UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক শেল্টার দিচ্ছে দুটি দল

ঊষার আলো রিপোর্ট
মার্চ ১৩, ২০২৫ ৪:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি ইসলামী দল ও একটি নতুন দলের নেতারা শেল্টার দিচ্ছেন এমন তথ্য তুলে ধরে বৈঠকে নেতারা বলেন, এর পেছনে ওই দল দুটোকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রমাণ তারা খোঁজ করে পেয়েছেন। এর ফলে ঘুস ও দুর্নীতি কমেনি; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলেও নেতারা মনে করেন।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সূত্রমতে, বৈঠকে নেতারা বলেন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের মধ্যে গড়িমসির বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গণপরিষদ নির্বাচন, সেকেন্ড রিপাবলিক ও স্থানীয় সরকারের দাবি করে নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার পেছনে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার ‘মদদ’ রয়েছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার বিএনপিকে নয়; তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের শক্তি ভাবে। তারা সহজে ক্ষমতা ছাড়বে বা নির্বাচন দেবে বলে মনে হচ্ছে না। বৈঠকে নেতারা আরও বলেন, সরকার এনজিওর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে একটা ধাক্কা দিতে চায় তারা। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা-মহানগরে সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে অবস্থান জানান দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

বাংলাদেশ নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। স্থায়ী কমিটি বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে তারা বুঝতে পেরেছেন-দেশের জন্য ভালো কোনো সংবাদ নেই। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতাকে আরও সতর্ক থাকতে আহ্বান জানানো হয়। নেতারা বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামী একটি দল ও একটি নতুন দল শেল্টার দিচ্ছে। এরা এখন একযোগে বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করছে। ফলে বিশৃঙ্খলা কমেনি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে, খুব শিগগির মানুষ বলতে শুরু করবে যে হাসিনার আমলেই ভালো ছিলাম। যা হতে দেওয়া যাবে না। সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হবে। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদেরও সজাগ থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, কর্মসূচির বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি।

সূত্রে জানায়, বৈঠক একাধিক নেতা বলেছেন যে কোনোভাবেই হোক একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারা যে কোনো মূল্যে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে এ সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু সরকারের মধ্যেও এই গোষ্ঠীর লোকজন রয়েছে, যে কারণে সরকারপ্রধান বুঝতে পারছেন না। নেতারা ধারণা করছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এই ষড়যন্ত্রে রয়েছে। যাদের শেল্টার দিচ্ছে দুটি দল। তারপরও সরকারের ওপর বিএনপির অকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত থাকবে। যে কোনো প্রয়োজনে বিএনপি সরকারের পাশে থাকবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে দ্রুত সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা। এবং দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা।

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাজধানীতে এক ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস একটি বিশেষ দলকে কারা টাকা দেয়, কারা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে দেয় তা জাতির সামনে প্রকাশ করার অনুরোধ জানান। গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, একটি বিশেষ দল সম্পর্কে সাংবাদিকরা কিছু লিখছে না। যতটুকু পারেন ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে লিখছেন। পর্দার অন্তরালে অনেক কিছুই ঘটছে সেগুলো লিখছেন না। কোন ব্যবসায়ী কোন দলকে কত টাকা দেন, কোন দল কোন ব্যবসায়ীকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, কোন ব্যবসায়ীকে বাঁচাতে চেষ্টা চালাচ্ছে, এগুলো লিখছেন না। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে, কিন্তু তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না। কারণ ওই বিশেষ দলের কাছে তারা শেল্টার পাচ্ছেন। কিছু ব্যবসায়ী গেল ১৭ বছর অবৈধভাবে হাজার কোটি টাকা ইনকাম করেছেন। এরাই পরের ১৭ বছর এই টাকা ব্যয় করবেন দেশকে ধ্বংস করতে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের আমন্ত্রণ বা সংবিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বসতে পারে কিনা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন প্রশ্নও তোলা হয়েছে। এতে নেতারা বলেন, তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) রাষ্ট্রের কোন পর্যায়ের অথরিটি? আবার সংলাপ হবে কোন দলগুলোর সঙ্গে? শুধু নিবন্ধিত নাকি অনিবন্ধিত সংগঠনও থাকবে। নিবন্ধিত হলে জামায়াতে ইসলামী এবং তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এই সংলাপে আমন্ত্রণ পাবে না। এসব বিষয়ে স্পষ্ট হতে হবে। এখানে সংলাপ হতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের। সংস্কার ইস্যুতে একদিন, দুদিন সংলাপ হতে পারে। সংস্কার ইস্যুতে অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ হলে তো বহু সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।

বৈঠকে এক নেতা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামতের জন্য ২৫০ বা তারও বেশি পৃষ্ঠার বই সরবরাহ করেছে। এখানেই প্রশ্ন, বাংলাদেশের সংবিধানের যে বই এবং নির্বাচন কমিশনের বিধি তা কত পৃষ্ঠার? এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ঐকমত্য কমিশনের চিঠির জবাব দু-একদিন পর : সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানান, সংস্কারের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামত চেয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলো মতামত জানাবে বলে তারা আশা করছেন। দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর শুরু হবে আলোচনা। আলোচনার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সে সময় থেকেই আলোচনা শুরু হবে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার আলোকে ঐকমত্য কমিশনের চিঠির জবাব প্রস্তুত করতে গত মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, দু-একদিন সময় নিয়ে তারা ঐকমত্য কমিশনের চিঠির জবাব দেবেন।

ঊষার আলো-এসএ