ঊষার আলো রিপোর্ট : ভারী বর্ষণের কারণে কক্সবাজারে পাহাড়ধসে কয়েকজনের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সেখানে টানা ভারী বর্ষণ হয়েছে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এ পরিস্থিতিতে পুরো শহরে মানুষের কর্মজীবন থেমে যায়। কক্সবাজারের হোটেলে হাজার হাজার পর্যটককে অলস সময় পার করতে হয়। ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে পাহাড়ধসের সম্পর্ক রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বহু মানুষ। পাহাড়ধসের মূল কারণ একশ্রেণির প্রভাবশালীর অবৈধভাবে পাহাড় কাটা। এটি বহুল আলোচিত। কোনো দুর্ঘটনার পর বহু পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। দুঃখজনক হলো, এসব পরিকল্পনার বেশিরভাগ কাগজে-কলমেই থেকে যায়। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়; কোনো কোনো পরিবারকে সরতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের পর গরিব মানুষ আবারও পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানেই বসবাস করতে শুরু করে। এতে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে দরিদ্র মানুষ। প্রশ্ন হলো, স্থানীয় প্রভাবশালীদের এসব কর্মকাণ্ড যাদের দেখার কথা, তারা কী করছেন? অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে অবাধে পাহাড় কেটে জনবসতি গড়ে তুলেছে।
পাহাড়ধসের প্রধান কারণ নির্বিচারে পাহাড় কাটা। কিছু মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক নেতাসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাহাড় দখল করে বসতি গড়ে তুলেছেন, এটি বহুল আলোচিত। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায় পাহাড়ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর পাহাড় রক্ষায় সরকারের পক্ষে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি ৩৬ দফা সুপারিশ করেছিল। সে সুপারিশগুলোর দু-একটি নামেমাত্র বাস্তবায়ন হলেও বেশিরভাগই রয়ে গেছে কাগজে-কলমে। ফলে পাহাড়ধস বন্ধ হয়নি। গত প্রায় দেড় দশকে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঘটেছে কয়কশ মানুষের। পাহাড় কাটার পেছনে শুধু দখলদাররাই দায়ী নয়, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নিয়ম না মেনে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পাহাড় কাটা হয়। বাণিজ্যিক কারণে নির্বিচারে গাছ কাটা হয়। ফলে পাহাড় প্রাকৃতিকভাবে ধস প্রতিরোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। মানবসৃষ্ট কারণে যাতে পাহাড়ধসের ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গরিব মানুষ নিরুপায় হয়ে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করে। কাজেই সেসব মানুষের পুনর্বাসনের জন্যও নিতে হবে ব্যবস্থা।
ঊষার আলো-এসএ