UsharAlo logo
রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি

koushikkln
মে ৩১, ২০২১ ১১:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশ্বের প্রাচীন ধর্ম সনাতন। এই ধর্মের নানা বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক লেখা প্রকাশ হবে জনপ্রিয় অনলাইন দৈনিক ঊষার আলোতে। আজ প্রথম পর্ব প্রকাশিত হলো।

সনাতন ধর্মের মৌলিক বিষয় নিয়ে আগে সকলের জানা উচিত। প্রথমেই সনাতন ধর্মের সংজ্ঞা আমাদের জানা দরকার। সংজ্ঞাটি মোটামুটি নিম্নরূপ : * জগদ্ধিতায় অর্থাৎ জগতের হিতের জন্য কর্ম করাই সনাতন ধর্ম। *সর্বভূতহিতেরত থাকা অর্থাৎ সকল ভৌতিক জীবের হিত(মঙ্গল) সাধনে নিয়োজিত থাকাই সনাতন ধর্ম। * জগতকে ধারণ করাই সনাতন ধর্ম। * মহাভারতের বাণী -“যথা ধর্ম তথা জয়”। সেই ধর্ম হলো বৃহত্তর কল্যাণ- সাধন ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও ধর্ম সংস্থাপন। * আত্মপরতা নয় পরার্থপরতাই সনাতন ধর্ম। * মানুষের অন্তরাত্মায় দৈব শক্তির অস্তিত্ব আছে। সেই দেবত্ব অর্জনের পথ পরিক্রমা হলো সনাতন ধর্ম। * জীবাত্মা ও পরমাত্মার সম্পর্ক নির্ধারণ করে সনাতন ধর্ম।

সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি পাঁচটি

*প্রথম ভিত্তি: এই ধর্মের প্রথম ভিত্তি হলো জগদীশ্বরের উপর পরিপূর্ণ আস্থা, শরণাগতি ও পরিপূর্ণ সমর্পণ।
তবে সমর্পণের পূর্বে গুরু চরণে প্রণতি জ্ঞাপনপূর্বক প্রশ্ন উত্থাপন করে সংশয়াতীত হয়ে সমর্পিত হতে বলা হয়েছে। গীতায় বলা হয়েছে – “অজ্ঞশ্চাশ্রদ্ধধানশ্চ সংশয়াত্মা বিনশ্যতি-নায়ং লোকোহস্তি ন পরো ন সুখং সংশয়াত্মন” অর্থাৎ জ্ঞানহীন, শ্রদ্ধাহীন ও সংশয়াকুল ব্যক্তির বিনাশ নিশ্চিত। জ্ঞান আসলে সংশয় দূর হয়, হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভক্তি উৎপন্ন হয়। আর তারপরে ধর্মে আনুগত্য আসে। অন্ধ ভক্তি এই ধর্মে অনুপ্রাণিত করা হয়নি। এখন প্রশ্ন, যদি শরণাগতি বা সমর্পণ আসে, তা কতটুকু হলে চলে? উত্তরঃ A complete surrender is necessary here.
একজন সনাতন ধর্মাবলম্বীকে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে যে তার ইস্ট দেবতা তাকে রক্ষা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। এখানে বিশ্বাস হারানো মানেই উপাস্য ভগবানের অসম্মান। যিনি বিশ্বাস করতে পারেন না তিনি সংশয়বাদী। এইরূপ সংশয়বাদীর বিনাশ হয়। এইরূপ সংশয়াকুল ব্যক্তি সনাতনী হতে পারেন না। যতক্ষণ বিশ্বাসের ঘাটতি থাকে ততক্ষণ তাকে সাধন মার্গে থাকতে হবে। সনাতন ধর্মে অনেক অপশাস্ত্র স্বার্থান্ধ মহল কর্তৃক অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে। সেগুলো পরিহার করে সনাতন ধর্মের মূল মন্ত্রে পরিপূর্ণ বিশ্বাস না থাকলে কেউ প্রকৃত সনাতনী হতে পারে না। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকল দায় নিজ স্কন্ধে তুলে নিয়ে বলেছেন – “সর্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ। অহং ত্বাং সর্বপাপোভ্য মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।” অর্থাৎ সকল সংশয় পরিত্যাগ করে আমার আশ্রয় গ্রহণ করো, আমাতে সমর্পিত হও। আমি তোমাকে রক্ষা করবো। এই অভয়বাণী যদি কেউ বিশ্বাস করতে না পারেন তবে তিনি পরিপূর্ণ সনাতন ধর্মাবলম্বী নন। পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারীকে ভগবান রক্ষা করেন।
পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ বিষয়ে রবি ঠাকুরের বিখ্যাত একটি কবিতার কয়েকটি চরণ এখানে তুলে ধরা হলো : “যবে পাত্রখানি ঘরে এনে উজাড় করি একি, ভিক্ষামাঝে একটি ছোট সোনার কণা দেখি। দিলেম যা রাজ ভিখারীরে স্বর্ণ হয়ে এলো ফিরে, তখন কাঁদি চোখের জলে দুটি নয়ন ভরে-তোমায় কেন দেইনি আমার সকল শূন্য করে।” তিনি বুঝিয়েছেন দিতে যদি হয় তবে সকল শূন্য করে উজাড় করেই দিতে হবে। পরিপূর্ণ আত্ম সমর্পণের এই বাণী কবি তার বহু কবিতায় রেখে গেছেন।
* দ্বিতীয় ভিত্তি: সনাতন ধর্মের দ্বিতীয় ভিত্তি হলো পূজা ও প্রার্থনা। ত্রিসন্ধ্যা পূজা ও প্রার্থনা করে ধর্মকে চর্চায় রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় তা এখন সনাতনী সমাজে দেখাই যায় না। সনাতন ধর্মের অনুসারীরা পূজাকে এখন শুধুই উৎসবে পরিণত করেছে। মন্দিরে বাৎসরিক যে পূজা পার্বণ হয় তা সাধারণত বারোয়ারি পূজা। এই পূজায় উৎসব পালন করা হয়। পূজার আসল উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, মনোসংযোগ এবং আত্মশুদ্ধি। সনাতন ধর্ম বারোয়ারি মন্দির কেন্দ্রিক ধর্ম নয়। গৃহকে মন্দির করতে বলা হয়েছে। কারণ পরিবার পরিজন নিয়ে গার্হস্থ্য ধর্ম পালন করে গৃহকে আশ্রমে পরিণত করতে হয়। সনাতন ধর্ম চতুরাশ্রম ভিত্তিক ধর্ম। তার প্রথম আশ্রম হলো ব্রহ্মচর্য অর্থাৎ সংযমের মাধ্যমে শিক্ষা সমাপন। দ্বিতীয়টি হলো গার্হস্থ্য আশ্রম। গৃহধর্মকে গার্হস্থ্য আশ্রমে পরিণত করতে হয়। তাই প্রতিটি গৃহই এক একটি মন্দির সম। সেই গৃহ মন্দিরে চলে ত্রিসন্ধ্যা দেবতার পূজা এবং কর্মকে কর্মযোগে রূপান্তরিত করে গার্হস্থ্য ধর্মকে গার্হস্থ্য আশ্রমে পরিণত করতে বলা হয়েছে। সনাতন ধর্মে কর্মকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিত কর্ম আর দায়িত্ব বোধ থেকে কর্ম করার মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। কর্মের উদ্দেশ্য যেখানে শুধুই দায়িত্ব পালন সেই কর্ম মহৎ। এইরূপ কর্ম পালনকারী ব্যক্তি কর্মযোগী। তার গৃহ মন্দির সম। তার গৃহধর্ম গার্হস্থ্য আশ্রম। সনাতন ধর্মে পূজার ধারণা এইরূপ। (চলবে)

লেখক: প্রশান্ত কুমার রায়, সদস্য, ট্যাক্সেস এপিলেট ট্রাইব্যুনাল, বেঞ্চ-৪, ঢাকা।