UsharAlo logo
সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবনের শেষ সময়ে বীরাঙ্গনা খেতাব পেলেন বরিশালের হাজেরা বেগম

koushikkln
জুন ২৮, ২০২১ ৭:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল) : স্বাধীনতা আলাদিনের আশ্চর্য্য  প্রদীপ নয়,রূপ কথা কিংবা গল্প গাঁথাও নয়। স্বাধীনতা মানে শোষণ-তোষণ আর পরাধিনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে বিশ্বের দরবারে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখন্ড। আর সেই স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে কত লাখো নারী-পুরুষ,শিশু,আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা  অকাতরে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তার ইয়ত্তা নেই, লাখো নারী হারিয়েছেন তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ সম্ভ্রম। এমনি একজন বরিশালের হাজেরা বেগম। যিনি  জীবন সায়হেৃ দাঁড়িয়ে  শেষ মূহুর্তে পেলেন মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা খেতাব।  বরিশাল মহানগরীর একমাত্র বীরাঙ্গনা নারী তিনি। ১৯৭১ সালের ৯ মাসের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শাহাদত বরণ করেন এবং সম্ভ্রম হারিয়েছেন দুই লাখ মা-বোন। সেই দুই লাখ মা-বোনদের একজন বরিশাল মহানগরীর একমাত্র বীরাঙ্গনা মোসাঃ হাজেরা বেগম। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে সূবর্ণ জয়ন্তীর মুহুর্তে তিনি জীবনের শেষ বেলায় পেলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সম্মান বীরাঙ্গনা খেতাব। বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এঁর অবদান জাতি  চিরকাল পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের সামাজিক স্বীকৃতি ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু তাদের দিয়েছিলেন ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধি। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে বরিশাল মহানগরীর একমাত্র বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার খেতাব পেলেন মোসাঃ হাজেরা বেগম। হাজেরা বেগমের বর্তমান বয়স ৭০ বছর, ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১৮ বছর।  হাজেরা বেগম ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিজ বাড়ি থেকে বোনের শশুর বাড়ি বরিশাল যাবার পথে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ক্যাম্পের সন্নিকটে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক  ভাবে নির্যাতনের শিকার হন।  দুর্বিষহ সেই স্মৃতির কথা মনে করতেই ডুক্রে কেঁদে ফেললেন হাজেরা বেগম। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল বিস্কুট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার ৩ ছেলে ১ মেয়ে।  ২৭ জুন বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার তার সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে হাজেরা বেগমের হাতে ৮২ হাজার টাকার মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা তুলে দেন। এসময় সম্মানি ভাতা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে এ সম্মাননা স্বীকৃতি পেয়ে দারুন উচ্ছ্বসিত ও আবেগাপ্লুত হাজেরা বেগম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের প্রতিও তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ৭১’র মহান   মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও রয়েছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অংশগ্রহণ ও অসামান্য অবদান। নতুন প্রজন্মের কাছে নারীদের এই অসামান্য কীর্তিগাথা তুলে ধরার এখনই সময়। হাজেরা বেগমের মতো মহীয়সী নারীদের আমরা বাঙালী জাতি কখনই ভুলবোনা।