ঊষার আলো ডেস্ক : খুলনা নগরীর খালিশপুর ১১নং ওয়ার্ডে ত্যাগ অর্থ শক্তি আর জনবল দিয়ে দলকে সমৃদ্ধ করেছে মিনহাজুর রহমান উজ্জল পরিবার। সেই ৬০ দশকের আন্দোলন থেকে শুরু করে তার পরিবারের সদস্যরা আওয়ামীলীগের এহেন কোন আন্দোলন সংগ্রাম নেই তাতে অংশ গ্রহণ করেননি। অথচ আজ সেই পরিবারকে ঠাসা করে রেখেছে একটি মহল। তাদেরকে ১১নং ওয়ার্ড কমিটির পদ পদবি থেকে করা হয়েছে বঞ্চিত। প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে মহল বিশেষ নিজ স্বার্র্থ চরিতার্থ এবং দলকে দুর্বল করার হীনমানসীকতা থেকে এ পরিবারটিকে কোণঠাসা করা হয়েছে বলে দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। দলের স্বার্থে অবিলম্বে এ পরিবার সদস্যদের দলের পদ পদবি দিয়ে মূল্যায়ন করার দাবি তুলেছেন এসব নেতা-কর্মীরা।
ওই পরিবারের অন্যতম কর্ণধর এবং ১১নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মিনহাজুর রহমান উজ্জল। তিনি খালিশপুর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির পাঁচবার নির্বাচিত সভাপতি। তিনি ২০০৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ বাজারের নেতৃত্ব করেন। তিনি ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য ছিলেন। ২০০২ সাল থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে আ’লীগের রাজনীতি শুরু করেন। রাজনৈতিক কারণে তিনি ও তার পরিবার একাধীকবার মামলা, হামলায় শিকার হয়েছেন। প্রতিটি আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এখনও করছেন। তিনটি সংসদ ও তিনটি মেয়র নির্বাচনে তিনি প্লাটিনাম চিত্তবিনোদন কেন্দ্র ও তৈয়েবা মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রের আওয়ামীলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করেন। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের সক্রিয় অংশ গ্রহণে সাবেক কাউন্সিলর মরহুম আবুল কাশেম প্লাটিনাম ২নং গেটে প্রতিষ্ঠা করেন ১১নং ওয়ার্ড কার্যালয়।
ওই কার্যালয় করতে যে ইট, বালু, সিমেন্ট ও টিন লাগে তার বড় অংশ তিনি তার তার পরিবারের সদস্যরা দেন। ২০১১ সালে প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও মেয়র তালুকদার আঃ খালেক এ অফিস উদ্বোধন করেন। আজ সেই কার্যালয়ে কাশেম, উজ্জলের নাম ঠিকানা মুছে ফেলতে একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। ২০১২ সালেল ১৬ নভেম্বর ১১নং ওয়ার্ড আ’লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে তিনি সাঃ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু মহানগর শীর্ষ নেতাদের অনুরোধে তিনি সেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ওই নেতৃবৃন্দ তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, পরের সম্মেলনে তাকে সাঃ সম্পাদক করা হবে। পরে তাকে ১নং যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী ১১নং ওয়ার্ড আ’লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে তিনি এবারও সাঃ সম্পাদক প্রার্থী হন। সম্মেলনে মাত্র ১৩ ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হন। সরদার আলী আহমেদ সাঃ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাঃ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আজ প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে একটি মহল তাকে কমিটির সম্মানজনক কোন পদে না রেখে প্রস্তাবিত কমিটি তৈরী করেছে। তার বাবা মরহুম আঃ সাত্তার হাওলাদার ৬০-এর দশক থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ৮০ দশকে এসে তার বাবা সাত্তার হাওলাদার, বীরমুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক মুন্সী, মতলেব ডাক্তার, আনোয়ার সাহেবসহ কয়েকজন মিলে নিউ মার্কেটে গোলপাতা দিয়ে ১১নং ওয়ার্ড আ’লীগ কার্যালয় গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধু স্ব পরিবারে হত্যার পর তিনি জীবনের ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। তিনি বাজার থেকে ২/১ টাকা চাঁদা তুলে সবাই মিলে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন ওই সময়। এরশাদ-খালেদা বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি আমৃত্যু আ’লীগের সদস্য ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা যান।
উজ্জলের বোন সুরমা বেগম। তিনি প্লাটিনাম ২নং গেটে এনএ-৪২/৮নং বাসার বাসিন্দা আঃ কুদ্দুসের স্ত্রী। প্রতিষ্ঠা মরহুম আবুল কাশেম করলেও তিনি নিজ হাতে ১১নং ওয়ার্ড আ’লীগের কার্যালয় গড়ে তোলেন। তিনি বলেন, তার ঘরের সামনের জায়গা। ওইখানে ইলিয়াস নামের একজন মিল শ্রমিক ব্যাচেলর হিসেবে বসবাস করতো। পরে সফি নামের এক ব্যক্তি ওইখানে কাঠের ব্যবসা শুরু করে। রাতে কাঠফেলার শব্দে এলাকাবাসীর ঘুম নস্ট হতো। স্থানীয় কাউন্সিলর আবুল কাশেমকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি এসে অভিযোগ শুনে সফিকে এলাকা ছেড়ে যেতে বলেন। এমন সময় সুরমা ওই স্পটে ১১নং ওয়ার্ড আ’লীগের কার্যালয় করার প্রস্তাব দেন। উপস্থিত সবাই তার প্রস্তাবে সম্মতি দেন। সে মতে ওই স্পট থেকে সফিকে সরাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় তাদের। তিনি ১১নং ওয়ার্ড আ’লীগের গত সম্মেলনে কাউন্সিলর ছিলেন। এ সম্মেলনে তাকে কাউন্সিলর করা হয়নি। বাবা আমরণ আ’লীগ করে গেছেন। ৮১ সালে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা খুলনার সার্কিট হাউজে আসলে তার বাবাসহ ৭/৮ জনের একটি টিম শেখ হাসিনাকে রূপার নৌকা ও স্বর্ণের বৈঠা উপহার দেন। এলাকায় তারা আ’লীগ পরিবার হিসেবে চিহ্নিত। তাদের পরিবারের সবাই এ দলের সাথে ওৎপরতভাবে জড়িত। তারপরও তাদের ত্যাগ, সময়, অর্থ, জনবল সব কিছুই দলে পিছনে দেয়া হলেও তাদের কোণঠাসা করে রেখেছে একটি মহল বলে তিনি অভিযোগ করেন। ১১নং ওয়ার্ড প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য সেলিম মোল্লা বলেন, তার ভাই কাশেম মোল্লা ১১নং ওয়ার্ড অফিসের জায়গা বরাদ্দ এনে দেন। প্রতিষ্ঠা করেন অফিস। সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে উজ্জল পরিবার। কিন্তু আজ এ পরিবারকে কোনঠাসা করে দলের ক্ষতি করছে মহল বিশেষ। এখনও উজ্জলের লোক না আসলে ওয়ার্ডের মিছিল বড় হয় না। সবাই উজ্জলের দিকে চেয়ে থাকে। তাকে মূল্যায়ণ করলে দল উপকৃত হবে। ত্যাগী নেতা-কর্মীরা আরো উৎসাহিত হবে। ১১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর শরীফ বলেন, দল করতে গিয়ে উজ্জলের সাথে কতবার কোপ খেয়েছি। দলের জন্য উজ্জল পরিবারের ত্যাগ ভূলবার নয়। তারপর তাদের কোনঠাসা করে মহল বিষেশ স্বার্থ হাসিল করছে বলে তিনি মনে করেন। অবিলম্বে তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করার দাবি জানান এই নেতা। ১১নং ওয়ার্ড আ’লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন শ্রমিক নেতা শাহানা শারমীন। তিনি মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে জাকির হোসেনের কাছে পরাজিত হন। অথচ প্রস্তাবিত কমিটিতে তাকে সম্মানজনক পদ দেয়া হয়নি। একই ভাবে মিনহাজুর রহমান উজ্জলকে কোনঠাসা করা হয়েছে। প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে কিছু লোক দলের ক্ষতি করতে উজ্জলকে অবমূল্যায়ন করেছে। উজ্জল দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। ত্যাগী কর্মী হিসেবে তাকে মূল্যায়ন করা উচিত। এ ব্যাপারে তিনি প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও মেয়র তালুকদার আঃ খালেকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই কথা বলেন আ’লীগ নেতা আবু শেখ। তিনি বলেন, উল্লেখিত দু’ নেতা ত্যাগী নেতা। তাঁরা দু’জন ত্যাগের বিষয়টি ভালভাবে মূল্যায়ন করবেন বলে তার বিশ্বাস।
খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আলহাজ্ব মনিরুল ইসলাম বাশার জানান, প্রথমে আমরা কমিটি যাচাই-বাছাই করব। যাচাই-বাছাই করার পরেই যাদেরকে যোগ্য বলে মনে করব সেই সকল নেতৃবৃন্দকেই ওয়ার্ড কমিটির পদ পদবী দেয়া হবে। ত্যাগী এবং রাজপথের নেতাই কর্মীদের দিয়েই ১১নং ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে এবং থানার নেতৃবৃন্দ যাকে পছন্দ মনে করেন তার মধ্যে থেকেই নেতৃত্ব তৈরি হবে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা নেতা কর্মীদের এখানে কমিটিতে কোন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের সাথে সম্পৃক্ত যে সকল পরিবার তাদেরকে পদ পদবি দেইনি। অন্যান্য ওয়ার্ডে যারা ভাইটাল দুটি পদে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে সদস্য হিসেবেই কমিটিতে রাখা হয়েছে। তদরুপ এ ওয়ার্ডে করা হয়েছে।
১১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার আলী আহমদ জানান, আমি দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করেছি। আমি ছাত্রলীগ করেছি, যুবলীগ করেছি, আমি সকল রাজপথের নেতাকর্মীদের এবং ত্যাগী নেতাদের আমি চিনি। ৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, সাবেক ছাত্রলীগ সাবেক যুবলীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে থেকেই আমি কমিটিতে পদ পদবীর চিন্তা করেছি। সর্বশেষ আমার খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে তারা করবে আমিও সেভাবেই মেনে নিব বলে জানান। দলের ত্যাগীরাই পদ পদবীতে স্থান পাবেন, হাইব্রিড দলে কোন স্থান দেয়া হবে না বলে তিনি জানান।
(ঊষার আলো-এফএসপি)