ঊষার আলো রিপোর্ট : সারা দেশে দলীয় সদস্য সংখ্যা কত-এর কোনো সুস্পষ্ট তথ্য নেই বিএনপিতে। সর্বশেষ ৭ বছর আগে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল দলটি। সেই সময় ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা শেষ হয়নি অদ্যাবধি। এমনকি সদস্যপদ নবায়নের কাজও থমকে আছে। এমন পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে সদস্যসংগ্রহ কার্যক্রমে ফিরতে চায় দলটি। এ নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আগামী বছরের প্রথম দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের কাজ শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আবারও নতুন সদস্য নেওয়া হবে। বিষয়টি আলোচনায় আছে।
দপ্তরের দায়িত্ব থাকা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০১৭ সালের পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য সংগ্রহ না হলেও, দপ্তর থেকে অসংখ্য মানুষ সদস্য ফরম সংগ্রহ করেছেন। জেলা ও মহানগরগুলোর কাছে ফরম আছে। অনেকেই জমা দিয়েছেন। সামরিক ও বেসামরিক অসংখ্য আমলা আছেন, যারা বিএনপি অফিস (নয়াপল্টন) থেকে সদস্য ফরম সংগ্রহ করেছেন। দল সেসব যাচাই-বাছাই করছে। এছাড়া অনলাইনেও সদস্য ফরম পূরণের সুযোগ রয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত হলে আনুষ্ঠনিকভাবে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম হবে।
বিএনপির সদস্য পদ নিয়ে দলের গঠনতন্ত্রের ৫ এর ‘ক’ ধারায় বলা আছে, ১৮ বছর বা ততোধিক বয়সের যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক এ দলের প্রাথমিক সদস্য হতে পারবে। ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে সংগঠনের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচির প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করতে হবে। প্রাথমিক সদস্য পদের আবেদনপত্র এই গঠনতন্ত্রের তফশিল ১-এ ‘ক’ ফরমে করতে হবে। বিবেচনার পর আবেদনপত্র গৃহীত হলে সদস্য পদের প্রমাণস্বরূপ পরিচয়পত্র (তফশিল-১) ‘খ’ ফরমে প্রত্যেক সদস্যকে দিতে হবে। সদস্য পদ লাভের পরবর্তী বছর থেকে দলের বাৎসরিক ১০ টাকা চাঁদা পরিশোধ করে সদস্য পদ নবায়ন করতে হবে।
জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে সারা দেশে সদস্য সংগ্রহে নামে বিএনপি। তখন দলটির শীর্ষ নেতাদের টার্গেট ছিল ৫০ লাখ সদস্য সংগ্রহের। পরবর্তী সময়ে দলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের এক বছর পর ২০১৭ সালে একইভাবে ‘প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ’র উদ্যোগ নেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই বছর ১ জুলাই ১০ টাকার বিনিময়ে ফরমে স্বাক্ষর করে নিজের সদস্য পদ নবায়নের মধ্য দিয়ে এ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও তাদের সদস্য পদ নবায়ন করেন। ওই সময় এক কোটি নতুন সদস্যের টার্গেট নিয়ে সারা দেশে এ অভিযান শুরু হয়। কেন্দ্র থেকে সদস্য সংগ্রহের ফরম মহানগর, জেলা, উপজেলায় পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। তখন নানা কারণে তা থমকে যায়। সে সময় নয়াপল্টনে বিএনপির দপ্তর শাখা থেকে জানানো হয়, ৩ মাসে প্রায় ৭০ লাখ সদস্য ফরম বিক্রি হয়েছিল। প্রতিটি সদস্য ফরম বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা করে। সে হিসাবে সদস্য সংগ্রহ ফরম বিক্রি করে বিএনপির আয়ও হয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছেন। অনেকেই মারা গেছেন। যে কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। দলের নেতাকর্মীদের জন্য আমরা একটা ডাটাবেজ তৈরি করেছিলাম। তবে সেটি আপডেট করা নেই। কাজ চলমান।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের কয়েকজন নেতা প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়াতে ২০১৭ সালে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহে নামেন। তখন সরকারি দলের বাধা-বিপত্তির মধ্যেও প্রায় ৭০ লাখ সদস্য সংগ্রহ তথ্য জানানো হয়। পরে ২০১৯ সালের অক্টোবরে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহে নামে ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এজন্য, উপজেলা, জেলা, মহানগর পর্যায়ে সদস্য ফরম সংগ্রহকারীদের তথ্য-উপাত্ত চায় দলটির কেন্দ্র। কতজন নতুন সদস্য হয়েছে কিংবা বিদ্যমান সদস্য পদ কতজন নবায়ন করেছেন তারও হিসাব চাওয়া হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের ডাটাবেজ তৈরিতে দলের তিন যুগ্ম মহাসচিবকে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
নেতারা বলেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর দলের নতুন সদস্য সংগ্রহের আপডেট আর সামনে আসেনি। গত ৭ বছরে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার দাবি, দায়িত্বে অবহেলার কারণে দীর্ঘ সময়েও ডাটাবেজের কাজ শেষ করতে পারেননি দায়িত্বশীল নেতারা। এজন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের যে কোনো নেতাকর্মীর তথ্য জানতে দলের শীর্ষ নেতাদের জেলা কিংবা মহানগরের সাহায্য নিতে হয়। অনেক সময় নেতাকর্মীদের সম্পর্কে তথ্যও পাওয়া যায় না। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন একটি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। এটা যে কোনো সময় করা যেতে পারে। নতুন সদস্য ও নবায়নকৃতদের ছবিসহ নাম-পরিচয়, মোবাইল নাম্বার, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ডাটাবেজে থাকলে দল ও নেতাকর্মীরা নানাভাবে উপকৃত হতে পারে। শুধু মূল দল নয় যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ সংগঠনেও ডাটাবেজ আপডেট হওয়া দরকার। আগামীদিনে এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপিতে নতুন করে প্রাথমিক সদস্য গ্রহণ কিংবা নবায়নের বিষয়ে নিকট অতীতে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। এর চেয়ে অনেক বড় বড় সমস্যা নিয়ে আমরা অস্থির আছি। সরকারের নানা নিপীড়ন, জেল-জুলুম, গুম-খুন এজন্য স্বাভাবিক সময়ের যে প্রক্রিয়াগুলো, সেখানে ওই ভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। সরকারি দল তাদের সব ধরনের নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে কাজ করতে পারছে। আর আমাদেরকে (বিএনপি) সব পদে পদে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আমাদেরও সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম করা উচিত। এ ব্যাপারে যাতে দলের মধ্যে আলোচনা হয়, আমরা সেই চেষ্টা করব।
ঊষার আলো-এসএ