পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : পাইকগাছায় রাজাকারের দোয়া অনুষ্ঠান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গত ১৭ ও ২২ ডিসেম্বর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা রাজাকার আফসার সরদারের দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কপিলমুনি জাফর আউলিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসার আলোচিত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি রাজাকার আফসারকে শহিদী মর্যাদার সাথে তুলনা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও অধ্যক্ষ দোয়া অনুষ্ঠান করার কথা স্বীকার করলেও শহিদী মর্যাদার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোড়পাড় সৃষ্টি হয়েছে। অধ্যক্ষকে অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক কপিলমুনি যুদ্ধ হচ্ছে এ এলাকার অন্যতম যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর টানা কয়েকদিনের যুদ্ধ শেষে রাজাকাররা আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়ে থাকে এদিন আত্মসমর্পনকারী দেড়শ’রও অধিক রাজাকারকে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির মাঠে গণআদালত বসিয়ে গণআদালতের রায়ে তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। যাদের মধ্যে ছিল নোয়াকাটি গ্রামের আফসার সরদার। তিনি শীর্ষ স্থানীয় রাজাকার হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। গত ১৭ ডিসেম্বর শনিবার জোহর বাদ এবং ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার জোহর বাদ মৃত আফসার সরদারের বসতবাড়ীতে দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এই দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কপিলমুনি জাফর আউলিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওঃ আব্দুস সাত্তার। একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে একজন রাজাকারের দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং দোয়া অনুষ্ঠানের শহিদী মর্যাদার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোড়পাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কপিলমুনি এলাকার অনেকেই বলেন, মাওলানা আব্দুস সাত্তার একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। নানা অপকর্মের কারণে তাকে কপিলমুনি জামে মসজিদের খতিব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার জানান, রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এমন সময় এ ধরণের কর্মকান্ড কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। এরা সুযোগ পেলে অনেক কিছু করতে পারে। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ শাহাদাৎ হোসেন জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার আফসারকে আটক করার পর তার কাছ থেকে তৎকালীন শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত রিভালভর উদ্ধার করা হয়। সে তৎকালীন সময়ে একজন দায়িত্বশীল রাজাকার ছিল। সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক রাজাকারের দোয়া অনুষ্ঠান করার দুঃসাহস দেখে আমরা অবাক হয়ে গেছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এ ধরণের ঘটনার তীব্রনিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের অপসারণ সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান, ওসি জিয়াউর রহমান।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রাজাকারের দোয়া অনুষ্ঠান করার কোন সুযোগ নাই বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার দোয়া অনুষ্ঠান করার কথা স্বীকার করলেও শহিদী মর্যাদার বিষয়টি অস্বীকার করেন।