UsharAlo logo
বুধবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনা সওজ’র সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীর বাস্তবায়নকৃত কাজ অনুসন্ধানে দুদক

pial
অক্টোবর ৩, ২০২২ ২:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

খুলনা প্রতিনিধি : খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাসের আমলে বাস্তবায়ন হওয়া বেশকিছু কাজ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক জানায়- অনুসন্ধানের বিষয় গুলো হচ্ছে তাপসী দাস খুলনায় নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালীন সময়ে ডিপিএম পদ্ধতিতে যে কাজ বাস্তবায়ন করেছেন এবং পিএমপি বরাদ্দের কাজের তালিকায় ঠিকাদাররা কী কী দরে কাজ করেছেন তা খতিয়ে দেখা। খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়কের শহর অংশে ( পাওয়ার হাউজ মোড় থেকে ময়লাপোতা মোড় পর্যন্ত) রিজিট পেইভমেন্ট কাজের টেন্ডার ডকুমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা। এছাড়া খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক পুননির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা।

এসব বিষয় নতুন করে অনুসন্ধানের কারণ হিসেবে সূত্রটি জানিয়েছে-ওই সময় পছন্দের ব্যক্তিকে কাজ দিতে অনিয়মের আশ্রয় এবং বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে-নির্মাণের এক বছরের মধ্যে বেহাল হয়ে পড়ে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বিটুমিন উঠে গেছে। কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। মাঝেমধ্যে পিচ সরে গিয়ে দলা পাকিয়ে তৈরি হয় উঁচু ঢিবি। এ ছাড়া অনেক জায়গায় সড়কও দেবে গেছে। সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর থেকে ঢাকা ও মোংলা বন্দরে যাতায়াত দ্রুত ও সহজ করতে সড়কটি নির্মাণে প্রকল্প নেয়া হয়।

সওজ জানিয়েছে, প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০২০ সালের জুনে। এ প্রকল্পের আওতায় খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে আঠারো মাইল পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য ১৪০ কোটি টাকা এবং আঠারো মাইল থেকে সাতীরা পর্যন্ত প্রশস্ত করার জন্য ১২৫ কোটি টাকা খরচ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয় ২৬৫ কোটি টাকা। এত টাকা ব্যয়ে নির্মানের পর সড়কটিতে ভাঙাচোরা হয়ে পড়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জনমনে। বার বার সংস্কারেও সড়কটি ভালো রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
খুলনা-আঠারোমাইল-সাতক্ষীরা সড়ক প্রশস্ত করার কাজ বাস্তবায়ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। জিরোপয়েন্ট-আঠারো মাইল পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ করেছে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। সেই সময় নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন তাপসী দাস।

অন্যদিকে ২০১৯ সালে জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিতে অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ তোলেন খুলনার ঠিকাদাররা। দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা ফিরোজ হোসেন ওই সময় সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন – নগরঘাটা ফেরিঘাটের ইজারা নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাস পছন্দের ব্যক্তিকে কাজ পাইয়ে দিতে মারিয়া হয়ে উঠেন।

খুলনা মহানগরীর পাওয়ার হাউজমোড়-ময়লাপোতা সড়কে নিম্নমানের নির্মাণ কাজে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় বাসিন্দা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাধারণ ঠিকাদাররা অভিযোগে ছিল, প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র ৭০০ মিটার সড়কটি আরসিসি ঢালাই দিয়ে তৈরি হয়। যা’ ৫০ বছরের বেশি টেকসই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণ কাজের দুই সপ্তাহের মধ্যে সড়কে ঢালাইয়ের ওপরের অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম গঠন করা হয়।

জানা যায়- নিম্নমানের কাজ ধামাচাপা দিকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতের আঁধারে সড়কটিতে বিটুমিন দিয়ে নতুনভাবে ঢালাই দেওয়া হয়। এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়।
এর আগে ২০১২ সালে বটিয়াঘাটার শোলমারী ব্রিজ নির্মাণে গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্লাব বসে গেলে তাপসী দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে তাকে পদায়ন দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী করা হয়। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ মামলায় তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সহকারি পরিচালক বিজন কুমার রায় তদন্ত শুরু হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন-তদন্তাধিন বিষয় নিয়ে আমরা কোন কিছু বলি না।
তবে এ ব্যাপারে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাসের সাথে তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

(ঊষার আলো-এফএসপি)