শেখ বদরউদ্দিন (ফুলবাড়ীগেট) : ঈদের ছুটিতে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের ঢল। অঝোর ধারার বৃষ্টি ঈদ আনন্দে কিছুটা বাগড়া দিলেও সবাইকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বাহারি পোশাক পরা নানান বয়সি মানুষের মুখে ছিল খুশির ঝিলিক।
বড়ো-ছোটো সব বয়সি মানুষের আড্ডা আর মিলনমেলায় বুঝিয়ে দেয়, বৃষ্টি কোনোভাবেই ম্লান করতে পারেনি ঈদের আনন্দ। বিশেষ করে যেসব পরিবারে ছোটো শিশু রয়েছে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটছেন গিলাতলা জাহানাবাদ বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও জাহানাবাদ এ্যাডভেজ্ঞার রেইজ শিশুপার্কে ।
ঈদের ছুটিতে পরিবার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। প্রতিকুল আবহাওয়া উপেক্ষা করে গিলাতলা জাহানাবাদ বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও জাহানাবাদ এ্যাডভেজ্ঞার রেইজ শিশুপার্কে ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছেন নগরবাসী। প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়কে আরও মধুর করে তুলতে বাম্পার কার, সোনার বাংলা ট্রেন, খুলনা আইস সহ বিভিন্ন রাইডে উঠতে শিশুদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গিলাতলা চিড়িয়াখানায় স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসা কামরুল হাসান বলেন, ঈদের ছুটিকে নিজেদের মতো করে কাটাতে ঘুরতে বের হয়েছি। শিশুপার্কে শিশুদের আনাগোনা বেশি থাকলেও বড়রাও শিশুদের সঙ্গে মেতেছিলেন আনন্দে। বিভিন্ন রাইডে উঠতে সারিবদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের।
মেয়ে নাগরদোলায় ওঠার বায়না ধরায় টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কল্পনা বেগমকে। তিনি বলেন, অন্য সময় ব্যস্ত থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে তেমন একটা সময় কাটানো হয় না। ঈদের ছুটিতে ওদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। রাইডগুলোতে উঠে ওরা ভীষণ মজা পাচ্ছে। ঈদের দিন দুপুর থেকেই কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে চিড়িয়াখানা।
বাবা-মার হাত ধরে বেড়াতে এসেছিল সাত বছরের তামিম। চিড়িয়াখানা ঘুরে কেমন লাগল জানতে চাইলে সে বলে, বাবার কাছে অনেকদিন আগে বাঘ দেখতে চেয়েছিলাম। ঈদের ছুটিতে তাই বাবার সঙ্গে বাঘ, বানরসহ আরও অনেক পাখি ঈদের আগেই বিনোদন কেন্দ্রগুলো বাহারি সাজে সাজানো হয়।
গিলাতলা জাহানাবাদ এ্যাডভেজ্ঞার রেইজ শিশুপার্কে মানুষের উচ্ছ্বাস মুখর উপস্থিতি প্রমাণ করে মানুষ এখন বিগত দিনের চেয়ে অনেক নিরাপদ। নাতি-নাতনিদের নিয়ে ঘুরতে আসা ব্যাংকার আঃ হক বলেন, সকালে চার নাতি-নাতনিকে নিয়ে বেরিয়েছি। চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক ঘুরে এসে খুব ভালো লাগছে। ফুলতলার পায়গ্রাম কসবা থেকে ঘুরতে আসা শিশু মারিয়া তার মা-বাবা ও দাদির সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন। ১০ বছর বয়সি মারিয়া বলে, আমার খুব ভালো লাগে জীবজন্তু দেখতে। এসব বইয়ে দেখি, সেগুলোকে যখন সামনে দেখতে পাই তখন খুব ভালো লাগে। মারিয়ার বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, পাঠ্যপুস্তকের প্রত্যেকটি প্রাণীই আমরা চাইলে শিশুদের বাস্তবে দেখিয়ে চেনাতে পারি। কিন্তু আমরা সময়ের কারণে শিশুদের আনতে পারি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। তবে ঈদের সময় ভিড় বেশি থাকলেও ভালোই লাগছে। সব বয়সি শিশু এখানে এসেছে। শিশুরা চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেই ছুটেছে জিরাফ, সিংহ, বাঘ, চিতা বাঘ, হরিণ আর বানরের খাঁচার সামনে। শিশু ও তাদের অভিভাবকদের ভিড়ে মুখর চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গণ।
ঈদের দিন বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ৮টা থেকেই চিড়িয়াখানা ও জাহানাবাদ এ্যাডভেজ্ঞার রেইজ শিশুপাকে নানা বয়সি দর্শনার্থীর ঢল নামে। দুপুর গড়াতে এর সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকে অন্য সময়ের চেয়ে পরিবেশটা অন্যরকম। গিলাতলা জাহানাবাদ বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও জাহানাবাদ এ্যাডভেজ্ঞার রেইজ শিশুপার্কে সব কিছু মিলিয়ে ঈদের দিনটি আনন্দ-উৎসবমুখরভাবে কেটেছে । টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে দেখা যায় দিঘলিয়ার বারাকপুর থেকে আসা তানিয়া আক্তার ও তার স্বামী সাইফুল ইসলামকে। তারা দুই শিশুকে নিয়ে এসেছেন জাহানাবাদ এ্যাডভেজ্ঞার রেইজ শিশুপার্কে। তানিয়া আক্তার বলেন, বাচ্চার বায়না মেটাতে আমাদের আসতে হয়েছে এখানে। তবে এতো ভিড় হবে জানা ছিল না। তবে ভালোই লাগছে।
জাহানাবাদ এ্যাডভেজ্ঞার রেইজ শিশু পার্ক এর ব্যাবস্থাপক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টু বলেন আশাকরি আগামী কয়েকদিন গিলাতলা বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় অব্যাহত থাকবে । ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে এসব বিনোদন কেন্দ্র পরিণত হয় লোকারণ্যে। এছাড়া রাইডারগুলো বিশেষ আকর্ষণ ছিল শিশুদের।
(ঊষার আলো-এফএসপি)