ঊষার আলো রিপোর্ট: ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর কাছে পরিচিত করেছে মাতৃভাষাপ্রেমী এক জাতি হিসেবে। সময়ের পরিক্রমায় এ ভাষা আন্দোলন হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সাহস ও শক্তির প্রেরণা।কিন্তু তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলার চেয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও চাকরির বাজারসহ বিভিন্ন স্তরে ইংরেজির চাহিদা বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে মোট বিভাগ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে ১৬টি। যেখানে বাংলা সহ ৭টি ভাষা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। খাতা-কলমে ১ নম্বরে বাংলা বিভাগকে রাখা হলেও চাহিদা বা শিক্ষার্থীদের আগ্রহের জায়গায় এগিয়ে ইংরেজি। যদিও সেশনজটের কারণে সবসময়ই আলোচনায় থাকে চবির ইংরেজি বিভাগ। তবে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের আসন সংখ্যা সমান, ১২৮টি। এ ছাড়া কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে রয়েছে আরও ৪টি বিদেশি ভাষার বিভাগ- ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, পালি, সংস্কৃত ও আরবি সাহিত্য বিভাগ।
পাঁচটি বিদেশি ভাষা বিভাগে রয়েছে ৪৯২ আসন। সেই হিসেবে বর্তমানে এই ৫ বিভাগে অধ্যয়নরত ২ হাজার ৪৬০ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ৪৬টি এবং বাংলা বিভাগে ১২৮টি আসন রয়েছে। বর্তমানে এ দুই বিভাগে ৫ বর্ষে ৮৭০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ভাষা ও সাহিত্য সংশ্লিষ্ট এই ৭টি বিভাগে ৬৬৬টি আসন ও ২ হাজার ৮১৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
বাংলা বিভাগে ১২৮ আসন, ইংরেজি বিভাগে ১২৮, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ৫৫, পালি বিভাগে ৯৫ আসন, সংস্কৃত বিভাগে ৭৭ আসন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রামে রয়েছে ৪৬ আসন এবং আরবি বিভাগে সর্বোচ্চ ১৩৭ আসন।
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে রয়েছে ৮টি ভাষার কোর্স- ইংরেজি, বাংলা, আরবি, ফারসি, চাইনিজ, ফ্রেঞ্চ, জার্মানি ও জাপানিজ। ৮টি কোর্সের প্রতিটিতে রয়েছে ১০০টি আসন। প্রতিবছরই এ কোর্সগুলোতে ভর্তি হয় ৮০০ শিক্ষার্থী। যেখানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ইংরেজি কোর্সের। প্রতিবছর ইংরেজি কোর্সের ১০০ আসনের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। যা অন্য কোর্সগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
তবে কিছুক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজির বৈষম্য দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ করে পরীক্ষার খাতায় একই প্রশ্নের উত্তর বাংলায় লিখে কেউ নম্বর পাচ্ছে কম। আবার একই উত্তর ইংরেজিতে লিখলে দেওয়া হচ্ছে বেশি নম্বর। অথচ বাংলা-ইংরেজি উভয় পদ্ধতিতে পরীক্ষায় লেখার নিয়ম রাখা হয়েছে সমাজবিজ্ঞানসহ কয়েকটি অনুষদে।
বাংলা ও ইংরেজির পরেই ভাষা ও সাহিত্য বিভাগগুলোতে এগিয়ে রয়েছে আরবি বিভাগ। আসনের দিক থেকে সবার উপরে আরবি বিভাগ। ১৩৭ আসনের এ বিভাগে বর্তমানে পাঁচ বর্ষে ৬৮৫ জন পড়ছেন। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের চাহিদার ১ নম্বরে থাকে এ বিভাগ।
পালি ও সংস্কৃত- এ দুই বিভাগেও ফাঁকা থাকে না আসন। এর মধ্যে পালি বিভাগে ৯৫টি আসনের বেশির ভাগই বৌদ্ধ শিক্ষার্থী। তবে সংস্কৃত বিভাগে ৭৭টি আসনে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম সবধরনের শিক্ষার্থীই ভর্তি হন।
এরপরেই আছে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ- বর্তমানে দেশের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এ বিভাগ। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ফারসি বিভাগ। চবিতে এ বিভাগে আসন রয়েছে ৫৫টি। তবে বিভাগের শিক্ষকরা বলছেন, এ বিভাগের চাহিদার তুলনায় আসন সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বর্তমানে আমাদের যে ৮টি কোর্স রয়েছে, সব কোর্সেই প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। তবে তুলনামূলক ইংরেজি কোর্সে চাহিদা বেশি। এছাড়া অন্য কোর্সগুলোও পিছিয়ে নেই। তবে আমাদের বাংলা কোর্সটি শুধু বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে। একবছরের সার্টিফিকেট কোর্সের পর শিক্ষার্থীরা চাইলে আরেক বছরে ডিপ্লোমা শেষ করতে পারে। এ ছাড়া আমাদের প্রোগ্রামে রয়েছে ৪৬টি আসন।
সংস্কৃত বিভাগের সভাপতি রাজপতি দাশ বলেন, সংস্কৃত বিভাগে হিন্দু এবং মুসলিম শিক্ষার্থী প্রায় সমান। তবে পালি বিভাগে বৌদ্ধ শিক্ষার্থীরা সাধারণত বেশি থাকে। বিভিন্ন সেক্টরে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। যদিও স্কুল কলেজে বিভাগটি না থাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অংশগ্রহণের সুযোগ কম। এছাড়া সংস্কৃত বিভাগের চাহিদা এবং আসন সংখ্যায় সামঞ্জস্য রয়েছে। তবে আমরা আশাকরি ধীরে ধীরে সংস্কৃত বিভাগের চাহিদা ও পরিধি বাড়বে।
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ বলেন, ইংরেজি ভাষার চাহিদা সবসময়ই বেশি ছিল। কিন্তু বাংলার চাহিদাও বাড়ছে দিনদিন। কারণ স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বাংলা বিভাগ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ভাষা ও সাহিত্য বিভাগেও সমানভাবে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ রয়েছে। ফারসি, পালি, সংস্কৃত, আরবি সব বিভাগেই প্রতিবছর সব আসন পূরণ হচ্ছে। হয়তো অনেক সময় কিছু শিক্ষার্থী অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্য কোনো ইউনিটে ভালো সাবজেক্ট পেয়ে ভর্তি বাতিল করে চলে যাওয়ায় কিছু আসন ফাঁকা থেকে যায়।
ঊষার আলো-এসএ