ঊষার আলো রিপোর্ট : রাষ্ট্র পরিচালনার মূল কাজগুলো সম্পন্ন হয় যে জায়গায়, প্রশাসনের নাভিকেন্দ্র সেই বাংলাদেশ সচিবালয়ে ঘটেছে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ইতঃপূর্বে সচিবালয়ে এত ভয়াবহ তো বটেই, সাধারণ কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকলেও কারও স্মরণে নেই। বুধবার গভীর রাতে সাত নম্বর ভবনের ৬ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোরে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ১০ ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আসবাবপত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। আরও মর্মান্তিক, আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য। ২৪ বছরের এই যুবক ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ঘটনার ভয়াবহতায় গোটা জাতি বিস্ময়াবিভূত হয়ে পড়ে। সর্বত্রই আলোচনা হতে থাকে, এ অগ্নিকাণ্ড কি নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত?
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রথমে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আগে কোনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে, সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে যা-ই উঠে আসুক, ঘটনায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া, তা আর আগের জায়গায় ফিরে আসবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পাওয়া যাবে না যেহেতু, তাই আগামী দিনে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে বেশ বেগ পেতে হবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে। তার চেয়ে বড় কথা, বর্তমানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, সেই পদক্ষেপও হোঁচট খাবে অবশ্যই।
সচিবালয় রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, তা আগেই বলা হয়েছে। অথচ সেখানেই ঘটল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড! সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও তাই প্রশ্ন উঠেছে। যদি এ অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন, ভবনটির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা কেন এতটা ত্রুটিপূর্ণ ছিল যে আগুন লাগল? আর যদি এটা পরিকল্পিত নাশকতা হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে, কারা এটা ঘটাল, নাশকতাকারীরা এ কাজ করতে পারল কীভাবে? একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমাদের, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে দেশের, বিশেষত রাজধানীতে নানা ধরনের অঘটন ঘটছে। এর আগেও আগুন লেগেছে কয়েকটি স্থাপনায়। তবে কি কোনো কোনো মহল দেশকে অস্থির করে তুলে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে? আমরা আশা করব, তদন্ত কমিটি সাফল্যের সঙ্গে প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হবে। অগ্নিকাণ্ড যদি নাশকতা হয়ে থাকে, তাহলে নাশকতাকারীদের পরিচয় জানা যাবে, নাশকতার উদ্দেশ্যও পরিষ্কার করা হবে। এত বড় একটা অপঘটনাকে হেলাফেলার চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। দ্বিতীয় কথা, আগামী দিনগুলোয় যেন এ ধরনের অপঘটনা না ঘটতে পারে, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
ঊষার আলো-এসএ