বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি : বরিশালের বানারীপাড়ার পূর্ব উদয়কাঠি গ্রামে মুন্সি বাড়ির সামনের খালে আয়রণ ব্রিজের স্থলে সুপারি গাছের সাঁকো নির্মাণের অভিযোগের পরে এবার বাইশারী ইউনিয়নের গরদ্বার গ্রামের খলিল মোল্লার বাড়ির সামনের খালে আয়রণ ব্রিজের বরাদ্দে মাত্র চারটি লোহার খুঁটি স্থাপন করে লাখ টাকা খেয়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খলিল মোল্লা অভিযোগ করেন, তার বাড়ির সামনের খালে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বরিশাল জেলা পরিষদ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে একটি আয়রণ ব্রিজ নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার শুধু মাত্র চারটি লোহার খুঁটি (পোষ্ট) বসিয়েই বরাদ্দের লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।
পরে স্থানীয়রা ওই চার লোহার খুঁটির পাশে মেহেগিনি,বাঁশ, কাঠ, সুপারি গাছ দিয়ে সাঁকো সংস্কার করে চলাচল করছেন। লোহার খুঁটি ও ভিমের ওপর পাটাতনে রড-সিমেন্টের ঢালাই স্লাব ও ব্রিজের দুই পাশে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে রেলিং দেয়ার স্থলে উদয়কাঠি ইউনিয়নের পূর্ব উদয়কাঠি মুন্সি বাড়ির সামনের খালে চারটি খুঁটির ওপর সুপারি গাছের সাঁকো ও বাইশারী ইউনিয়নের গরদ্বার গ্রামের খলিল মোল্লার বাড়ির সামনের খালে মাত্র চারটি লোহার খুঁটি স্থাপনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।ওই পোস্টে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে ও নিন্দা জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ এ কাজের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের চিহিৃত করে বিচার দাবি করেন।
ওই সাঁকোর পাশে ঠিকাদারের লোকজন ভিত্তিপ্রস্তর ফলক স্থাপন করেছিলেন। তাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক লাখ টাকা ব্যয়ে আয়রন ব্রিজ নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের কথা লেখা রয়েছে। তবে ফলকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা থাকার কথা থাকলেও তা নেই। ফলকে অর্থায়নে ও বাস্তবায়নে জেলা পরিষদের কথা উল্লেখ রয়েছে। এদিকে পত্রিকায় রিপোর্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পরে দুর্বৃত্তরা রাতের আধাঁরে ভিত্তিপ্রস্তর নামফলক দুটি ভেঙ্গে ফেলেছে।
জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বদলি হয়ে বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) ঝালকাঠীর রাজাপুর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগের কথা। ঠিকমতো সব কিছু মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে বরিশাল জেলা পরিষদ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ওই দুই স্থানে আয়রন ব্রিজ নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এরপর যথাযথ নিয়ম মেনে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
লটারির মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজ পায়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদারের নাম মনে নেই।’স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) বানারীপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, নির্মাণকাজটির তদারকির দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা পরিষদের একজন প্রকৌশলী। এখানে তার (উপজেলা প্রকৌশলী) কোনো দায়িত্ব ছিল না।
তবে, ছোট খালে একটি আয়রন ব্রিজ লোহার খুঁটি,ভিম ও রড-সিমেন্টের ঢালাই স্লাব দিয়ে এক লাখ টাকা বরাদ্দে নির্মাণ করা সম্ভব। বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ব্রিজ-সংক্রান্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলামকে মুঠোফোনে (০১৭৪০৭৪৮৫৮৫) কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
(ঊষার আলো-আরএম)