ঊষার আলো প্রতিবেদক : নগরীর খানজাহান আলী থানায় ইজিবাইক চোর চক্রের সদস্য শনাক্ত ও গ্রেফতারের ঘটনায় ভুক্তভোগী চালকরা দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। রবিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভুক্তোভোগী ড্রাইভারেরা চোর চক্রের সদস্যদের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখে থানা আঙিনায় ভিড় করেন। গ্রেফতারকৃত চোর সদস্যদের আটকের খবর পেয়ে ইজিবাইক, অটোরিক্সা বা ভ্যান হারানো ভুক্তভোগীরা চোরদের শনাক্ত করার জন্য থানা পুলিশের কাছে ছুটে আসেন।
খুলনা মিননিসিপাল ট্যাংক রোডের ২১ নং ওয়ার্ডের মুনসুরের বাড়ির বাসিন্দা খোকন জানান, গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ সালের দুপুরে আবু নাসের হাসপাতালের সামনে থেকে কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করে ইজিবাইকটি চুরি করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় তিনি খালিশপুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। গত ২৯ জানুয়ারি পত্রিকায় ইজিবাইক দুই চোরকে দেখে তিনি শনাক্ত করতে পারেন। তারা (চোর) তার ইজিবাইক নিয়ে চলে গিয়েছিল।
গিলাতলা ২নং বিহারী কোলনী বাসিন্দা হাসনাইন বাবুর ইজ্ঞিন ভ্যানটি গত ২৫ ডিসেম্বর শিরোমনি বিদ্যুৎ অফিসের বারান্দা হতে দুপুরে চুরি হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডি দায়ের করেন। তিনিও পত্রিকা দেখে চোর শনাক্ত করতে পরেছেন বলে জানান।
রেজাউল শেখ (নেদু)। গিলাতলা দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা। তিনি জানান, এই চক্রটি শিরোমনি কেডিএ মার্কেট এর সামনে হতে ৫ লিটারের কয়েকটি পানির বোতল নিয়ে শিরোমনি বাইপাস সড়কের বিকেএসপি’র সামনে গিয়ে র্যাবের পরিচয় দিয়ে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে পরে অন্যত্র একটি স্থানে নামিয়ে দেয় তাকে । এ তিনি খোয়ান তার ইজিবাইকটি। এই চক্রটি গ্রেফতারের পর তাদের ছব্ িদেখে তিনি শনাক্ত করেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় তিনি জিডিও দায়ের করেন।
গিলাতলা ৫নং ওয়ার্ডের বড় বাড়ীর পাশের বাসিন্দা আব্দুল জলিল। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে আটরা ইউনিয়ন অফিসের সামনে হতে তার ইজিবাইকটি চুরি করে নিয়ে যায় সিন্ডিকেট চক্রটি। সদ্য এই চক্রের সদস্যরা গ্রেফতারের পর তাদের চিহ্নিত করেন তিনি।
গিলাতলা দক্ষিণপাড়া বালূর ঘাট স্ট্যান্ডের ভ্যান চালক মোঃ আব্দুল গফফার ইজ্ঞিনচালিত ভ্যানটি চুরি করে নিয়ে গেছে এই চক্রটি। রবিবার সকাল হতে এমনই একের পর এক ভুক্তভোগী ইজিবাইক, অটোরিক্সা বা ভ্যান হারানো অসহায় মানুষগুলো তাদের খোয়ানো জীবন-জীবিকার চালিকা বাহনটি ফিরে ফেরে থানার সরণাপন্ন হয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে তারা জানতে পারেন খানজাহান আলী থানায় ইজিবাইক চোরকে পুলিশ ধরেছে। ভুক্তভোগীরা চোরদের চিনতে পারায় থানায় এসেছেন তাদের হারানো বাহনটি ফিরে পেতে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইসতিয়াক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে আমরা একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্রকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করছি এবং গত ২৯ জানুয়ারি এই আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত রিমান্ড মুঞ্জুর করলে এই চোর সদস্যদের নিকট হতে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলবে ।
খানজাহান আলী থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, যারা অসহায় গরীর মানুষের রুটি-রুজির উপর হামলা চালিয়ে তাদের উপার্জনের পথ কেড়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জিরোট্রলারেন্স। এই চক্রের সাথে যারা জড়িত তাদের কোন অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানা চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। একই সাথে যে সকল ড্রাইভারগণ বিভিন্ন গনমাধ্যমে ছবি দেখে চোর চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করছেন তারা শনাক্তকারীদের বিরুদ্ধে নতুন করে সংশ্লিষ্ট থানায় এসে মামলা দায়ের করতে পারবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
গত ২৮ এসআই ইসতিয়াক, এএসআই নিতিশ বিশ^াস সহ সঙ্গীয় ফোর্স গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইজিবাইক চোর সিন্ডিকেট চক্রের প্রধান তাজুল শরীফকে প্রথমে আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্যনুসারে বাকি আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। একই সাথে উদ্ধার করা হয় ৩ টি ইজিবাইকও। আটককৃতরা হলেন, তাজুল শরিফ (৩৫), মোঃ সোহেল রানা (১৯), বিপুল শিকদার (৩০), রনি মোল্লা, চুন্নু মোল্লা (২৮), তুহিন খন্দকার (৪০) মিঠু শেখ (৩৫) ও মহাসিন মোল্লা।