মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে আজ (মঙ্গলবার) খুলনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্ল¬ামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। প্রত্যুষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে ৩১বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়।
গল্লামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, কেসিসি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুনু রেজা, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ, পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, পুলিশ সুপার, কেডিএ, শ্রম দপ্তর, আঞ্চলিক তথ্য অফিস (পিআইডি), সিভিল সার্জন দপ্তর, আনসার ভিডিপি, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, সিআইডি, পিবিআই, এপিবিএন, নৌপুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা কারাগার, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, আইনজীবী সমিতি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর, বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রশাসন, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ এবং এর অংগ ও সহযোগি সংগঠন, প্রেসক্লাব, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সকাল আটটায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ। পরে একই স্থানে পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, বাংলাদেশ স্কাউট, রোভার স্কাউট, নৌ-স্কাউট, গার্লস গাইডের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সহযাত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মহান দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মধ্যম আয়ের দেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও এসডিজি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অপ্রতিরোধ্যভাবে এগিয়ে চলছে।
২৬ মার্চ সিনেমা হলসমূহে ও উন্মুক্তস্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন/প্রামাণ্য চলচ্চিত্র/দুর্নীতি বিরোধী তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। দুপুরে হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা ও শিশু পরিবারসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা এবং খুলনা কালেক্টরেট জামে মসজিদে দোয়া ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সকাল থেকে একটা পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে নৌ-বাহিনীর জাহাজ জনসাধারণের দর্শনের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়। শহিদ হাদিস পার্কে মুক্তিযুদ্ধ ভিক্তিক চলচ্চিত্র/প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং খুলনার সকল পার্ক, জাদুঘর, গণহত্যা জাদুঘর শিশুদের জন্য বিনা টিকিটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়।
খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস (পিআইডির) উদ্যোগে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জয়বেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির ও সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহাবুবার রহমান। খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম বন্দ এতে বক্তৃতা করেন । এসময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে খুলনা বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এছাড়াও দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে।