UsharAlo logo
সোমবার, ১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনায় মাস্ক ব্যবহারে আগ্রহ কম

koushikkln
জুলাই ২, ২০২২ ১১:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আশিকুর রহমান : করোনা ভাইরাস ওমিক্রনের প্রকোপ গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে হ্রাস পায়। করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ ওমিক্রনে আক্রান্তের হার সারা দেশসহ খুলনাতেও হ্রাস পাওয়ার কারনে সর্বত্র স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করতে শুরু করে। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিভাগ দ্রুত সময়ের প্রাপ্ত বয়স্কসহ শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় আনার দরুন ক্রমশঃই হ্রাস পায় করোনা সংক্রমণ, বিরাজ করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি।

করোনা সংক্রমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় দীর্ঘদিন পর মানুষ দীর্ঘ ঘরবন্দি থাকার পর বাইরে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল শুরু করে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করে সকল নিষেধাজ্ঞা একে একে তুলে দেয়া হয়, খুলে যায় স্কুল- কলেজ, পর্যটন কেন্দ্র, পার্ক-বিনোদন কেন্দ্র, অনুমতি মেলে সকল সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি করবার।

তবে সম্প্রতি দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা শনাক্তের হার, সমগ্র দেশের মতো খুলনা বিভাগেও বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমন উর্ধ্বমুখি হওয়া সত্ত্বেও জনসাধারনের মধ্যে মাস্ক পরিধানে অনীহা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে শিথিলতা বিরাজ করার দরুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতিমধ্যে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ৬টি নির্দেশনা আলোপ করছে। যা (১) স্বাস্থ্যবিধি চলার জন্য জনসাধারনকে উদ্বুদ্ধ করতে সব গনমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে (২) সবক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করা (৩) ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানগুলোতে (মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) স্থানে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। (৪) জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোভিড-১৯ এর উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড টেস্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে (৫) দোকান, শপিংমল, হোটেল-রেস্টুরেন্টে সকলকে বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে (৬) স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুম্মার নামাজের খুতবায় ইমামগন সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন।

করোনা সংক্রমণ উর্ধ্বমুখি হওয়ায় সরকার নির্দেশিত এই ৬টি নির্দেশনা আরোপিত হলেও খুলনা সকল স্থানেই এই নির্দেশনা মানার কোনরূপ বালাই দেখা যায়নি। খুলনার সর্বত্র জুড়ে চলছে নিদের্শনার বিপরীতে ইচ্ছা-স্বাধীন চলাচলের, বিশেষ করে মাস্কবিহিন চলাচলের মহাৎসব। অবাদে ছুটছে সবাই, মানছেনা কেউ স্বাস্থ্যবিধি।

সরেজমিনে, নগরীর ডাকবাংলা, শিববাড়ী, ফেরীঘাট, নিউমার্কেট, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, হেলাতলা (ক্লে রোড), আহসান আহমেদ রোড, হাজী মুহসীন রোড, ফারাজীপাড়া, সেন্ট্রাল রোড, শামসুদ্দিন আহম্মেদ রোড, রয়েল মোড়, ডালমিল, ময়লাপোতা, সাতরাস্তার মোড়, গল্লামারী, নিরালা, জিরোপয়েন্ট, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেলিগেট, মানিকতলা, ফুলবাড়ীগেট, শিরোমনি, ফুলতলা, রূপসা, খুলনা-যশোর মহাসড়ক, সড়ক, যানবহন চলাচলসহ স্থানীয় এলাকাগুলোর পাড়া-মহল্লায়, রাস্তাঘাটে, হাটে-বাজারে সকলকে ইচ্ছাস্বাধীন চলাচল করতে দেখা গেছে, ব্যবহার করছে না মাস্ক আর মানছেনা স্বাস্থ্যবিধির উপর আরোপিত কোনো নির্দেশনা।

ফুলবাড়ীগেট বাসষ্ট্যান্ডের ভ্যান চালক রফিকুল মুখে মাস্ক ছাড়াই দাড়িয়ে ছিলেন। কেন মাস্ক ব্যবহার করছেন না এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি উত্তেজিত হয়ে জানান, বাজারে জিনিসের যে দাম, পেট চালাতে হিমশিম খাচ্ছি আর কোথায় করোনা। আল্লাহ যেভাবে মৃত্যু লেখেছে সেভাবে মৃত্যু হবে, এতে আমি ভয় করিনা। ঘরে চাল না থাকলে কেউ চাল কিনে দেয় না। নিজে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পরিবারের জন্য বাজার করতে হয়, আর এখন আবার নতুন খবর করোনা! এ খবর কয়েক বছর ধরেই শুনে আসছি। আমার করোনার টিকা নেওয়া শেষ।

চা বিক্রেতা জামাল জানান, বর্ষাকাল চলতেও বেশ ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। সারাক্ষন গ্যাসের চুলার পাশে দাড়িয়ে চা বানায়, বেশ গরম লাগে। সারাক্ষণ মুখে মাস্ক পড়ে থাকতে শরীরের মধ্যে অস্বস্তি লাগে। তাই মাস্ক ব্যবহার করা হয় না। বাধ্যতা মূলক মাস্ক ব্যবহারের কথা বলতেই তিনি জানান, যেহেতু করোনা সংক্রমন বৃদ্ধির কারনে সরকার মাস্ক ব্যবহার করার কথা বলেছে, সেহেতু আমি নিজে পাশাপাশি ক্রেতাদের ও মাস্ক ব্যবহার করার বলবো।

গ্রীন নারী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, নারী উদ্যোক্তা অধ্যাপক ছাকেরা বানু জানান, যেহেতু দেশে অতিমারি মহামারি করোনা ভাইরাসের শনাক্তের হার আবার বাড়ছে তাই সকলকে সরকার নির্দেশিত নিয়মের মধ্যে চলতে হবে, বিশেষ করে বাধ্যতামুলক মাস্ক ব্যবহার করাসহ সামাজিক দূরত্ব, জনসমাগম এগিয়ে চলতে হবে। সকলকে পূর্বের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজের এবং নিজের পরিবারের সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধির আলোকে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত বলে আমি মনে করি।

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যেহেতু সম্প্রতি সময়ে সারা দেশসহ খুলনা আবার করোনা সংক্রমণ আবার উর্ধ্বমুখি হতে শুরু করেছে, তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কমিটির সাথে মতবিনিময় শেষে করোনা প্রতিরোধে কাজ শুরু করবে জেলা প্রশাসন।