UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভারতের সহযোগিতা : দুর্ভোগ কমাবে রামপাল সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট

koushikkln
আগস্ট ৩০, ২০২২ ১০:৩৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিমল সাহাঃ বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় মানুষের দুর্ভোগ যখন চরম, তখন আশির্বাদ হয়ে এলো মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট। কয়লা ভিত্তিক রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি অংশের মধ্যে একটির কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এরফলে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে। সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। বাকী অংশের কাজ ২০২৩ সালের শুরুতেই শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় বর্তমানে সরবরাহ কম থাকায় সারা দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও পড়েছে চরম বিপাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, রাজনৈতিক অঙ্গন ও মানুষের মুখে মুখে বিদ্যুৎ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই মহূর্তে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হলে তা সকলের জন্যই আশির্বাদ স্বরূপ হয়ে উঠবে। এতে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে একই সাথে দেশের চলমান উন্নয়ন তরান্বিত হবে।

ছবিঃ রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আনলোডিং দুটি ক্রেন।

শত বাধা পেরিয়ে ও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুই ইউনিটের এই প্রকল্পের কাজ করোনার কারণে বার বার বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও অবশেষে শেষ হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মোংলায় পৌছেছে। প্রথম ইউনিটের জন্য তিন লাখ মেট্রিকটন কয়লা আমদানীর চুক্তি করা হয়েছে। এছাড়াও গত ১৫ আগস্ট বিদ্যুৎ খাতে ভারত-বাংলাদেশের সহযোগীতাকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়া প্রজেক্টের ইউনিট-১কে জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্ত করা হয়। এর আগে গত ৬ এপ্রিল পাওয়ার প্লান্টটির ৪০০ কেভি জিআইএস সুইচইয়ার্ড এবং আন্তঃসংযোগকারী ট্রান্সফরমারকে সক্রিয় করা হয়েছে। ফলে এটি পায়রা পাওয়ার প্রজেক্ট থেকে বাংলাদেশের ২৩০ কেভি গ্রিড সিস্টেমে ৪০০ কেভি বিদ্যুতের হুইলিং ফ্যাসিলিটি প্রদান। আর এতে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন খুলনা অঞ্চলের সর্বোচ্চ চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রেরণের সক্ষমতা অর্জন করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টটি ভারত সরকারের রেয়াতযোগ্য অর্থায়ন প্রকল্প। ভারতের হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (বিএইচইএল) কোম্পানী কর্তৃক বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানী (বিআইএফপিসিএল) এর অধিনে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যা ভারতের এনটিপিসি লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ৫০ঃ৫০ জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানী। প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় হবে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে রামপাল উপজেলার সাপমারী-কাটাখালী ও কৈর্গদাশকাঠী এলাকায় ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির উপর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর ২০১২ সালে ২৯ জানুয়ারি দুই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানী বিপিডিবি ও এনপিপিসি যৌথ কোম্পানি গঠন করে। ২০১৩ সালে ১ আগস্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়। ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি দরপত্র আহবান করা হয়। ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ভারত হেভি ইলেট্রিক্যালস লিমিটেডের (বিএইচইএল) সাথে চুক্তি সাক্ষর হয়।

ছবি: কয়লা সংরক্ষনের জন্য নির্মিত ইয়ার্ড।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিকর প্রভাবকে সক্রিয়ভাবে প্রশমিত করার জন্য সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। বায়ু এবং পানি দূষণ কমানোর জন্য অন্যান্য বিষয়ের সাথে ইন-বিল্ট কিছু ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে একটি ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন সিস্টেম (এফজিডি) যেটাতে এসওএক্স এর নির্গমন নিয়ন্ত্রনের জন্য কোনও বাইপাস নেই। এছাড়াও পশুর নদীর দূষণ এড়াতে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং ফ্লু গ্যাস নির্গমন এড়াতে বাংলাদেশের সবচেয়ে লম্বা ২৭৫ মিটার চিমনি নির্মাণ করা হয়েছে। কয়লা সংরক্ষণের জন্য আলাদা স্টক ইয়ার্ড ও আমদানীকৃত কয়লা আনলোডের জন্য দু’টি বিশেষ ক্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ক্রেন দুটি ঘন্টায় ৩ হাজার ৬শ টন কয়লা আনলোডে সক্ষম হবে।
প্রকল্প পরিচালক সুবাশ চন্দ্র পান্ডে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে একটি ইউনিট প্রস্তুত আছে। যা এখন বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। এই সংযুক্তিকরণের কাজ চলামান রয়েছে। পরিবেশের সুরক্ষায় এই প্রকল্পে সর্বাধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার হবে। তাই এবিষয়ে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই। আগামী ফেব্রæয়ারীতে দ্বিতীয় ইউনিটটিও উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে। তিনি আরও বলেন, এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খুবই কম খরচ হবে। মাত্র হাফ কেজি কয়লাতে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, দুই দেশের যৌথ বিনিয়োগে এটি এখন একটি সফল ও যুগোপযোগী উদ্যোগ। এটি চালু হলে সারা দেশের ন্যায় খুলনা অঞ্চলের মানুষও এর সুফল ভোগ করবে। বিদ্যুতের চাহিদা মেটার পাশাপাশি এই প্রকল্পের ফলে এ অঞ্চলের হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকল্প এঅঞ্চলের মানুষের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ।

ঊআ-বিএস