UsharAlo logo
বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা উত্তরে নিরব-আমিনুল, দক্ষিণে মজনু-রবিন

usharalodesk
জুলাই ৮, ২০২৪ ১:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে পারেনি বিএনপি। পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের সফলতা ও ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসাবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় রদবদলের পর এবার চার গুরুত্বপূর্ণ মহানগরে নতুন আংশিক কমিটি দিয়েছে। প্রায় তিন বছর পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে আবারও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব এবং আমিনুল হককে পুনরায় সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণে আগের কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে পদোন্নতি দিয়ে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিনকে করা হয়েছে সদস্য সচিব।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, এসব কমিটির নেতৃত্ব বাছাইয়ে ত্যাগ ও সাংগঠনিক দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গত আন্দোলনে মাঠে থেকে তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছিলেন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে যাদের স্থান দেওয়া হয়েছে, তারা রাজপথের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা। মাঠের কর্মসূচিতে সব সময় সক্রিয় থাকা এ চারজনকেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কারাগারে থেকেছেন দীর্ঘদিন।

চার মহানগরের নতুন কমিটি সম্পর্কে মূল্যায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কর্মীদের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে, মাঠের নেতাদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হয়েছে।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ঘোষিত চার মহানগরের নতুন কমিটিতে স্থান দেওয়া নেতাদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগে থেকেই কথাবার্তা বলে আসছিলেন। ১৩ জুন কমিটি বিলুপ্তির পর এ যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলের কিছু সিনিয়র নেতার পরামর্শে ‘ঐক্যবদ্ধভাবে’ সবাইকে নিয়ে কাজ করার শর্তে চার কমিটির শীর্ষ নেতাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দায়িত্ব পাওয়া চার নেতার মধ্যে তিনজনই আগের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। সেক্ষেত্রে ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিতে কেবল নতুন সাইফুল আলম নিরব। ওয়ার্ড ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে হাতেখড়ি সাইফুল আলম নিরব কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন নাসীর উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু। আর জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ছিলেন সদস্য সচিব। বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হলে তাকে ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক করা হয়। রাজধানীর মাঠেও তিনি নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা পান। নিরব ও আমিনুল-উভয়ের পৈতৃক বাড়ি ভোলায়। এক প্রতিক্রিয়ায় সাইফুল আলম নিরব ও আমিনুল হক প্রায় একই সুরে জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের ওপর আস্থা রেখে যে নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন; এর প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করবেন।?

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মজনুও ছাত্রদল থেকে উঠে আসা নেতা। তিনি প্রথমে ছাত্রদল এবং পরে যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ছিলেন। আর সদস্য সচিব রবিন সাবেক সংসদ-সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে। এই তরুণ নেতাও মহানগর দক্ষিণের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয়। তবে মহানগরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, দক্ষিণের কমিটির শীর্ষ পদে অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের আনা হয়েছে। এখানে ত্যাগী ও মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অভিজ্ঞ অনেক সিনিয়র নেতার রাজনীতি হুমকির মধ্যে পড়েছে। সেক্ষেত্রে এখন মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র নেতাদের রাজনীতি করার সুযোগ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে করে দিতে হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগরের নতুন কমিটি নিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও মাঠের কর্মীদের বড় কোনো অভিযোগ নেই বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ চট্টগ্রাম মহানগরের মীর নাসির-দস্তগীর নেতৃত্বাধীন কমিটির প্রথম যুগ্মসম্পাদক, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সদ্য বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে সদস্য সচিব নাজিবুর রহমান চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি এবং সোহেল-এ্যানি কমিটির কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি ছিলেন। বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, চট্টগ্রামে যে দুই নেতা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা পরীক্ষিত ও ত্যাগী। তবে তাদের রাজনীতিতে বড় গ্যাপ ছিল। অনেকদিন তারা মূল দায়িত্বে ছিলেন না।

চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, দলের চট্টগ্রাম মহানগরে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হিসাবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা মাঠের নেতা।

অন্যদিকে বরিশাল মহানগরের দায়িত্ব পাওয়া তিন নেতাই ত্যাগী। এর মধ্যে আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান গত আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হন। বেশ কিছুদিন কারাগারে ছিলেন।

সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন এবং ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক নাসরিন আন্দোলনের পুরো সময় মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। তবে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নাসরিনকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক করায় বরিশাল মহানগরের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ নেতাদের পক্ষে রাজনীতি করা কঠিন হবে বলে কয়েকজন নেতা জানান। মহানগরের একজন নেতা বলেন, এখানে মূলত সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন শিকদারের ওপর নির্ভর করে কমিটি সাজানো হয়েছে। তিনি অভিজ্ঞ ও মাঠের নেতা হিসাবে পরিচিত। মজিবর রহমান সরোয়ার কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান মনে করেন, কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে মাঠের নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করি।

ঊষার আলো-এসএ