দেশে এখন এক অস্বস্তিকর অস্থিরতা বিরাজ করছে। বলা যায়, একটা গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একজন প্রভাবশালী ছাত্রনেতা, যিনি নবগঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও বটে, তার ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আমরা মনে করি, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরেক দেশপ্রেমিক ছাত্রসমাজের কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব বা বিরোধ কাঙ্ক্ষিত নয়। দেশের স্বার্থে কোনো বড় ধরনের ইস্যু তৈরি হলে সমাজের সব পক্ষই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ইস্যুটির নিষ্পত্তি করবে, এটাই গণতন্ত্রসম্মত।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তার এই বক্তব্য সমাজের কোনো অংশকে সংক্ষুব্ধ করতেই পারে; কিন্তু সেই সংক্ষুব্ধতা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করলে সেটা হবে দুঃখজনক।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর একটি নতুন দেশ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের। জাতির সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই অভ্যুত্থানে অন্তত দেড় হাজার প্রাণ ঝরে গেছে, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এই রক্তপাত কোনোভাবেই বৃথা যেতে পারে না। রাষ্ট্রের স্টেকহোল্ডারদের এমন কোনো অবস্থান নেওয়া চলবে না, যাতে অভ্যুত্থানকালীন ঐক্য বিনষ্ট হয়। এই ঐক্যকে আমাদের চোখের মণির মতো আগলে রাখতে হবে। নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত, এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। মতানৈক্য রয়েছে সংস্কারের প্যাকেজ নিয়েও। সংস্কারের পরিধি কতটুকু হবে, এ ব্যাপারে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করব, এই ইস্যুতে দ্রুতই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। পুলিশ বাহিনীর মনোবল এখনো ফিরিয়ে আনা যায়নি। ধারণা করা হয়, এই বাহিনীর অনেকেই সরকারকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছে না। এই অসহযোগিতা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ভালো হতে দিচ্ছে না। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর মনোবল ফিরিয়ে আনা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ওদিকে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলেও ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এবং আঠারো কোটি লোকের এ দেশের সর্বত্রই অনিয়ম মোকাবিলা করার জন্য মাঠে থাকা সেনাসদস্যের সংখ্যা আনুপাতিক হারে অনেক কম। এ অবস্থায় নাগরিক সমাজের ইতিবাচক দেশপ্রেমমূলক মনোভাবই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। দেশবাসীর কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, প্রত্যেকেই যেন যার যার জায়গা থেকে দেশকে স্থিতিশীল রাখার প্রয়াস অব্যাহত রাখেন।
জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন অসাধারণ সৃজনশীল একজন নোবেলবিজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তার দক্ষতার পুরোটাই কাজে লাগাতে হলে প্রত্যেকের, বিশেষত ছাত্রসমাজকে তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ছাত্রসমাজ এদেশের এক ঐক্যবদ্ধ প্রচণ্ড শক্তি। এই শক্তি যদি সঠিক পথে থাকে, তাহলে অনেক কিছুই অর্জন সম্ভব। ছাত্রসমাজের মধ্যে বিভক্তি এবং ভুল চিন্তা দেশের জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা প্রত্যাশা করব, জুলাই অভ্যুত্থানে তারা যে মহান আদর্শে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই মানসিকতা তারা সবসময় ধরে রাখবেন। রাজনৈতিক দলসহ দেশের নাগরিক সমাজ ও সব স্তরের নাগরিকের শুভচিন্তাই পারে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে। প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলী এককভাবে এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। আমরা সবাই সুনাগরিক হয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব, এটাই প্রত্যাশিত।
ঊষার আলো-এসএ