UsharAlo logo
বুধবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাল বিতরণ স্পট পরিবতর্নের দাবি কাউন্সিলরের

pial
অক্টোবর ৩, ২০২২ ২:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : খুলনা নগরীর ২১নং ওয়ার্ডে ছয়জন ওএমএস ডিলারের ঠিকানা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাইরে। মাত্র ২শ’ গজের মধ্যে চারজন ডিলারের অবস্থান। অধিকাংশ ডিলারদের চারপাশে চাউলের আড়ত রয়েছে। এতে করে ওএমএস চাউল কালো বাজারিতে বিক্রি আশংকা রয়েছে। ওয়ার্ডের কয়েক হাজার দরিদ্র মানুষ সরকারের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে করে সরকারের মহতি উদ্যোগ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব দিক বিবেচনা করে স্থানীয় কাউন্সিলর ওএমএস চাউলের ডিলারদের চাউল বিতরণ স্পট পরিবতর্নের দাবি জানিয়ে মেয়রের নিকট আবেদন করেছেন।

জোড়াগেট মন্টুর কলোনীর বাসিন্দা তাসলিমা বেগম বলেন, ধারে কাছে যদি কেউ চাউল দেয় তবে চাউল আনতে যাই। তবে মাঝে মধ্যে জোড়াগেট পাইকারী কাচা বাজারে ট্রাকে করে চাউল নিয়ে আসে। তখন সেখানে গিয়ে চাউল সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া পুরাতন রেলষ্টেশনে চাউল দেয়। ওইখানে যেতে আসতে ২০ টাকা খরচ। আর লাইনে দাড়িয়ে আরো দু’ঘন্টা সময় নস্ট। তারা শ্রমজীবী মানুষ এ দীর্ঘ সময় নস্ট হলে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে। এ জন্য তিনি ওএমএস চাউলের স্পট তাদের বস্তিতে করার দাবি জানান।

একই কলোনীর বাসিন্দা পরি বেগম বলেন, এ বস্তিতে ১০ হাজারের চেয়ে বেশী দরিদ্র লোক বসবাস করে। আর ওএমএস ডিলারদের স্পট সব সদর হাসপাতাল এলাকায়। এতে করে তারা সরকারের স্পল্প মূল্যে দেয়া চাউল ক্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অবিলম্বে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এলাকায় ওএমএস ডিলারদের চাউল বিক্রির স্পট করার দাবি জানান এই নারী নেত্রী। ওই বস্তির ইজিবাইক চালক নুর ইসলাম। তিনি বলেন, এ বস্তিতে তিনশত পরিবার রয়েছে। প্রতিটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ থেকে ৭জন করে। এসব দরিদ্র লোকেরা সরকারের দেয়া চাউল পায় না। কারণ ডিলারদের অবস্থান সবই ধনী মানুষদের এলাকায় (সদর হাসপাতাল ও তার আশপাশে)। তিনি বলেন, জোড়াগেট পাইকারী কাচা বাজারে মাঝে মধ্যে ট্রাকে চাউল দেয়া হয়। তা আনতে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। গরীবের দুঃখ কেউ বোজে না। এ জন্য অত্র এলাকায় ডিলারদের স্পট করার দাবি জানান এই ইজিবাইক চালক। হরিজন পরিবারের সদস্য জবা রাণী। স্বামী-সন্তানসহ চারজনের পরিবার। তিনি বড় বাজারে হলুদ পট্টিতে মাঝে মধ্যে চাউল নিতে আসেন। কিন্তু যেতে আসতে তার ২০ টাকা খরচ হয়। তারপর প্রায় তিন ঘন্টা রোদে দাড়িয়ে থাকতে হয়। এতে করে ছোট শিশু কোলে থাকায় অনেক সময় চাউল না নিয়েই ফিরে আসেন। তবে এসব স্পট যদি বস্তিতে থাকতো তবে দরিদ্র মানুষের খুবই উপকার হতো বলে তিনি মনে করেন।

সম্প্রতি ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেয়রের নিকট ওএমএস ডিলার স্পট পুর্ণবিন্যাস করার জন্য আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সারাদেশের ন্যায় ২১নং ওয়ার্ডের ৬ জন ডিলারের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের মাঝে ন্যায্যমূল্যে চাল ও আটা বিক্রয়ে নিয়োজিত আছে। ডিলারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নাম যথাক্রমে জামান এন্টারপ্রাইজ, সেলিনা কনস্ট্রাকশন, সারাফাত এন্টারপ্রাইজ, অঞ্জন ট্রেডার্স, বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ এবং কনিকা এন্টারপ্রাইজ।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: একই ভৈরব স্ট্র্যান্ড রোডের হাসপাতাল ঘাট থেকে কালিবাড়ি ঘাট ২০০/৩০০ গজের মধ্যে ৬টি ডিলার তাদের ভাড়াকৃত ঘরে খাদ্যপণ্য বিক্রয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে ওয়ার্ড এলাকার দরিদ্র বাসিন্দাদের জন্য খাদ্যপণ্য ক্রয় করা যেমন কষ্টসাধ্য তেমনই ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। বহিরাগত অথবা ভাসমান লোক একাধিকবার লাইনে দাড়িয়ে পণ্য ক্রয় করে বাহিরে বিক্রয় করছে। ফলে সরকারের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। এমতাবস্থায়, সুষমভাবে সকল দরিদ্র পরিবারের মাঝে সরকারি সুবিধা পৌছে দিতে খাদ্যপণ্য বিক্রয়ের স্থান পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত স্পটগুলো হচ্ছে–রেলওয়ে হাসপাতাল রোড, রেলওয়ে পুরাতন স্টেশন, রেলওয়ে গার্ড কলোনী, গ্রীণল্যান্ড আবাসন (৫নং ঘাট), জোড়াগেট এবং ভৈরব স্ট্র্যান্ড রোড (কালিবাড়ি)। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে মেয়র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন।

২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব সামসুজ্জামান মিয়া স্বপন বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে সরকার যে মহতি উদ্যোগ ওএমএস চাউল বিতরণ কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন, তা সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ওএমএস চাউল থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। তার ওয়ার্ডে ৬জন ওএমএস ডিলার রয়েছেন। তার মধ্যে চারজনই কালিবাড়ি ঘাট থেকে সদর হাসপাতাল গেট পর্যন্ত। মাত্র দু’শত গজের মধ্যে এ চারজনের অবস্থান। অথচ এ স্পটে দরিদ্র জনগোষ্ঠী নেই বললেই চলে। যা রয়েছে তা একজন ডিলারের দিয়ে সামাল দেয়া সম্ভব। এছাড়া এসব ডিলারদের চারপাশে চালের দোকান রয়েছে। যা সহজেই ওএমএস চাউল দোকানে পাচার হতে পারে। আর একজন ডিলার রয়েছেন পুরাতন রেল ষ্টেশন। এখানে নেই কোন জনগণ। ফাঁকা স্পটে বসে থাকে। দুর থেকে দরিদ্র আর ভাসমান মানুষ এ চাল সংগ্রহ করে থাকে। শেষ স্পটটি হলো-খাজা খানজাহান আলী মার্কেটের পিছনে হলুদের গলিতে। বাজারের ভিতরে চলাচলরত মানুষদের ঠেলাঠেলি করে এখানে চাল নিতে আসে মানুষ। এতে তারা নিরুৎসাহীত হয়। এছাড়া এ স্পটের চারপাশে চাউলের বড় বড় আড়ৎ। সুতরাং ওএমএস চাউল কালোবাজারি হওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। এ ওয়ার্ডের অধিকাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী জোড়াগেট বস্তি, গ্রীনল্যান্ড বস্তি ও রেলওয়ে গার্ড কলোনেিত বসবাস করে। কিন্তু ওই বস্তি এলাকায় ওএসএম ডিলারদের অবস্থান না হওয়ায় অধিকাংশ দরিদ্ররা এ চাইল থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। এ জন্য তিনি ডিলারদের স্পট পরিবর্তন করে নতুন করে নির্ধারনের জন্য মেয়রের নিকট আবেদন করেছেন। এসব স্পটে ডিলাররা চাইল নিয়ে বসলে সরকারের লক্ষিত জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে বলে তিনি মনে করেন।

২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব সামসুজ্জামান মিয়া স্বপনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মেয়র তালুকদার আঃ খালেক গত ২২ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নিকট চিঠি দেন।

ওই চিঠিতে মেয়র উল্লেখ করেন, দরিদ্র পরিবারের সুবিধার্থে সরকারের চলমান ওএমএস কর্মসূচী নগরীর ২১নং ওয়ার্ড এলাকায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য কাউন্সিলরের আবেদনে উল্লেখিত ৬টি স্থানে পুর্ণবিনাস করা জরুরী প্রয়োজন। জনস্বার্থে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। বিভাগীয় কমিশনার বিষয়টি তাৎক্ষণিক আরসি ফুডকে অবগত করেন। আরসি ফুড বিষয়টি ডিসি ফুডকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলেন। তবে ডিসি ফুড বাবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় রয়েছেন বলে জানান।

(ঊষার আলো-এফএসপি)