ঊষার আলো রিপোর্ট : অন্ধকার থাকতেই পাসপোর্ট অফিসের গেটের বাইরে লাইন দিতে দেখা যায় শত শত গ্রাহককে। এরপরও দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব গ্রাহক দিনে দিনে ছবি তুলতে পারছে না। খুলনার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অনেক অসুস্থ ও বিদেশযাত্রী গ্রাহকরা জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য ব্যাংকে অতিরিক্ত টাকা জমা দেওয়ার পরও তাদের সিরিয়াল পড়ছে সপ্তাহ খানেক পর। জনবল কম থাকায় নির্দিষ্ট কয়েকটি পাসপোর্টের আবেদন জমা নেওয়ার পর সিরিয়ালে থাকা অন্য গ্রাহকদের ৭ থেকে ১৪ দিন পর ছবি তোলার জন্য সময় দেওয়ার হচ্ছে। এদিকে বর্তমানে অফিসটিতে রোহিঙ্গা শনাক্তকরণও প্রক্রিয়াটি রয়েছে বন্ধ।
সরেজমিন দেখা যায়, অফিসে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অফিসের ভেতর থেকে রোদের মধ্যে রাস্তা পর্যন্ত সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছেন বয়স্ক ও অসুস্থ গ্রাহকরা। এমন অবস্থা নগরীর বয়রার বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের। পাসপোর্ট অফিসের এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। হঠাৎ করে পাসপোর্টের আবেদন বেড়ে গেছে। তবে তাদের সাপোর্ট দেওয়ার মতো জনবল ও জায়গা না থাকায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে এসব সংকট থাকবে না যদি কোনো প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, প্রশাসনের রেফারেন্স থাকে। এছাড়া পাসপোর্টের দালাল সিন্ডিকেট তো রয়েছেই। যারা কৌশলেই গ্রাহকদের এসব সমস্যার সমাধান করে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে।
শুক্র-শনিবার বাদে সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতে বয়রার পাসপোর্ট অফিসের গেটের সামনের পুরাতন যশোর রোড ঘেষেই তিনটি লাইন দেখা যায়। একটি লাইন নতুন পাসপোর্ট আবেদনকারীদের, আরেকটি লাইন ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার লাইন এবং শেষটি পাসপোর্ট ডেলিভারির লাইন। অফিস খোলার পর থেকে গেটে আনসারের তত্ত্বাবধায়নে সব গ্রাহককে প্রবেশ করানো হয়। এরপর শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নতুন গ্রাহকদের অনেকেই ৬-৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ছবি ও ফিঙ্গার দেওয়ার জন্য ৭ অথবা ১৪ দিন পর সিডিউল পান। জনবল কম থাকায় প্রতিদিন ২০০-২৫০ নতুন পাসপোর্ট আবেদনকারীর প্রসেসিং করা হয়। এরমধ্যে যারা জরুরিভিত্তিতে ব্যাংকে অতিরিক্ত টাকা জমা দেন তাদের সময় মেলে সাতদিন পর। যারা সাধারণ পাসপোর্ট ফি জমা দেন তাদের পরবর্তী সময় মেলে ১৪ দিন পর।
ফুলতলা উপজেলার বাসিন্দা মোমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ভোর থেকে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আবেদন ফরম জমা দেওয়ার সময় আমাকে ১৪ দিন পর পুনরায় ছবি ও ফিঙ্গার দিতে আসতে বলা হয়। একদিন গেল সিরিয়াল নিতে, একদিন ছবি ও ফিঙ্গার দিতে এবং আরেকদিন পাসপোর্ট ডেলিভারি। মোট তিনদিন সময় লাগে।
ইকরাম বিশ্বাস নামে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক এক যুবক বলেন, আমি ব্যাংকে অতিরিক্ত ফি (আর্জেন্ট) দিয়ে এসেছি। এরপরও আমাকে সাতদিন পর পুনরায় আসতে বলা হয়েছে। আগে একদিনেই আবেদন জমা, ছবি ও ফিঙ্গার নেওয়া হতো। আরেকদিন ডেলিভারি দিত। যারা চাকরি করেন তাদের ৩দিন সময় পাবে কিভাবে পাসপোর্টের জন্য। যার কারণে বিকল্প পথে ৩-৪ হাজার টাকা বেশি লাগলেও হয়রানি থেকে বাঁচতে চান।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল আল নোমান জানান, পাসপোর্ট করতে এসে গ্রাহকরা সঠিক তথ্য পাচ্ছে না। যার কারণে একাধিকবার আসা লাগছে। অফিস থেকে সঠিক তথ্য দিলে ভোগান্তি কমে যাবে।
খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক একেএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, অফিসে জনবল সংকট রয়েছে প্রায় ৪০ ভাগ। প্রতিদিন শতশত পাসপোর্ট আবেদনকারী আসছেন। তাদের বসা বা দাঁড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যার ফলে গ্রাহকদের বিকল্প তারিখ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের নির্দেশে বর্তমানে রোহিঙ্গা শনাক্তকরণ বন্ধ রয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের কেউ দালালদের সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি রোববার দুপুরে বলেন, জনবলের জন্য হেড অফিসে জানানো হয়েছে। এটা বাড়লে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের কষ্ট কমে যাবে।
ঊষার আলো-এসএ