UsharAlo logo
বুধবার, ২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক সপ্তাহে দোকানে ঝুলেনি মাংসের মূল্য তালিকা

koushikkln
এপ্রিল ৬, ২০২২ ১০:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : বুধবার (০৬ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটা। ফুল মার্কেট সংলগ্ন (বিকে মেইন রোড) খাসির মাংসের দোকান। স্বাভাবিকভাবেই চেয়ারে বসে আছেন বিক্রেতা সফি মিয়া। মাংসের দাম কত জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, ৮৫০ টাকা। মূল্য তালিকা দোকানে ঝুলানো নিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনে মেয়রের সাথে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে আমিও ছিলাম। বৈঠকে মাংসের দামের চার্ট ঝুলাতে বলেছে। দোকানে মূল্যের চার্ট বানাতে দেয়া হয়েছে, ২/১ দিনের মধ্যেই তা ঝুলানো হবে।

এই দোকানে সড়ক খোঁড়াখুড়ির ধূলা-ময়লা গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছিল ঝুঁলানো মাংসে। তা ঠেকানো কোন ব্যবস্থা দোকানদারের ছিল না। পাশের দোকানদারেরও একই অবস্থা। কয়েক কদম হেটে যেতেই মোহন মিয়া মাংস বিক্রির কাজে ব্যস্ত দেখা যায়। দোকানের কোন সাইন বোর্ড না থাকলেও তিনি জোর গলায় অনেক কথাই বলেছেন। তার দোকানেই খাসি জবাই করে সেই রক্ত আর নারী ভুড়ি ড্রেনে ফেলতে দেখা যায়। তিনি সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা সম্পূর্ণ অমান্য করেই মাংস ব্যবসা করে চলেছেন।

তিনি বলেন, মাংসের কেজি ৮০০ টাকা। মূল্য তালিকা ঝুলানো নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে যারা টাকা নিয়ে যায় তারাই মূল্য তালিকা তৈরী করে ঝুলিয়ে দিয়ে যাবে। নগরীর শুধু এ দু’টি দোকানের চিত্র। বাকী মাংসের দোকানের (অধিকাংশ) চিত্র ঠিক একই।

এখানে মাংস বিক্রেতাদের দৌরাত্মের শেষ নেই। তারা অহরহ বিক্রি করছে অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত পশুর (গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ) মাংস। ভেড়ার মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ছাগলের মাংস বলে। পশু জবাই করে যত্রতত্র মূলমূত্র ফেলার দায়ে পরিবেশ হচ্ছে দূষণ। নগরীর অধিকাংশ কসাইরা আইন কানুন তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছা স্বাধীন মতো কাজ করছে। বেপরোয়া এসব পশুর মাংস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান করে তাদের সঠিক পথে আনতে হিমশিম খাচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। এতে করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। এমনই ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে কেসিসির ভেটেরিনারি বিভাগের তদন্ত টিমে কাছে। তারই ধারাবাহিকতায় কেসিসি ওই সব পশুর মাংস বিক্রেতাদের নোটিশ দিয়েছে। নোটিশে নগরীর মাত্র তিনটি স্পটে কসাইয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। স্পট তিনটি হলো নগরী বেনীবাবু রোডে হাতেম আলীর ছেলে রেজাউল কসাই, শান্তিধাম মোড়ের উকিল উদ্দীনের ছেলে মোহন কসাই, ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের সামনের লাল কসাইয়ের ছেলে সাইদ কসাই ও একই বাজারের কালুর ছেলে সোহেল কসাই।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ মার্চ সোমবার মাংসবিহীন দিবসে কেসিসির ভেটেরিনারি অফিসার ডা. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শনে যান। এ সময় টিমটি দেখেন, কসাইরা অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত পশু জবাই করে বিক্রি করেছে। পশু জবাই করে রক্ত, গোবর ও অন্যান্য ময়লা আবর্জনা ড্রেনে ফেলে পরিবেশ দুষণ করছে। ছাগলের মাংসের লাইসেন্স গ্রহণ করে ভেড়ার মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। ওই তিনটি স্পট পরিদর্শন করে টিমটি এমনই চিত্র দেখতে পান। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমতাবস্থায় চার কসাইয়ের লাইসেন্স বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে ওই ধারায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, মর্মে কেসিসির ভেটেরিনারি অফিসার মাংস বিক্রেতাদের এ নোটিশ দেন।

একটি সূত্র জানায়, নগরীর গল্লামারি আর খালিশপুরে কেসিসির দু’টি কসাইখানা রয়েছে। এর বাইরেও কোন কোন কসাই অসুস্থ্য পশু জবাই করে বিক্রি করছে। বিশেষ করে দৌলতপুর বাজারের কসাইদের একটি অংশ মাংস আড়ংঘাটা গাইকুড়ে জবাই করে ওই মাংস বাজারে বিক্রি করছে। এছাড়া ফুলবাড়িগেটের কসাইদের একই অবস্থা। তারাও বেশীরভাগ কসাই স্থানীয়ভাবে পশু জবাই দিয়ে তা বাজারে এনে বিক্রি করছে। যা জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে রয়েছে। এ ব্যাপারে কেসিসির নজরদারী আরো বাড়ানো উচিত বলে নগরবাসী মনে করেন।

কেসিসির ভেটেরিনারি অফিসার ডা. রেজাউল করিম বলেন, নগরীতে ১৭৫ জন মাংস বিক্রেতা (কসাই) রয়েছে। দোকানের সংখ্যাও ঠিক একই। সপ্তাহে প্রতি সোমবার মাংসবিহীন দিবসে নগরীর মাংসের দোকানে অভিযান পরিচালিত হয়। আইন অমান্য করার দায়ে বিগত দিনে একাধিক কসাই শাস্তির আওতায় আনা হয়। আইন মানার জন্য তাদেরকে বারবার বলা হচ্ছে। এছাড়া গত ১ এপ্রিল মেয়রের সভাপতিত্বে নগরভবনে মাংস বিক্রেতাদের নিয়ে সভা হয়। ওই সভায় গরুর মাংস ৬০০ টাকা আর খাসির মাংস ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। একই সাথে নির্ধারিত মূল্য তালিকা প্রতিটি দোকানে ঝুঁলিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দেন মেয়র। নিয়ম মানার জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বুঝানো হচ্ছে। জরিমানা ও মাংস জব্দ করা হচ্ছে। তারপরও কোন কোন কসাই যেন বেপরোয়া।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, মূল্য তালিকা প্রতিটি দোকানে প্রদর্শনের নিয়ম রয়েছে। এটা না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।