আগামী বছরের মধ্যে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি, পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস হচ্ছে। ফলে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। এ কারণে মূল্যস্ফীতির হারও নিম্নমুখী হবে বলে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে এতে কিছু উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। আবার কিছু দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধার মুখে পড়বে। কারণ যেসব দেশ রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় ও পর্যটকদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ওই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছু বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে বাংলাদেশে কিছু পণ্যের উৎপাদন কমতে পারে।
গত বুধবার রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি আউটলুক এপ্রিল ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম ২০২৫ সালে ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ৫ শতাংশ কমতে পারে। যা ২০২০ সালের পর এই প্রথম সবচেয়ে বেশি কমছে। পণ্যের দাম কমার ক্ষেত্রে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকলেও মহামারি শুরুর আগের তুলনায় দাম এখনো বেশি থাকছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমার কারণে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি আমদানি নির্ভর। বাংলাদেশ বিদেশ থেকে যেসব বেশি মাত্রায় আমদানি করে সেগুলোর দাম কমছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেল, গ্যাস, সার, শিল্পের কাঁচামাল। এসব পণ্যের দাম কমলেও দেশের আমদানি ব্যয়ের ওপর বাড়তি চাপ কমে যাবে। ফলে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপও কমবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, করোনার সময়, পরবর্তীতে বৈশ্বিক মন্দার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। এখন সেসব বাধা কমে বাজারে জ্বালানির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে দাম কমছে। ইতোমধ্যে জ্বালানির দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এতে স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিও কমে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কর্তৃক পালটা শুল্ক আরোপের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়, সৃষ্ট বাণিজ্য উত্তেজনা, সংঘাত, ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং ঘন ঘন আবহাওয়া সম্পর্কিত পরিবর্তনের কারণে কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো নিজেদের রক্ষা করতে তিনটি পদক্ষেপ নিতে হবে-প্রথমত: আর্থিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা; দ্বিতীয়ত: বেসরকারি পুঁজি আকর্ষণ করার জন্য আরও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা; তৃতীয়ত : যেখানেই সুযোগ আছে সেখানে বাণিজ্য উদারীকরণ করা।
এতে আরও বলা হয়, ২০২৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম কমছে, যা বিশ্বজুড়ে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করেছে। ২০২২ সালে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে জ্বালানির দাম হ্রাস মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করেছে। জ্বালানির দাম হ্রাসের এই প্রবণতা এই বছর বাড়তে পারে। ২০২৬ সালে জ্বালানির দাম ১৭ শতাংশ কমে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল কয়লার দামও হ্রাস পাচ্ছে। আগামী বছর এর দাম আরও কমতে পারে।
জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়, আগে পরিবহণ খাতে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হতো। এখন পরিণত খাতে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমছে। এদিকে তেল উত্তোলনকারী দেশগুলো এর উৎপাদন বাড়িয়েছে। ফলে বাজারে এর সরবরাহ বেড়ে দাম কমছে। তেলের দাম কমার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রগতি মন্থর হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছরের মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্য আরও হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে চলতি ২০২৫ সালে ৭ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১ শতাংশ হ্রাস পাবে। তারপরও জাতিসংঘ আশঙ্কা করেছে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও সংঘাতপূর্ণ কিছু অঞ্চলে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এই বছর আরও বাড়বে। ফলে ২২টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনীতির দেশের ১৭ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত হবে।
ঊষার আলো-এসএ