ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী বগুড়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুটিসহ সাতটি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রার্থীরা সামাজিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন।
তবে খালেদা জিয়ার বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। স্থানীয় বিএনপি নেতারা ধরেই নিয়েছেন, আসন দুটিতে জিয়া পরিবারের সদস্যরাই প্রার্থী হবেন। এরপরও কোনো কোনো নেতা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
বগুড়ার দুটি আসনে জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীর শূরা সদস্য ও বগুড়া শহর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে কেন্দ্রীয় জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি গোলাম রব্বানী।
৫ এপ্রিল বগুড়া শহিদ টিটু মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী, সাথি ও সদস্যদের প্রীতি সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এ প্রার্থিতা ঘোষণা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া-৬ (সদর) আসনটি মূলত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রার্থী হওয়ায় এটিকে ভিআইপি আসন বলা হয়ে থাকে। যদিও তিনি অধিকাংশবার সংসদে এ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেননি। প্রতিবার উপনির্বাচন হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৬টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ১০ বার, আওয়ামী লীগ তিনবার, জাতীয় পার্টি একবার, জামায়াতে ইসলামী একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন।
এছাড়া প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দায়িত্বশীল নেতারা নির্বাচন করে থাকেন। তাই এ আসনটিকেও ভিআইপি আসন বলা হয়। যদিও খালেদা জিয়া সংসদে এ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেননি। প্রতিবার উপনির্বাচন হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ১৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ১০ বার, আওয়ামী লীগ দুইবার, জাতীয় পার্টি দুইবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন।
অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে আওয়ামী লীগ, তাদের শরিক জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে। কেউ কেউ গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি ও অন্যরা মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী জেলাজুড়ে পোস্টারিং করেছেন। তবে এসব দলের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সবাই চান খালেদা জিয়া বিগত নির্বাচনের মতো এবারও প্রার্থী হোক। তাই কোনো নেতা এখানে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলতে চান না। এরপরও কোনো কারণে তিনি প্রার্থী না হলে অন্তত চারজন বিএনপির টিকিট চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম। যদিও তারা কেউ প্রার্থিতার ব্যাপারে মুখ খুলছেন না।
একই অবস্থা বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের। সেখানে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব নেতাই চান, তাদের নেত্রী বিগত দিনের মতো এখানে প্রার্থী হোক। কোনো কারণে তিনি প্রার্থী না হলে যেন তার ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপরও জিয়া পরিবারের বাইরে কাউকে প্রার্থী করা হলে যারা টিকিট চাইবেন, তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন।
বগুড়া-৬ আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে বগুড়াবাসীর সঙ্গে প্রথম কাতারে ছিলাম। সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে এলাকার উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রেখেছি। তিনি আশা করেন, ভোটাররা সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করবেন। বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের প্রার্থী কেন্দ্রীয় জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য গোলাম রব্বানী একক প্রার্থী। তিনি আশা করেন বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
সদর আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, বগুড়া সদর আসনটি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। তিনি কোনো কারণে প্রার্থী না হলে এখানে দলীয় মনোনয়ন চাইব। ১৪ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাত বছর পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেছি। বগুড়া পৌরসভার তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। পৌরসভার বর্ধিতকরণসহ নানা উন্নয়ন করেছি। বগুড়া সদর আসনে খালেদা জিয়ার প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছি। আশা করি, আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রার্থী হতে পারলে নির্বাচিত হয়ে বগুড়ার উন্নয়নে তারেক রহমানের সহযোগী হিসাবে কাজ করব।
অপর প্রার্থী বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, তিনি চান খালেদা জিয়া বগুড়া সদর আসনে নির্বাচন করুন। উনি প্রার্থী না হলে বিকল্প চিন্তা করার মতো সময় এখনো আসেনি। সময় হলে তখন এ ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে।
বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু বলেন, এ আসনটি জিয়া পরিবারের। এখানে কে প্রার্থী হবেন বা হবেন না, সেটা তাদের ওপর নির্ভর করে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রার্থী না হয়ে যদি নির্দেশ করেন তাহলে প্রার্থী হব।
খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া আসনে তিনবার উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছি। এলাকার উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছি। অপর প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, এ আসনটি জিয়া পরিবারের। সবাই চাই খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বা তাদের পরিবারের কেউ প্রার্থী হোক। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলাম।
গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান, গাবতলী পৌরসভার মেয়রসহ দীর্ঘ ২২ বছর স্থানীয় সরকারে ছিলাম। বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে ২২৩টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হয়েছি। নির্যাতন ও কারাভোগ করেছি। জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী না হলে এবং আমাকে আদেশ করলে মনোনয়ন চাইব।
তবে স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, এ দুটি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের নিয়ে তারা মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাদের মতে, এসব আসনে খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে অন্য কোনো প্রার্থীর সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। জামায়াত নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা প্রার্থী যিনি হোন না কেন, তারা আসন্ন নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন।
ঊষার আলো-এসএ