UsharAlo logo
শুক্রবার, ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় ফের ইসরাইলি তাণ্ডব

ঊষার আলো রিপোর্ট
মার্চ ২০, ২০২৫ ৪:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে মঙ্গলবার ভোররাতে ঘুমন্ত গাজাবাসীর ওপর আবারও বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। পবিত্র রমজান মাসে সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল ধ্বংসস্তূপের ওপর বসবাসরত গাজাবাসী। যেহেতু দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলমান ছিল, তাই নিরীহ ফিলিস্তিনিরা আকস্মিক হামলার ভয়ে তেমন ভীত ছিল না। ধ্বংসস্তূপের বুকে বসে ঘরবাড়ি, স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি ভুলে জীবনকে নতুন করে গড়ে তোলার সংগ্রামে যখন জড়াচ্ছিল এ ভূখণ্ডের মানুষ, তখন ‘মানবতা’ শব্দটিকে লাথি মেরে শয়তানের স্বরূপ প্রকাশ করে বিশ্বকে দেখালো ইসরাইল। কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ছাড়াই গাজার বেইত লাহিয়া, রাফা, নুসেইরাত ও আল-মাওয়াসি এলাকায় ইসরাইলের ন্যক্কারজনক বোমাবর্ষণে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঝরে গেল ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণ। অর্ধসহস্রাধিক আহত ছাড়াও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে অগণিত মানুষ। উদ্ধারের ব্যর্থ প্রচেষ্টার মাঝে হতাহতের এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।

গত ১৯ জানুয়ারি ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে গাজায় হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইল। অন্যদিকে, বরাবরের মতো কথার বরখেলাপ করে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হুংকার ছেড়েছেন এই বলে যে, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে আবার যুদ্ধ শুরু করেছে তার দেশ, এটা কেবল শুরু। কাজেই এমন ভয়াবহ হামলার পর যুদ্ধবিরতির আলোচনার পরিণতি কী হবে, তা বোঝাই যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘনে এ অঞ্চলে বরং পরিস্থিতি বিপজ্জনক রূপ নেওয়ার আশঙ্কাই তৈরি হলো। যদিও হামাসের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, হামলাও চলবে, চলবে আলোচনাও।

ফিলিস্তিনের ওপর নেতানিয়াহু বাহিনীর এ হামলা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে যেদিকেই নিয়ে যাক, খোদ ইসরাইলিরাও একে ভালো চোখে দেখছে না। যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গাজায় বোমা হামলার প্রতিবাদে এরই মধ্যে ফুঁসে উঠেছে ইসরাইলের মানুষ। এ হামলার মধ্য দিয়ে জিম্মিদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলায় ক্ষোভ জানাচ্ছেন তারা। খোদ ইসরাইলিদের মধ্যে জেগে ওঠা এ ক্ষোভ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে পুরো বিশ্বে। মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন গাজায় হামলার তীব্র নিন্দা জানাতে শুরু করেছেন। বস্তুত, প্রায় হাতছাড়া ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে গিয়ে যে মরণ খেলায় মেতেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী, তা এ অঞ্চলের ভাগ্যকে কোথায় নিয়ে ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ইসরাইলের এ হামলা ইরান, মিসর, তুরস্কসহ মুসলিম বিশ্বকেই শুধু হতবাক করেনি, মানবতাবাদী সব মানুষকেই নাড়া দিয়েছে।

আমরা মনে করি, এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলিম বিশ্বের এক হওয়ার বিকল্প নেই। আলোচনার টেবিলে চুক্তি স্বাক্ষর করলেই শুধু হবে না, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুপক্ষই যেন আন্তরিক থাকে, তা নিশ্চিত করার বিষয়েও মধ্যস্থতাকারীদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। গাজায় রক্ত ঝরেছে অনেক, পুরোনো রক্তের দাগ না শুকাতেই দখলদার ইসরাইল নতুন করে যে রক্তপাত ঘটালো, তা ইতিহাসে আরও এক কলঙ্কময় অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হবে। এ পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে গাজায় শান্তি ফেরাতে বিশ্বনেতারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন, এটাই প্রত্যাশা।

ঊষার আলো-এসএ