সারাদেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও চলমান কারফিউ’র প্রভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে কক্সবাজার বিমুখ হয়েছে লাখ লাখ পর্যটক। এতে ভয়াবহ লোকসানের কবলে পড়েছে দেশের অন্যতম পর্যটন খাত কক্সবাজার।
আন্দোলন, কারফিউ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নের কারণে ১৫ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজারের পর্যটনখাতে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আন্দোলন ও সরকারের কারফিউ জারির কারণে এই সময় পর্যন্ত একেবারে পর্যটকশূন্য ছিল পর্যটন শহর কক্সবাজার। এতে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন লোকসান গুনছেন।
শামুক- ঝিনুক ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন- দুই সপ্তাহ ধরে কোন পর্যটক নেই। তাই আয় রোজগার একেবারে শূন্য। প্রতিদিন দোকান খুলে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি ।
ফটোগ্রাফার একরাম উল্লাহ বলেন—সৈকতে পর্যটক না থাকায় বেকার সময় কাটছে আমাদের। ছবি তুলে পরিবার চলে আমার। বর্তমানে কোন আয় রোজগার নেই। জমানো কোন টাকাও নেই। তাই খুব কষ্টে দিনযাপন করছি৷
শুক্রবার ও শনিবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় ফাঁকা পড়ে আছে পুরো বীচ এলাকা। সমুদ্র সৈকতের ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কিছু স্থানীয় বাসিন্দা ও শতাধিক পর্যটক রয়েছে । এছাড়াও জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র যেমন – হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, রামু রাবার বাগান, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরসহ অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র ফাঁকা পড়ে আছে।
পাঁচ তারকা হোটেল দি কক্স- টুডে’র এজিএম মোহাম্মদ আবু তালেব জানান- এই মুহুর্তে আমাদের খুব খারাপ অবস্থা। শনিবার (২৭ জুলাই) আমাদের রুম বুকিং হয়েছে মাত্র দুটি। ছাত্র আন্দোলন ও সরকারের কারফিউ’র কারণে আমাদের অন্তত দেড় কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। অতি দ্রুত দেশের বর্তমান অস্তির পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমাদের প্রতিষ্ঠানে আরও ক্ষতি। সেই সাথে বড় ধরনের ক্ষতির প্রভাব পড়বে কক্সবাজারসহ দেশের সব পর্যটন খাতে।
এছাড়া সারাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কক্সবাজারের পর্যটন খাতে বড় ধরনের ক্ষতির প্রভাব পড়েছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন- কক্সবাজারে সাড়ে ৪০০ হোটেলে ও গেস্ট হাউসে ম্যানেজমেন্টের যে ব্যয়, তা পুষিয়ে নিতে ব্যবসা বন্ধ করে রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা যখন একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, তখনই একটা খারাপ পরিস্থিতি সামনে আসে। পর্যটনশিল্প ব্যবসার জন্য এটি খুবই আতঙ্ক এবং উদ্বেগের।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, আমাদের সমিতিভুক্ত ১২০টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টির মতো বন্ধ হয়ে গেছে। এর বাইরেও রয়েছে ৩০০টির মতো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে লোকসান কমাতে মালিক পক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারেন বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, হঠাৎ করে দেশে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে কক্সবাজারে আটকা পড়েন পর্যটকরা। সেনাবাহিনীর পাহারায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে।