ঊষার আলো রিপোর্ট: আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা (আওয়ামী লীগ) জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা জানগণকে বঞ্চিত করে বিনা ভোটে ক্ষামতায় টিকে থাকতে চায়। আন্দোলন ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো পথ নেই। তারা দেশের অর্থনীতি; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান; সব অর্জন ধ্বংস করেছে। তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে দেশকে নরকে পরিণত করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে শেখ হাসিনার সরকার নতুন পাঁয়তারা শুরু করেছে।
শনিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে খুলনা মহানগরীর ডাকবাংলো মোড়ের সোনালী ব্যাংক চত্বরে অনুষ্ঠিত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় শেখ হাসিনার সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে দেশকে নরকে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, তারা আমাদের অর্থনীতি; রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। আমাদের সকল অর্জনকে ধ্বংস করেছে। কারণ একটাই, তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তারা বিনাভোটে, জনগণকে বঞ্চিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
বর্তমান সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে মন্তব্য করে ফখরুল আরও বলেন, তদন্ত কমিশন গঠন করে সব দুর্নীতিবাজকে খুঁজে বের করে উৎখাত করা হবে। কিন্তু এই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। হাসিনা সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
নিজ বক্তব্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল। দাবি না মানলে আওয়ামী সরকার পালানোর পথ পাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গণ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুদু, খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা। এতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ জেলা মহানগর নেতারা বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলীয় নেতাকর্মী নিহত, হামলা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশের অংশ হিসেবে খুলনায় বিএনপির এ বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও এড, নিতাই রায় চৌধুরী।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, অচিরেই আমরা ক্ষমতায় যাচ্ছি। আমরা আওয়ামী লীগকে কখনও ক্ষমা করবো না। কয়েক দিনের মধ্যে তারা আমাদের পাঁচজনকে হত্যা করেছে। এই প্রতিশোধ নেবো। দুদু এই গণসমাবেশের সমন্বয়কারী ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘খুলনা থেকে শপথ, শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনও নির্বাচন করতে দেবো না। আওয়ামী লীগের লোকেরা বলেছিল পদ্মার এপারে কোনও সমাবেশ করতে দেবে না। তারা একটু এসে দেখুক, লজ্জা পাবে। এখানে জনসমুদ্র হয়েছে।’
দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রী নেতাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ গণসমাবেশে যোগ দিতে গত শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাতেই নেতাকর্মীরা খুলনায় আসতে থাকেন। পরে সকাল থেকে দলে দলে সমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশে আসার সময় পথে-পথে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে রেলস্টেশনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় বেশ কিছু জানালার কাঁচ।
বৈকালী এলাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয়ের। এ সময় আহত হন অন্তত ১৫ জন। এছাড়া শিববাড়ী মোড়ে দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কয়েক জেলার সাধারণ মানুষও চরম দুর্ভোগে পড়েন। জরুরি কাজ থাকলেও অনেকেই যেতে পারেননি নির্দিষ্ট গন্তব্যে, বিশেষ করে কর্মমুখী মানুষরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। হাসপাতালে যেতে বিড়ম্বনার শিকার হন অসুস্থ ব্যক্তিরাও।
ঊআ-বিএস