UsharAlo logo
সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলু-পেঁয়াজের দাম এখনো অসহনীয়

usharalodesk
নভেম্বর ৯, ২০২৩ ১২:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট: প্রতিকেজি আলু এখনো ৫০-৬০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম গুনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। যদিও ৫৫ দিন আগে (১৪ সেপ্টেম্বর) সরকার কেজিপ্রতি আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৫-৩৬ ও ৬৪-৬৫ টাকা। ডিমের দামের ক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা। বেঁধে দেওয়া দামে ১২ টাকায় পিস ডিম মিলছে না কোথাও। সরকারের সিদ্ধান্ত কাগজে-কলমেই থেকে গেছে। বাড়তি দরে এসব নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে এখনো ক্রেতাকে। এরই মধ্যে আলু আমদানি শুরু হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছিল, হয়তো এরপর বাজার সহনীয় হবে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। অন্যদিকে আগ থেকেই পেঁয়াজ আমদানি হলেও তারও কোনো প্রভাব নেই বাজারে। তবে রাজধানীর খুচরা বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ কিছুটা বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। বুধবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছরের জুন থেকেই আলুর বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। আগস্টের শেষে প্রতিকেজি আলু ৪০ টাকা বিক্রি হলেও সেপ্টেম্বরে ৪৫ টাকায় ঠেকে। আলুর দাম ৩৫-৩৬ টাকা বেঁধে দেওয়ার প্রভাব বাজারে পড়েনি আজও। অক্টোবর মাসের শেষদিকে আলুর কেজি ৬০-৬৫ টাকায় ওঠে। কোথাও আবার ৭০ টাকাও ক্রেতাকে কিনতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৪ দিন ধরে দেশের বাজারে আমদানি করা আলু বিক্রি হচ্ছে। এতে দাম যৎসামান্য কমলেও সরকার নির্ধারিত দামে আলু পাওয়া যাচ্ছে না।

বুধবার খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত দরের চেয়ে বাজারে ক্রেতার ১৫-২৪ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে চলতি বছরের মার্চে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ টাকা। মে মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ টাকা।

পরিস্থিতি এমন যে, এই পেঁয়াজই ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে ১০০-১১০ টাকা দরে বিক্রি করে। মূল্য কারসাজি রোধে ১৪ সেপ্টেম্বর কিছুটা মূল্য কমিয়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করার পরও সে সময় বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। পরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম সহনীয় রাখতে রপ্তানিতে প্রতি টন ৮০০ ডলার মূল্য বেঁধে দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আমদানি মূল্য ঘোষণার পরপরই ফের দেশে কারসাজি করে বাড়ানো হয় দাম।

বুধবার খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০-১৫০ টাকায়। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। ফলে সরকারের নির্ধারিত দামের তুলনায় ক্রেতাকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ কিনতে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা বেশি গচ্চা দিতে হচ্ছে।

এদিকে আমদানি করা ডিম দেশে আসতে শুরু করলেও ভোক্তাকে প্রতিহালি কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতিপিস ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সায়। কিন্তু এক পিস আলাদা করে কিনতে হলে ১৩ টাকার কমে মিলছে না। এখানেও হঠকারিতা। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুসরণ করলে প্রতিপিস ডিম ১২ টাকাই বিক্রি হওয়ার কথা। দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ কোটি। এ হিসাবে ডিমের বাজার থেকে এখনো প্রতিদিন বাড়তি অন্তত ৪-৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ডিম সিন্ডিকেট। ডিম নিয়ে গত মে মাস থেকে চরম কারসাজি শুরু করে ডিম ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারীসহ এই খাতের সিন্ডিকেট। ধীরে ধীরে বাজার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। এভাবে প্রায় পাঁচ মাস চলার পর ১৪ সেপ্টেম্বর ডিমের পিস ১২ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু আজ অবধি সেই দামে কেউ ডিম কিনতে পারেনি। উপরন্তু ১৩-১৪ টাকা পিস হিসাবে কিনতে হয়েছে। গড়ে ১৩ টাকা হিসাব করলেও দাম বেঁধে দেওয়ার পর গত ৫৫ দিনে ডিমের বাজার থেকেই বাড়তি প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দিকে একটু নজর দেওয়া যেতে পারে। ওই মাসে প্রতিপিস ডিমের দাম ছিল ১০ টাকা। মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ১৬ টাকা। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতিপিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছিল।

বাজার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশে আমদানি করা আলু আসতে শুরু করেছে। তবে এখনো সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম বাড়তি। তবে ভারত যেদিন প্রতিটন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে, সেদিনই দেশে কীভাবে হুহু করে দাম বেড়ে যায়? এ বিষয়ে তদারকি সংস্থার জোরালো ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল। সেটা না করায় ক্রেতারা পণ্য কিনে ঠকছেন।

রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. ইকরামুল হক আক্ষেপ নিয়ে বলেন, বাজারে এক প্রকার নৈরাজ্য চলছে। বিক্রেতারা পণ্যের সরবরাহ কমার অজুহাতে যে যার মতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আবার সরবরাহ বেড়েছে বলে দাম কমাচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বাজারে সরবরাহ সব সময় পর্যাপ্ত থাকে। বিক্রেতারা আমদানিকারক বা উৎপাদনে জড়িতদের কারসাজি করে দাম বাড়ায়। একটি নির্ধারিত সময় দাম বাড়িয়ে ক্রেতার পকেট থেকে হাজারো কোটি টাকা অবৈধভাবে নিয়ে নেয়।

এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। এতে ক্রেতাসাধারণের কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরলেও রাজধানীর একেক বাজারে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। বুধবার রাজধানীর কাওরান বাজারের খুচরা পর্যায়ে প্রতিপিস ফুলকপি ও কাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে রাজধানীর নয়াবাজার ও রায়সাহেব কাঁচাবাজারে বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ৬০-৭০ টাকা ছিল। তবে রামপুরা খুচরা বাজারে প্রতিপিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ৭০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। তবে রামপুরা বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজারে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি নয়াবাজারে প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা ৭ দিন অগেও ১২০ টাকা ছিল। তবে মালিবাগ ও রামপুরা বাজারে এই শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। পাশাপাশি ধুন্দুল, ঝিঙে ও কচুমুখির কেজি একই টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতিকেজি মুলা ৫০ টাকা ও পেঁপের কেজি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ২০০-২৫০ টাকা ছিল। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি টমেটো, গাজর ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা।

ঊষার আলো-এসএ