্থলেই মারা যান রকিবুল। রকিবুলের বাবা উপজেলার কালিদাসপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একটি ছোট চায়ের দোকান পরিচালনা করেন। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন রফিকুল গাজী। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলের পক্ষ থেকে রফিকুলকে সান্তনা প্রদান করা হয়। আর্থিকভাবেও কিছু সহায়তাও পান এ অসহায় পিতা। সম্প্রতি খুলনা থেকে তিনি শিক্ষার্থী রকিবুলের বাড়ি যান। তারা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা পরিচয় দিয়ে ছেলের বিষয়ে নানা কথাবার্তা জিজ্ঞাসা করেন। ওই ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা অবস্থায় রকিবুল ইসলাম রকি মৃত্যুবরণ করায় তাঁর পরিবার ১০ লাখ টাকা পাবে বলে জানায়। এই অনুদান দেওয়ার কথা বলে তারা কিছু কাগজে স্বাক্ষর করান। ছাত্রনেতা পরিচয়দানকারীরা পরে তারা রকির বাবা, মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে অনুলিপি ও ছবি তুলে নিয়ে যায়। স্বাক্ষর নেওয়ার সপ্তাহ খানেক পর গ্রামের লোকজনের কাছে রফিকুল গাজী ট্রাইব্যুনালে শেখ হেলাল উদ্দিনসহ ৩১৫ জনের অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে শুনতে পান। কিন্তু তিনি কোথাও এধরণের অভিযোগ ও মামলা দেননি।
রফিকুল ইসলামের একাধিক প্রতিবেশী নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বিদ্যুৎস্পৃটে নিহত রকির পরিবার খুবই দরিদ্র ও সাদাসিদে। একটি প্রতারক চক্র তাদের নিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। এর সঙ্গে স্থানীয় চক্রও রয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করা।
নিহত রকির বাবা মো: রফিকুল ইসলাম গাজী জানান, ‘তাঁর ছেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। তাঁকে কেউ হত্যা করেছে, এমন কোন অভিযোগ কোথায়ও দেয়নি। কারা কী উদ্দেশ্যে এ কাজ করছে বলতে পারছি না।’
ঊআ/বিএস