।। আসিফ কবীর ।।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সাড়ে তিন বছরের স্বল্পসময়ে তুলনামূলক এত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভবপর করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি যখন যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে তাঁর ঈস্পিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই ভেঙ্গে যাওয়া দুই পাকিস্তানকে একত্রীকরণের দুরভিসন্ধি নিয়ে হত্যা করা হয় জাতির পিতাকে। এই আঘাত শুধু জাতির পিতা বা তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে হানা হয়নি, এ আঘাত প্রকৃতপক্ষে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে। জাতিসংঘের তদানীন্তন আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ড. ভিক্টর এইচ উমব্রিখট মার্কিন সরকারের প্রতি খুনীদের আশ্রয় না দেয়ার আহবান জানিয়ে ১৭ নভেম্বর ১৯৭৫ এক পত্রে লেখেন: গত বার মাস ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিরাট উন্নতি ঘটেছিল। ভালো খাদ্য পরিস্থিতি, বৃহত্তর খাদ্য মজুদ, ব্যাপক রপ্তানী ও ঘাটতি বিহীন বাজেটও ছিল। ছিল জনহিতকর কর্মসূচি, অপেক্ষাকৃত জনবান্ধব প্রশাসন প্রভৃতি। কিন্তু তা সত্তে¡ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তম অংশটিকে কেন নির্মূল করা হল, তা উপলব্ধি করা দুরূহ।
তথ্য উপাত্তভিত্তিক জাতির পিতার দেশগঠন ও উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরার আগে অক্লান্তকর্মা এ মহান রাষ্ট্রনায়কের সুচারুভাবে পরিকল্পনা সম্পাদনের কার্যকারণ সম্পর্ক আলোকপাত করব।
২৫ মার্চ ১৯৭১ কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি নয় মাস সেখানে নির্জন কারাগারে ছিলেন। আইয়্যুব খান তার আত্মজীবনী ঋৎরবহফং হড়ঃ গধংঃবৎং-এ লিখেছেন শেখ মুজিবুর রহমান নয়মাস কারাগারে থাকা অবস্থায় অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন স্বাধীনতা লাভের বিষয়ে। এই সূত্র ধরে আমরা বলতে পারি নির্জন কারাবাসকালে অন্তর্ব্যক্তিক যোগাযোগ বা নিজমনে চিন্তাভাবনার শ্রেষ্ঠাংশে ছিল তাঁর দেশ ভাবনা। বাংলাদেশকে কিভাবে তিনি গড়ে তুলবেন। কীভাবে পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করবেন, কেমন হবে অনাগত তথাপি অবশ্যম্ভাবী দেশটির পরিচালন ব্যবস্থা তথা সংবিধান, কতদিনে- কী কী উপায়ে দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শোষণ শাসনে নিস্তেজ দেশের অর্থনীতিকে সজীব-সতেজ করবেন তারই পরিকল্পনা করেন নি:সঙ্গ, একাকী। আর এদেশের মানুষকে তাঁর মত করে কেইবা আর জানতেন-বুঝতেন।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী ফাতিমা জিন্নাহর নির্বাচনী ইশতেহারে পূর্ববাংলার অধিকার আদায় ও স্বার্থরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পয়েন্টগুলি সন্নিবেশনের জন্য কাজ করেন শেখ মুজিব। ছয় দফা প্রণয়ন তাঁর পূর্ববাংলার চাহিদা ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার বিষয়ে গভীর উপলব্ধিকেই প্রমাণ করে। তিনি তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়্যুব খানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন যে পাকিস্তানের বিদ্যমান সংবিধানেই ছয় দফাকে কার্যকর করা সম্ভব। ১৯৬৯ সালে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান শেষে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ফিরে যেই কথা সেই কাজ করেন। পাকিস্তানের ১৯৬২ সালের বিদ্যমান সংবিধানের কিছু সংশোধনী এনে ছয় দফাকে সাংবিধানিকভাবে প্রয়োগযোগ্য করার প্রস্তাবনা তৈরী করেন।
এরপর ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পূর্বে অর্থনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ছয় দফার ভিত্তিতে একটি নতুন সংবিধানের খসড়াও করেন। এই ঘটনা পরম্পরা স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে দেশগঠন ও প্রায়োগিক দেশ ভাবনায় বঙ্গবন্ধুর জন্য সহায়ক হয়েছিল।
মাত্র সাড়ে তিন বছরে অজ¯্র সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও বঙ্গবন্ধু সরকারের উন্নয়ন কর্মকাÐ, প্রশাসনিক বিন্যাস ও উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সাবলীল উপস্থিতি ও পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ, শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও শাসন ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস ইত্যাদি দ্রæতলয়ে করা সম্ভব হয়েছিল।
সদ্য স্বাধীন দেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা ছিল। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনে প্রয়োজনীয় সদস্যপদ ও চুক্তি ছিল না। বিকল্প ব্যবস্থায় তখন বহির্বাণিজ্য পরিচালনা করতে হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ সমূহ: সদ্য স্বাধীন দেশে জনবান্ধব ও ভারসাম্যমূলক প্রশাসন, অবকাঠামো সচলকরণ, নির্যাতিত মা-বোনদের পুনর্বাসন, শরণার্থী পুনর্বাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের ফেরত আনা, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে পাকিস্তানী বাহিনীর দোসরদের রাহুমুক্ত করে পুনর্গঠন, যুদ্ধাপরাধী বন্দীদের বিচার, উর্দূভাষী জনগোষ্ঠীর প্রত্যার্পণ ইত্যাদি প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করেন।
যুগন্বয়ী উদ্যোগ: তিনি তদানীন্তন বিশ্ব বাস্তবতার চেয়েও অগ্রবর্তী থেকে সমুদ্রসীমা আইন সহ রাষ্ট্রপরিচালনায় অত্যাবশ্যক আইন বিনির্মাণ ও অধ্যাদেশ জারি করেন। মাত্র দশ মাসে তাঁর নির্দেশনা ও তত্ত¡াবধায়নে প্রনীত হয় একটি সম-অধিকার সমুন্নতকারী, ন্যূনতম সংস্কার মুক্ত আমাদের পবিত্র সংবিধান। একটি উদার ও অসা¤প্রদায়িক সংবিধান প্রণয়নের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংখ্যালঘু সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন ১৯৭২ প্রণয়ন করেন।
পুনর্গঠন: পাকবাহিনীর হাতে সমূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি পুনরুজ্জীবন, ভৌতকাঠামো, শিল্প, উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা, খাদ্য ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, আর্থিক সহায়তা প্রদান, প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা হয়। অধিকন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা ও অবকাঠামো তৈরীর মাধ্যমে একটি অবহেলিত প্রদেশকে সমৃদ্ধশালীভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন।
যুদ্ধোত্তর দেশে ব্যাপক পুনর্বাসন কর্মকাÐ হাতে নেন বঙ্গবন্ধু। এজন্য সব পর্যায়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি গঠন করা হয়। গৃহহীনদের আবাসন সুবিধা, জরুরী ভিত্তিতে নগদ টাকা, খাদ্য সহায়তা, শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে আর্থিক সহায়তা, মহকুমা সদরে অভিভাবকহীন নারীদের আশ্রয় প্রদান, বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা, ধ্বংসপ্রাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে প্রভৃতি পেশার মানুষদের জীবিকা নির্বাহে সহয়াতা প্রদান করা হয়। যাতে তারা নিজ-নিজ পেশা অব্যহত রাখতে পারেন। ১০৭.৭ মিলিয়ন টাকা (মার্কিন ডলারে ১.২৯ মিলিয়ন) ত্রাণ সহয়তা প্রদান করা হয়।
কৃষি ও সমবায়: বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার ১৯৭২ সালের মার্চে খাদ্য স্বনির্ভর হয়ে উঠতে উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন ও মাঠ পর্যায়ে প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ নেয়। সার ও কৃষি সরঞ্জাম উৎপাদনে জোরারোপ করা হয়। কৃষকদের মধ্যে ঊচ্চ ফলনশীল বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়। রবিশষ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন যৌথভাবে সেচ ব্যবস্থা উন্নতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
৩০শে জুন ১৯৭২ বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সম্মেলনে জাতির পিতা বলেন, আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য বাসস্থান, শিক্ষা এবং সামগ্রীক উন্নত জীবন লাভের অধিকার রাখে। আমার স্বপ্ন এটাই। এ লক্ষ্যে সমবায় আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ১৯৭৪ সালে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়নের মাধ্যমে মিল্ক ভিটা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
অর্থনীতি, উৎপাদন ব্যবস্থা ও শিল্পায়ন:
জাতির পিতা দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান করে উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করেন। উৎপাদন সচল করায় থোক টাকা বরাদ্দ, কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত ও খাত ভিত্তিক শিল্প কারখানার পুনরুজ্জীবন ঘটান। জাতির পিতার অন্যান্য অর্থনৈতিক উদ্যোগ সমূহ হল বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, মুদ্রা প্রবর্তন, আমদানী-রপ্তানী চালু, জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন, শিল্প কারখানার জাতীয়করণের মাধ্যমে শিল্পায়ন, জানুয়ারী ১৯৭৩ শিল্প বিনিয়োগ নীতিমালা ঘোষণা, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।
শিক্ষা ও গবেষণা: বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক (১২০.৫ হাজার ডলার ব্যয়ে) সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রদান, যুদ্ধকালীন বকেয়া ফী মওকুফ, দুই শিফটে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয় । ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, পহেলা নভেম্বর ১৯৭২ প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, ২২মার্চ ১৯৭৫ ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কাউন্সিল অফ সাইন্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রিসার্চ প্রতিষ্ঠা (এ লক্ষ্যে ১৬ নভেম্বর ১৯৭৩ মন্ত্রীসভায় অনুমোদন), ১৫নং রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে জাতীয় আনবিক শক্তি কমিশনের যাত্রা শুরু (১৯৭৩) হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ১.২ বিলিয়ন টাকা বা ১৪৫.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়। যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতি জলযানের ৮০.০৫ মিলিয়ন, চট্টগ্রাম বন্দরের ৯০.০৬ মিলিয়ন, চালনা বন্দরের ৫৮.৪০ মিলিয়ন টাকা নিরুপণ করা হয়। বন্দর উন্নয়নে ৯১.৩ মিলিয়ন, জলপথ সচল করণে ১৩৪ মিলিয়ন, সড়ক ও জনপথ বাবদ ১১.৮ মিলিয়ন, রেলপথ উন্নয়নে ৩০.৩ মিলিয়ন, সিভিল এভিয়েশনে ২০৪.১ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্থ ২৯৫টি রেল সেতুর ৮২টি স্থায়ী ও ১৯৮টি অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়। তম্মধ্যে ভারত সরকারের সহায়তায় পদ্মা নদীর উপরে নির্মিত যুদ্ধে বিধ্বসÍ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ-এর উপর দিয়ে রেল চলাচল পুনরায় শুরু করা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী: যুদ্ধ পরবর্তী নাজুক অবস্থার মাঝেও দেশে ১৯৬৯-’৭০ সালের তুলনায় মাসিক ৬০ ভাগ বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাতির পিতা নিহত হওয়ার অনতিপূর্বে বিদেশী ক্রেতাদের থেকে পাঁচটি তেল ক্ষেত্র ক্রয় করে জ¦ালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। ৯ই আগস্ট জাতীয় জ¦ালানী নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা হয়। বাংলাদেশ জ¦ালানী তেল গ্যাস কর্পোরেশন গঠন করা হয় ২৩শে মার্চ ১৯৭২। প্রণীত হয় জ¦ালানী আইন ১৯৭৪।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় মাত্র দেড় বছরের মধ্যে ২০, ৪৩০ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী তৈরী করা হয়। ১৩৭টি সাইক্লোন প্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ হয়। এ সকল আশ্রয়কেন্দ্রগুলি স্থানীয়ভাবে মুজিব কিল্লা নামে পরিচিত হয়। উপকূলীয় এলাকার ১৫ মিলিয়ন মানুষ দুর্যোগ পূর্বাভাস পাওয়ার অভিগম্যত লাভ করে। তাদের দ্রæত ত্রাণ সহায়তা, উদ্ধার তৎপরতা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা হয়।
বাজেট: ৩০শে জুন ১৯৭২ পাশ হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বাজেট। কৃষি জমির খাজনা, সেচ সুবিধা বাবদ ভাড়া ও পূর্বতন সারচার্জ মওকুফ করা হয়। জমি লীজ প্রদান বন্ধ করা হয়। কৃষিখাতের আয় শুল্কমুক্ত করা হয়। কৃষিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। অগ্রাধিকার পায় শিক্ষা ও সমাজ কল্যান।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: অস্ত্র জমাদান, যুদ্ধ ফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীকরণ, সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন করেন। অপরদিকে ট্যাঙ্ক সহ আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ করেন। বিমান বাহিনীর জন্য বারটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, রাডার, এ এন-২৪ ও ২৬-বিমান, এম আই-৮ হেলিকপ্টার সংগ্রহ করেন। জাতির পিতা ১৯৬৬ সালে প্রদত্ত ছয় দফায় তৎকালীন পূর্ব বাংলার নৌ-বাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপনের দাবী জানিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের তিনটি নৌ ঘাঁটি স্থাপন ও বানৌজা পদ্মা, বিশখালী, নোয়াখালী, পাবনা, এম আর আমিন, সুরমা, পটুয়াখালী, কর্ণফুলী ও তিস্তা নামে যুদ্ধ জাহাজ যুক্ত করেন।
সামগ্রীক উন্নয়ন চিত্র: মাথাপিছু আয় পাকিস্তানী আমলের চেয়ে ২.৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়। মাত্র সাড়ে তিনবছরে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের এ অগ্রসরমানতা ছিল অভাবনীয় ঘটনা।
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে মাথাপিছু আয় ২.৫ ভাগ ও জিডিপি ৫.৫ ভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। ১৯৭৩ সালে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাবদ ৪৪.৫৫ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ হয়।
ক্রীড়া ও সংস্কৃতি: জাতির পিতার জেষ্ঠ্য পুত্র শেখ কামালের সক্রিয় অংশগ্রহণে ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। এ সময়কালে বারোটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এত অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে চলচ্চিত্র নির্মাণে এটিই রেকর্ড। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশে আনা হয়।
বহির্বাণিজ্য ও আর্šÍজাতিক সম্পর্ক: ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য ইজিপ্ট, জার্মানি, মিয়ানমার ও সুদানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রপ্তানী করা হয়। মাত্র সাড়ে তিনবছরে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের এ অগ্রসরমানতা ছিল অভাবনীয় ঘটনা। সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সোনার বাংলাদেশ গড়ার অভীষ্ট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিনবছরের শাসনামলে তিনি ১১৬টি দেশের স্বীকৃতি ও ২৭টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেন।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে দেশ পুনর্গঠনে যখন তিনি গভীরভাবে নিমগ্ন, মোকাবেলা করছেন নানামুখী সঙ্কট ও ষড়যন্ত্র সে মুহূর্তেই ঘাতকের বুলেটে প্রাণপাত হয় বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের ষোল সদস্যের। ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকান্ডের যেন সুষ্ঠু বিচার না হয় সেজন্য প্রণীত হয় কালো আইন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার কার্যক্রম শুরু করে । এ হত্যাকান্ডের বিচারের মধ্য দিয়ে জাতি গøানিমুক্ত হয়।
লেখক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতর্বাষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমটিরি মিডিয়া কনসালটন্টে।
(ঊষার আলো-এমএনএস)