ঊষার আলো রিপোর্ট : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর কাজে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিম্মমানের ইট, খোয়া ও বালু দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের পাঁচশ’ ঘর। কাজ শেষ হওয়ার আগেই অধিকাংশ ঘরে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে ঘরের জানালার কপাট। অভিযোগ, এভাবে কাজ করায় কিছু দিনের মধ্যেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েবে আর টাকাগুলো পানিতে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৮ মে উপজেলার ১২নং রংপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শান্তিনগর আবাসন প্রকল্প এলাকায় কিছু ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকী ঘরের কাজ চলছে। মাস খানেক আগে শেষ হওয়া ঘরে ইতোমধ্যে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। নির্মাণাধীন ঘর থেকে জানালার কপাট খসে পড়ছে। ঘরের মেঝেতে বালি ও আমা ইটের (যে ইট ভালভাবে পোড়ে না) খোয়া দিয়ে ঢালাই করা হচ্ছে। খোয়াগুলো অধিকাংশ ধুলার মত হয়ে গেছে। বাসিন্দাদের চলাচলে সড়ক তৈরির জন্য এনে রাখা টিএমএসবি নামের ইটগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় উপজেলার ৫টি স্থানে পাঁচশ’ গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেগুলো হলো, শান্তিনগর-১ প্রকল্পে ৭৬ পরিবার ও সাজিয়াহাড়া খেয়াঘাট-২ প্রকল্পে ৬০ পরিবার, বাদুরগাছা-৩ প্রকল্পে ১২০টি, কাঠালতলা-৪ প্রকল্পে ৬০ পরিবার ও বাহাদুরপুর-৫ প্রকল্পে দুইশ’ পরিবার। এই ঘরে থাকছে ২টি কক্ষ, একটি লেট্রিন ও একটি রান্নাঘর। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। শান্তিনগরের ঘরের কাজ প্রায় শেষের পথে বাকীগুলোর কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সরকারের তিনটি কর্মসূচির আওতায় দেশের ভূমিহীন-ঠিকানাহীন মানুষদের ঘর তৈরি করে দেয়ার কাজ করছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২।এই আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ডুমুরিয়া উপজেলায় পাঁচশ’ ঘর নির্মাণ হচ্ছে।
শফিকুল ইসলাম জানান, মাস খানেক আগে ঘরে উঠেছেন তিনি। তার ঘরের দরজার ওপর দুই পাশে ফাঁটল ধরেছে। তিনি বলেন, দেখতিছি ফাঁইটে গেছে, কিন্তু কি কব। শুধু আমার ঘর না, আশে-পাশের অনেক ঘর ফাঁইটে গেছে।
আরেক বাসিন্দা শাহজাহান মোড়ল বলেন, রাস্তা আর ড্রেন যে ইট দিয়ে করা হচ্ছে তা একেবারে বাতিল। ওই সামনে একটা ক্যানেল (ড্রেন) ছিল তা বুজোয়ে (ভরাট করে) সেহেনে ঘর করিছে। বর্ষা হলি ওই ঘর টেকবে না নে।
রামকৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, এলাকার কয়েকজন মিলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল।কারণ ২/৩ নম্বর ইট, আমা ইটের খোয়া, ধুলাবালি এসব দিয়ে ঘর তৈরি হচ্ছে। এরমধ্যে ঘরে ফাঁটল দেখা দিয়েছে, কোন ঘর ভেঙে গেছে, দেবেও যাচ্ছে। জানালা ভেঙে পড়ছে। সকল প্রকার দুর্নীতি এখানে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, আমা ইটের খোয়া ও ২নম্বর ইট এবং ধুলাবালু পরিমাণ বেশি দিয়ে ঘর করা হচ্ছে। এই খোয়া দুই দিনে গুড়া হয়ে যায়। তখন ঢালাই খুলে পড়বে। কিছু দিনের মধ্যেই এই ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
ঠিকাদার ও মিস্ত্রী শরিফুল ইসলাম বলেন, এ কাজে আমরা কয়েকজন ঠিকাদার রয়েছি। তবে ইউএনও এবং পিআইও কাজ বাস্তাবায়ন করছেন। প্রচন্ড গরমের কারণে ঘর ফেঁটে যাচ্ছে। এ কাজের জন্য ভাঙাচোরা ইট দিয়ে খোয়া তৈরি করা হয়েছে। ফলে আমা ইটের খোয়া হতে পারে। মেঝেতে খোয়া ও বালির পরিমাণ বেশি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দুই নম্বর কাজ করি না। অন্য কোনও মিস্ত্রী ওই ঘরের কাজ করেছে। ধুলাবালি দিয়ে ড্রেন করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ড্রেনের তলে ওই বালি দেয়া হয়েছে। তবে ঘরের কাজে আসল বালু দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এ প্রকল্পের সদস্য সচিব মো. আশরাফ হোসেন বলেন, চালের মধ্যে কিছু খুদ থাকে। তবে যতক্ষণ ওই ঘরের বাসিন্দা চাইবে ফেঁটে যাওয়া ও বসে যাওয়াসহ সব কাজ করে দেয়া হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ওই খোয়া তো বালিত খোয়া। ওই খোয়া দিয়ে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কাজ সব ভাল ইট দিয়েই হচ্ছে। ঘর গাঁথার সময় ওরকম একটু ফাঁটে। আমার জানা মতে ৪টি ঘর ফেঁটেছে। ওখানে সব ঘর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপকারভোগীরা বুঝে নেবেন। কাজ চলার সময় অনেক অসুবিধা থাকে। হস্তান্তরীত ঘর ফাঁটার ব্যপারে তিনি বলেন, ওগুলো ঠিক করে দেয়া হবে।
(ঊষার আলো-এমএনএস)