UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার দাবি

koushikkln
আগস্ট ২৪, ২০২২ ৪:৩৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি জাতীয় ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে যা থেকে পরিত্রাণ লাভ করা সহজ নয়। দুর্নীতির কারণে সমাজের এলিট শ্রেনি, ধনী ব্যবসায়ী, দালাল ও মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা লাভবান হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা বর্তমানে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

উদ্যোক্তাদের নতুন ব্যবসা শুরু থেকে তা পরবর্তীতে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্রতিটি পদেই দুর্নীতির শিকার হতে হয়। বুধবার, ২৪ আগস্ট সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আঞ্চলিক আলোচনা সভায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন।

ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতির অভিজ্ঞতা এবং এই দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই)- এর সহায়তায় এই আলোচনা সভাটি খুলনার হোটেল সিটি ইন- এ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা তাঁদের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। উদ্যোক্তারা বলেন যে, ট্রেড লাইসেন্স তৈরি, প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়নকরণ, নিবন্ধন প্রক্রিয়া, ট্যাক্স প্রদান প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁদের দুর্নীতি এবং হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। অনেকক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা রাজনৈতিক চাপ, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতিরও শিকার হয়ে থাকেন। এছাড়াও, ব্যাংকগুলো থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের লোন প্রদানসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রেও অনেক সময় ঘুষ ও অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করা হয় এবং হয়রানির শিকার করা হয় বলে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

করোনা মহামারী সংকট নিরসনে সরকার প্রদত্ত প্রনোদনা প্যাকেজের বন্টণ প্রক্রিয়াতেও তাঁরা দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করেছেন। অনেকক্ষেত্রে প্রনোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের ঘুষ প্রদান করতে বলা হয়। পাশাপাশি তাঁরা বলেন যে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে দুর্নীতির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি নীতিসমূহও অনেকাংশে দায়ী। সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকার পরিবর্তে অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেন। অংশগ্রহণকারী একজন উদ্যোক্তা বলেন যে, বিল প্রদান প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা হলেও এর প্রকৃত বাস্তবায়ন এখনো সম্ভব হয়নি যা বিভিন্নভাবে দুর্নীতি চর্চার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো প্রকার সাহায্য পাওয়া যায়না বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন।

 আলোচনা সভায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা এবং সেখানে উদ্যোক্তাদের স্বতঃস্ফূর্ত ও সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী সংগঠন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং সকল প্রকার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে পারিবারিক শিক্ষা ও মুল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সরকারি অফিসে প্রযুক্তির ব্যবহারকে উন্নত করার উপর উদ্যোক্তারা গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও দুর্নীতি প্রতিরোধে অধিক সক্রিয় ভূলিকা পালন করতে হবে।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বিষয়ে গবেষণা ও মিডিয়া স্টাডি পরিচালনা করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হলো শিক্ষাগত সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে শাসনের মান উন্নত করা, বাংলাদেশের নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করা, দারিদ্র্য নিরসনের জন্য উপলব্ধ সম্পদের দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যবহার করার শর্ত তৈরি করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, এবং বর্ধিত গণতন্ত্রীকরণ, অংশগ্রহণ এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা।

(ঊষার আলো-এফএসপি)