ঊষার আলো রিপোর্ট : আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র সেখানে অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও সহিংস ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। মারামারি, অস্ত্রের ব্যবহার প্রভৃতি স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনাটি মঙ্গলবার ভোরে ঘটলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন হুমকির শিকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ। সেই অভিযোগে তিনি আফতাব হোসেন খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনি এলাকার অলিগলিতে মোটরসাইকেলে অস্ত্রের মহড়া, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, মাইকিংয়ে বাধা দেওয়া, কর্মীদের বাসাবাড়িতে সশস্ত্র অবস্থায় হুমকির কথাও জানিয়েছেন। এর আগে মে মাসে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে গণসংযোগ চালানোয় তার কয়েকজন কর্মীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ ওরফে মান্নার বিরুদ্ধে।
আমরা দেখেছি, এর আগেও ইউপি ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোয় যেখানেই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, সেখানেই অগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। দেখা যায়, দেশীয় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রাণহানির চেয়ে গুলিতে প্রাণহানির সংখ্যাই বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব অবৈধ অস্ত্রের ব্যাপারে প্রশাসন কি কিছু জানে না? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অস্ত্র উদ্ধার এবং তা ব্যবহারকারীদের অনেককে আটক করলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটতে আমরা দেখিনি। সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছে, সীমান্তের ওপার থেকে অবাধে বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র, বিশেষ করে ক্ষুদ্রাস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঘটছে। চোরাচালানের মাধ্যমে আসা এসব অস্ত্র দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত, সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারীসহ রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে চলে যাচ্ছে। এটা দেশের আইনশৃঙ্খলা, শান্তি ও নাগরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
প্রশ্ন হলো, অস্ত্রের বৈধ লাইসেন্স যদি কারও থেকেও থাকে, তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা লঙ্ঘন করে তারা কীভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে? এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকেও কোনো কঠোর অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে না। সর্বোপরি, রাজনৈতিক দলগুলোও প্রায়ই এক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। নির্বাচন ঘিরে অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রাজনৈতিক নেতাদের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতেও আমরা দেখছি না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক দলগুলোর হাইকমান্ডকেই উদ্যোগী হতে হবে। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে হবে না।
ভুলে গেলে চলবে না, সামনে কড়া নাড়ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যাকে ঘিরে বিশ্ব মহলের রয়েছে উৎকণ্ঠা আর কৌতূহল। আমাদের দেশে বরাবরই জাতীয় নির্বাচন যথেষ্ট চাপ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে। নির্বাচনি সন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহী হন কম। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে হলে তা স্বচ্ছ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া চললে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান কি আদতেই সম্ভব হবে?
ঊষার আলো-এসএ