UsharAlo logo
শনিবার, ৩রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুয়েটে চান্স পাওয়া দলিত শিক্ষার্থীর পাশে ইউএনও মমতাজ বেগম

koushikkln
আগস্ট ২৩, ২০২২ ১০:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা, খুলনা : বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণে দারিদ্রতাকে বাঁধা হতে দেয়নি দলিত সম্প্রদায়ের মেধাবী শিক্ষার্থী কৃষ্ণপদ রায়। স্বপ্ন পূরণে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতাময়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম। ইউএনও মমতাজ বেগম এর সহযোগিতায় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খুলনা প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেধাবী কৃষ্ণপদ রায়। ইতোমধ্যে তার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু ও ওসি জিয়াউর রহমান।

পাইকগাছা উপজেলার রাড়–লী ইউনিয়নের কাটিপাড়ার জেলে পল্লীর সন্তান। কৃষ্ণপদ রায়ের বাবা শ্রীপদ রায় ও মাতা সুমিত্রা রায়। বাবা কৃষ্ণপদ এক সময় নদী-সাগরে জাল ধরে সংসার চালাতো। বর্তমানে তিনি শারিরীকভাবে কাজ করতে অনেকটাই অক্ষম। শ্রবণ প্রতিবন্ধী বাবা কলা বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছে। মাতা সুমিত্রা রায় মানসিক প্রতিবন্ধী। সংসারের তেমন কিছুই করতে পারেন না তিনি। শ্রীপদ-সুমিত্রা দম্পত্তির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। অভাব অনটনের সংসারে মেয়ে স্বপ্না রায়কে এসএসসি পাশ করার পর বিয়ে দিতে বাধ্য হয় পিতা-মাতা। ছোট ছেলে অমিত রায় অর্থাভাবে ইতোমধ্যে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। এমন দুঃখ-দুদর্শার মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থেকে পিছু হটেনি মেধাবী কৃষ্ণ রায়। সে কাটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি’তে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ এবং রাড়–লী আরকেবিকে হরিশ্চন্দ্র কলেজিয়েট স্কুল থেকে এইচএসসি’তে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে চলতি বছর বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ভর্তি ফরম পূরণ সহ যাতায়াত খরচ না থাকায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শেষমেষ মেধাবী কৃষ্ণ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগমকে অবহিত করলে অনিশ্চিত ফলাফল জেনেও মায়ের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়ে দলিত শিক্ষার্থী কৃষ্ণর পাশে দাঁড়ায় মমতাময়ী ইউএনও মমতাজ বেগম। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সব ব্যবস্থা করেন মমতাজ বেগম। ইউএনও’র সহযোগিতা নিয়ে ২২টি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের গুচ্ছ পরীক্ষা এবং ৩টি প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশনেয় কৃষ্ণ। ৭১ নম্বর পেয়ে ২২টি বিশ^বিদ্যালয়ের যে কোনটিতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। পাশাপাশি প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সিরিয়াল হয় ২৫২৩। এর মধ্যে রাজশাহী প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে মেধাবী কৃষ্ণ। এখন সে খুলনা প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে এখানেও তার অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন ইউএনও মমতাজ বেগম।

 

মেধাবী কৃষ্ণ রায় জানান, প্রতিবন্ধী পিতা-মাতার অভাব অনটনের সংসারে অনেক কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করতে হয়েছে। স্কুল জীবন থেকেই স্বপ্ন ছিল বিশ^বিদ্যালয় পড়বো। স্বপ্ন পূরণের সেই সুযোগ পেয়েছি। তবে মায়ের মতো ইউএনও মহোদয় পাশে এসে না দাঁড়ালে, সহযোগিতার হাত না বাড়ালে হয়তো আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেতো। আমি ইউএনও মমতাজ বেগম এর নিকট চিরকৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে পরিবারের হালধরার পাশাপাশি দেশের জন্য কাজ করতে চাই। তবে এখনো অনেকটা পথ যেতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন অনেকের সহযোগিতা।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, অর্থাভাবে একটি মেধাবী ছেলের সুন্দর ভবিষ্যত এবং স্বপ্ন কখনো নষ্ট হতে পারে না। আমরা যারা সমাজের দায়িত্বশীল জায়গায় রয়েছি সমাজের প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব এবং কর্তব্য রয়েছে। সেই দায়িত্ববোধ থেকে দলিত সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী কৃষ্ণপদ রায়কে বিশ^বিদ্যালয় পড়ার সুযোগ করে দিতে তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আজ সে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এটা জেনে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তবে লক্ষে পৌছানোর জন্য তার অনেক সহযোগিতার প্রয়োজন। বিষয়টি আমি স্থানীয় অনেককেই তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।

সমাজে যারা বিত্তবান রয়েছেন তাদের প্রতি অনুরোধ কৃষ্ণর মতো মেধাবী শিক্ষার্থীরা অর্থাভাবে যাতে ঝরে না যায় এ জন্য আসুন আমরা সবাই মিলে এ ধরণের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায়। সহযোগিতার জন্য বিকাশ নং- ০১৭০৩-৪৭৩৫২৯ (পার্সোনাল)। কৃষ্ণপদ রায় মুদারাবা হিসাব নং- ২০৫০৭৭৭৬৭০৯১৯১৬০৮, ইসলামী ব্যাংক পাইকগাছা শাখা, খুলনা।