ঊষার আলো প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সাবেক সদস্য, খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও পাট-সুতা-বস্ত্রকল সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কিংবদন্তী শ্রমিক নেতা, মার্কসবাদী বর্ষীয়ান রাজনীতিক, কমরেড হাফিজুর রহমান ভূইয়া’র ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি শনিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হবে।
কমরেড হাফিজুর রহমান ভুইয়া খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে এসএসসি এবং ১৯৬০-৬১ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রবেশ এবং ছাত্র অবস্থায় ফুলতলার প্রবীন রাজনীতিবিদ কালিপদ ঘোষের হাত ধরে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে আযমখান কমার্স কলেজ থেকে বি কম এবং ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম পাস করেন। পরবর্তীতে কমরেড নজরুল ইসলামের প্রেরণায় ১৯৬৬-তে শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হয়ে খালিশপুরের প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলে চাকুরিতে যোগদান করেন এবং এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নে বার বার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। এছাড়া আলিম ও ইষ্টার্ণ জুট মিলস মজদুর ইউনিয়নে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বহুবার বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিতে চাইলেও তিনি শ্রমিক আন্দোলনের স্বার্থে পদোন্নতি নেননি, এমনকি ৮০ দশকের প্রথম দিকে ডিজিএম পদে লোভনীয় পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭০ সালের প্রথমদিকে পার্টির সভ্যপদ লাভ করেন। দেশ স্বাধীনের পর লেলিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালে ইউপিপি-তে এবং ১৯৮৫ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির এক অংশের কেন্দ্রীয় সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন, এরপর ‘বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (নজরুল)’ ও ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগ’ এই দুই পর্টির ১৯৮৮ সালে গঠিত ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল একত্রিত হয়ে ১৯৯২ সালে ৩ পার্টির ঐক্য কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির খুলনা জেলা সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য হন। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত সপ্তম পার্টি কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে পলিটব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৫ সাল থেকে আমৃত্যু পার্টির খুলনা জেলা সভাপতি ছিলেন। আন্দোলনমুখর জীবনে রক্ষীবাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতন ও কারাভোগসহ বিভিন্ন সময় ও মেয়াদে ৫ বার কারাভোগ করেন। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন কমিটির সদস্য, পাট-সুতা-বস্ত্রকল সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও খুলনা-যশোর পাট শিল্প সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক, বিল ডাকাতিয়া সংগ্রাম কমিটি, পানি ঠেকাও ফুলতলা বাঁচাও আন্দোলন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান আন্দোলন, খুলনা শিল্প কারখানা রক্ষার ও মুজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন, বিভিন্ন সময় সা¤্রাজ্যবাদ ও সম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন, স্বৈরাচারী-দুঃশাসনের আন্দোলন এবং রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলের শ্রমিক আন্দোলনের রূপকার হিসেবে খালিশপুরসহ দেশব্যাপী আন্দোলনের চালিকা শক্তি হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর হাত ধরে ফুলতলা এম এম কলেজ, ফুলতলা মহিলা ডিগ্রী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই শ্রদ্ধেয় নেতার স্মরণে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেল ৩টায় খুলনা প্রেস ক্লাব ভিআইপি লাউঞ্জে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত স্মরণসভায় সংশ্লিষ্ট সকলকে অংশ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেনÑপার্টির জেলা সভাপতি কমঃ এড. মিনা মিজানুর রহমান, মহানগর সভাপতি কমঃ শেখ মফিদুল ইসলাম, জেলা সাধারণ সম্পাদক কমঃ আনসার আলী মোল্লা, মহানগর সাধারণ সম্পাদক কমঃ এস এম ফারুখ-উল-ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা সভাপতি মনির আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার উদ্দিন দিলু।