UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি

usharalodesk
ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ ৪:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট :  দেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি উদ্বেগজনক। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গারা নৌকা ও বিভিন্ন পথে এদেশে প্রবেশ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ বিষয়ে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, সীমান্তে রোহিঙ্গারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে বলে এদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে গত দুই মাসে নতুন করে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এমন অবস্থায় সীমান্ত এবং রাখাইনের সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দিয়েছে বাংলাদেশ।

সীমান্ত অঞ্চলে দুর্নীতির প্রসঙ্গটি আগেও বারবার আলোচিত হয়েছে। মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচারের মতো অপরাধ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানও নানা পক্ষ থেকে বহুবার এসেছে। তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে উদ্বেগজনক বলে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো ওই অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের অবস্থান। বস্তুত কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি সেখানে নানা আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সৃষ্টি করেছে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে বহু সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। শুধু ক্যাম্পের ভেতরে নয়, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের সীমান্তের শূন্যরেখা এবং আশপাশের দ্বীপে অপরাধীদের ঘাঁটি গড়ে ওঠার তথ্যও রয়েছে। যেহেতু তারা বাস্তুচ্যুত মানুষ, তাই তাদের উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়া পুরো অঞ্চলের শান্তির জন্যই হুমকিস্বরূপ। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর যথাযথ চাপ প্রয়োগ করা।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের ভারে ন্যুব্জ। গত সাত বছরে বিগত সরকার তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সফল হয়নি। দেশটিতে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জটিলতা বর্তমানে আরও বেড়েছে। দিন যত যাচ্ছে, ততই অসমাধানযোগ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গুরুত্ব কমে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুর। তাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাই। এর ওপর আবার নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা যে ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’, তা বলাই বাহুল্য। ইতঃপূর্বে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার বারবার আশ্বাস দিলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ন্যূনতম পদক্ষেপও নেয়নি। বৃহৎ শক্তিগুলোও মিয়ানমারের ওপর মৌখিক চাপ প্রয়োগের বেশি কিছু করেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের নির্লিপ্ততার এটাই প্রধান কারণ। তারপরও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের ওপরই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য অব্যাহত রাখতে হবে কূটনৈতিক তৎপরতা।

আমরা মনে করি, দ্রুত রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হলে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সৃষ্টি হতে পারে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী এ সুযোগ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলটিতেই একটা অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এমনিতেই মিয়ানমার থেকে নতুন করে আগত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দেশে নেই, বরং যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধ করার পাশাপাশি জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে, এটাই প্রত্যাশা।

ঊষার আলো-এসএ