UsharAlo logo
সোমবার, ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেসিসির ট্রেড লাইসেন্স শাখায় কোটি টাকা আত্মসাত !

koushikkln
নভেম্বর ২০, ২০২২ ৯:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ( কেসিসি) লাইসেন্স শাখার অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আতœসাতের অভিযোগ অনেক আগের। এসব অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন হয়েছে একাধিকবার। দাখিলকৃত প্রতিবেদন ও হিসাব নিরীক্ষায় বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাতেরও প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তারা সবাই যে যার পদে বহাল তবিয়তে রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি এবার দুদকের জালে আটকা পড়ছেন তারা। অভিযোগ আমলে নিয়ে স¤প্রতি অনুসন্ধান নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক)। ইতোমধ্যে চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট শাখার রেকর্ডপত্রও। যার কারণে শাখা জুড়ে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। তবে দুর্নীতিবাজচক্র অফিস ফাঁকি দিয়ে দুদকে নথিপত্র জমা দেয়া শুরু করেছে।

।। রেকর্ডপত্র চেয়েছে দুদক, দুর্নীতিবাজদের দৌঁড়ঝাপ।।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ট্রেড লাইসেন্স শাখা ক্যাশ শাখা হতে ২০৪টি এম বই গ্রহন করে। ২০৪ টি বইয়ের মধ্যে ১৯৩টি এম বই অডিট টিমের নিকট হস্তান্তর করা হয়। বাকি ১১টি বই জমা দিতে পারেনি লাইসেন্স শাখা। অডিট টিম ১১টি এম বই প্রদানে দু’বার চিঠি দিলেও সাড়া মেলেনি। হারানো বইয়ের মধ্যে রয়েছে লাইনেন্স ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম অপুর ৪টি (বই নং- ৩৩৪, ৩৮১,৩৮২,৪০৫), শেখ শাহেদ হাসানের-২টি (৩৩২ ও ৩৮০), কাজী মঞ্জুরুল আলমের-২টি (৩৬৮ ও ৩৮৩) ও হাবিবুর রহমানের-৩টি (৩৬২, ৩৬৫ ও ৩৭৪)। প্রতিটি বইয়ের বিপরিতে গড়ে ২লাখ ৭০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয় বলে অডিট টিমের হিসেবে উঠে এসেছে। তদন্ত টিমের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, বিগত দিনে তদন্ত করে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দুর্নীতিবাজরা আরো উৎসাহি হচ্ছে।

অন্যদিকে অডিট টিমে নিকট সরবরাহকৃত ১৯৩টি বই যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১৯৩টি বইয়ে চার কোটি ৬২ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ টাকা রাজস্ব আদায় করে লাইসেন্স শাখা। তবে ওই অর্থ বছরে ক্যাশ শাখায় জমা করেছে চার কোটি ৩৯ লাখ ২৭ হাজার ৯২৩ টাকা মাত্র। অর্থ্যাৎ ২৩ লাখ ২৫ হাজার ১৫৮ টাকা কর্পোরেশনের তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে । ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ তদন্ত কমিটির চারটি সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে কর্তৃপক্ষ ২ ও ৩ নাম্বার সুপারিশ বাস্তবায়ন করেছেন। বাস্তবায়নকৃত সুপারিশ দু’টি হলো- দায়ী লাইসেন্স পরিদর্শগণের নিকট হতে আতœসাতকৃত ৩৭ হাজার টাকা আদায় করা হয়। একই সাথে ট্রেড লাইসেন্সের বিপরিতে আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেয়ার নিয়ম চালু করা হয়।

ওই সময় অডিটে উল্লেখ করা হয়, লাইসেন্স পরিদর্শকরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে নির্ধারিত ফির বিনিময়ে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও ইস্যু করে আদায়কৃত অর্থ তহবিলে জমা না করে আতœসাত করেছে। অডিটে আরও প্রতিয়মান হয় ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধানের সঠিক তদারকি ও ক্যাশিয়ার সঞ্জিব সাহা রনির দায়িত্বে অবহেলায় এ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। যার প্রেক্ষিতে দায়ি ব্যক্তিদের নিকট হতে আতœসাতকৃত টাকা আদায়সহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে হিসাব নিরীক্ষায় কেসিসির আদায়কৃত রাজস্বের ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয়া বন্ধ হয়। ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকরা ট্রেড লাইসেন্সের টাকা জমা দেয়া শুরু করেন। বর্তমান শিক্ষা অফিসার ও সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার এসকেএম তাছাদুজ্জামানের একান্ত চেষ্টায় আর মেয়রের সহযোগিতায় ট্রেড লাইসেন্সের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেয়ার নিয়ম চালু হয়। যে নিয়ম এখন চলছে।

খুলনা দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স¤প্রতি খুলনা সিটি করপোরেশনের সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুক হোসেন তালুকদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতির অভিযোগ দাখিল হয়েছে। অভিযোগ সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে লাইসেন্স শাখার রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। চাওয়া রেকর্ডপত্রের মধ্যে রয়েছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স শাখায় দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়। দুটি কমিটি ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর এবং ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করে। দাখিলকৃত প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফটোকপি (গঠিত দুটি তদন্ত কমিটিসহ)। কর্পোরেশনের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ২০৪টি বইয়ের মাধ্যমে কত টাকা লাইসেন্সের রাজস্ব আদায় করা হয়। আদায়কৃত ২০৪টি মুড়ি বইয়ের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ২০৪টি বইয়ের মাধ্যমে কত টাকা তহবিলে জমা প্রদান করা হয় তার বিবরণী (তহবিলে জমা প্রদানের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ)। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে কেসিসির আদায়কৃত রাজস্বের ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাত সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণী (রেকর্ডপত্রসহ)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, লাইসেন্স শাখায় অনিয়ম- দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা একাধিকবার তদন্তে প্রমানিত হলেও অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ছয় বছর আগে ১১টি বই গায়েব করা হয়। ফলে দুর্নীতিবাজরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। তাদের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের অভিমত, ওই বই গুলোর মাধ্যমেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বেশি রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। তারা বলেন, ওই শাখার কোন কোন কর্মচারি বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন। কারো কারো রয়েছে বহুতলা ভবন। তবে কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারি এসব সম্পদ করেছেন বেনামে। কেউ কেউ অফিস শেষেই নগর জুড়ে ছুটে বেড়ান চার চাকার গাড়িতে অথবা দামি মোটর সাইকেলে। খাওয়া দাওয়া করছেন দামী হোটেলে। যা বেতনের সাথে কোন সমন্বয় নেই। কেউ কেউ চলেন বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের মটর সাইকেলে। যাতে করে তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটি করতে সাহস না পায়। তবে মেয়র এসব দুর্নীতিবাজদের ছাড় দিতে নারাজ। তাই তিনি নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লষ্কর তাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অবহিত হলাম। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কেসিসির সচিব মোঃ আজমুল হক বলেন, দুদকের চিঠি অনুযায়ী সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুখ হোসেন তালুকদারসহ যেসব নথি তারা চেয়েছে তা বুঝে দেয়ার জন্য দপ্তরকে অবগত করা হয়েছে। তারা নথি বুঝে দিবে কি না সেটি তাদের ব্যাপার। এছাড়া তদন্ত টিমের সুপারিশ অনুযায়ী দোষীদের শোকজ করা হয়। তারা ১১টি বই গায়েব করে ফেলেছে। কোন বই জমা পড়েছে কি না তা তার জানা নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আগে আরো একটি কাজ রয়েছে। যা প্রক্রিয়াধীন। ওই কাজটি শেষ হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

খুলনা দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. আল- আমিন বলেন, বিষয়টির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। সুতরাং তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে না।
কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুখ হোসেন তালুকদার অভিযোগ বিষয়ে বলেন,“ আমি চোর নই, যে যা খুশি বলে যাবে। পুরানো বিষয় ঘেটে একটি চক্র ফায়দা লুটতে চাইছে। যারা দুর্নীতিবাজ তাদের ব্যাপারে পারেন যদি কিছু করেন। আমি কোন দুর্নীতি করিনি।”