ঊষার আলো রিপোর্ট : নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের তাগাদা ও নানামুখী আলোচনার মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেড় বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি সম্ভাব্য সময়সীমার কথা জানিয়েছেন। তা স্পষ্ট নয়। সংস্কার শেষে দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একমত বিএনপি ও জামায়াত। তারা এটাই দাবি করেছে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ২০২৫ সালে নির্বাচন সম্ভব। দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে রাষ্ট্রের যে বিভাগগুলোর সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। সেটা ২-৩ মাস আগে পরে হতে পারে। নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা সেটাই বড় ফ্যাক্টর। সেজন্য আমরা সংস্কার চাই, কিন্তু সব বিভাগের সংস্কার এই সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য নির্বাচনের জন্য যেসব বিষয় যুক্ত হবে, তাদের সংস্কার করতে হবে। সরকার নির্বাচনের যে ধারণা দিচ্ছে, সেটা যদি সিনসিয়ারলি বলে থাকে এর মধ্যেই সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব। এজন্য জামায়াত এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের সব বিভাগের সংস্কার এই সরকারের করার সময় হবে না। এটা করতে গেলে অনেক সময় এবং বছর লাগবে। আমরা চাচ্ছি নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে ইলেকশন প্রক্রিয়ার সাথে সরকারের যেসব বিভাগ জড়িত সেগুলো সংস্কার হোক। সে সংখ্যাটা কম এবং সেটা এর মধ্যে হওয়া সম্ভব।’
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘এখন নির্বাচন সম্পৃক্ত বিভাগগুলোর সংস্কার দরকার। সেটা না হলে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ এর মতো নির্বাচনের আশঙ্কা আছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সংস্কার একটি ধারাবাহিক ব্যাপার। প্রাথমিকভাবে যেটুকু দরকার, সেটুকু সংস্কার করেই নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। কারণ এখন দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি ঘটছে। সাধারণ মানুষের কাছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা থাকে, সেটা তো সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে থাকে না। এজন্যই বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হবে এমন চিন্তা নেই। লড়াইটা আমরা যখন করেছি, তখন বারবার বলেছি জনগণের ভোটাধিকার। দেশে ভোটাধিকারের একটি নমুনা তো দেখাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি এই সরকারের পক্ষে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব। এর মধ্যে যে সংস্কারগুলো হয়েছে, নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা তিন মাস সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের ভোটার তালিকায় ভুল অনেক কম। যেটুকু আছে সেটা তারা ঠিক করে নিতে পারবে। আমরা গণমাধ্যমে তাদের এমন বক্তব্য দেখেছি। নির্বাচনের জন্য সাধারণ মানুষের আগ্রহ আছে। এখন যেহেতু অনেক নতুন নতুন রাজনৈতিক চিন্তার বা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হচ্ছে। কাজেই সবাই এখন নজর রাখবে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের দিকে। সুতরাং প্রস্তুতিটা ভোটারদের পক্ষ থেকে বেশি আসবে, নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপক কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।
এদিকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। গত শনিবার কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে কুমিল্লায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের মধ্যেই হতে হবে। এ সময়ের মধ্যে সব সংস্কার শেষ করতে হবে।’ তিনি এও বলেন, ‘আশা করি প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার শেষ করেই ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন। এ দেশের জনগণ দ্রুত তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। মানুষ ভোট দিতে চায়।’
ঊষার আলো-এসএ