ঊষার আলো রিপোর্ট : রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এখন প্রকাশ্যে৷ সরকারের পতনের কয়েকদিন আগে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে জামায়াত বলছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই আদেশের আর বাস্তবে কোনো কার্যকারিতা নেই৷
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তার সকারের পতনের পাঁচ দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জামায়াত, শিবির ও অঙ্গসংঠনগুলো নিষিদ্ধ করে৷ সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ১৮৯(১) ধারার ক্ষমতা বলে নির্বাহী আদেশে তাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়৷
এর আগে আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে৷ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিলও খারিজ করে দেয়৷ ফলে দলটির নিবন্ধন ছিল না৷
সর্বশেষ নিষিদ্ধের পর সরকারের অনুষ্ঠানে জামায়াতের উপস্থিতি এবং প্রকাশ্যে আসা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে আগের সরকারের তো একটা গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে৷ আগের সরকারের পতনের পর যারা সরকার পরিচালনা করেন তারা যদি জামায়াতকে প্রয়োজন মনে করেন, কাজ করতে দিতে চান তাহলে ওই গেজেটটি বাতিল করতে পারতেন৷ এটা তো কয়েক ঘণ্টায়ই করা যায়৷ এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ৷ আগের সরকার নাই৷ কিন্তু মন্ত্রণালয় তো আছে৷ একই সময়ে তারা নিষিদ্ধ, আবার তাদের সঙ্গে সরকার বৈঠক করছে, এটা মানুষের চোখে লাগে৷ আইনের শাসন নিয়ে সন্দেহ হয়৷ এখানে সব কাজই তো হচ্ছে৷ এটা কেন তারা করেননি বুঝতে পারছি না৷ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে তো আইনি প্রক্রিয়ায় মামলা থেকে খালাস দেয়া হলো৷’
তবে তিনি এও মনে করেন, ‘অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কোনো সরকার হলে তারা আগের আইন, সংবিধান সবই বদলাতে পারে৷ বিপ্লবী সরকার যেভাবে চায় সেভাবে হতে পারে৷ তবে এমন কিছু করা ঠিক হবে না যাতে আইনের শাসন নিয়ে কথা ওঠে৷’
জামায়াতে ইসলমীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘তিনটি কারণে জামায়াত নিষিদ্ধে পতিত সরকারের আদেশ এখন আর কার্যকর নেই৷ প্রথমত, সরকার বলেছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে যে সহিংতা তার দায় জামায়াত-শিবিরের৷ সেই আন্দোলনেই সরকারের পতন হয়েছে৷ শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন৷ দ্বিতীয়ত, সরকার পতনের পর সেনাপ্রধান বৈঠকে জামায়াতের আমিরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ ভাষণে তিনি জামায়াতের আমিরের নাম গুরুত্বের সঙ্গে বলেছেন৷ তৃতীয়ত, বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের আমিরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ জামায়াতের নাম রেজুলেশনে আছে৷’
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে করণীয় নিয়ে বৈঠক করেন৷ তার মধ্যে ছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান৷ এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান যেসব রাজনৈতিক নেতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে সবার আগে জামায়াতের আমিরের কথা বলেন৷
সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি এর আগে তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৯৫৯ ও ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে অন্য তিনটি ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়েছিল৷ পরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালের ২৫ মে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ পায় জামায়াত৷ দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘও নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে৷
ঊষার আলো-এসএ