UsharAlo logo
শুক্রবার, ১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিল্লিতে মায়ের সঙ্গে জয়ের ঈদ, দেশে নেতাকর্মীদের নানা প্রশ্ন চাপা ক্ষোভ

ঊষার আলো রিপোর্ট
জুন ১২, ২০২৫ ১২:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় নয়াদিল্লি­র একটি ‘সেফ হাউজে’ থাকা মা শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। গত মাসে মার্কিন পাসপোর্ট নেওয়ার পর ঈদুল আজহার আগের দিন শুক্রবার দিল্লি­তে যান জয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মা-ছেলের এমন ঈদ করা নিয়ে কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা তুলছেন নানা প্রশ্ন। অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেখানেই প্রথমবারের মতো ছেলের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলো। তবে এ সফরে জয় কোনো প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হয়নি। কোনো ধরনের আলোচনায়ও অংশ নেননি। কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, পাসপোর্ট নিয়ে জটিলতার কারণে এতদিন তিনি (জয়) মায়ের (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। অন্তর্বর্তী সরকার তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল করার পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাকে মার্কিন পাসপোর্ট নিতে হয়েছে। এরপর তিনি মায়ের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য ভারতে এসেছেন।

আওয়ামী লীগের অপর একজন নেতা বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় মায়ের সঙ্গে ঈদের দিনগুলো কাটাতে ভারত এসেছেন। তার এ সফর রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক। তারা পারিবারিকভাবেই সময় কাটাচ্ছেন বলেও জানান বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দলটির এই কেন্দ্রীয় নেতা।

এদিকে শেখ হাসিনার সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঈদ করা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের অনেকের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। মা-ছেলের একসঙ্গে ঈদ উদ্যাপনকে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত ঘটনা বললেও তারা বর্তমান পেক্ষাপটের কারণে এটিকে সঠিক নয় বলে মন্তব্য করে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, মায়ের সঙ্গে সন্তান ঈদ করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমান কঠিন সময়ে লাখ লাখ নেতাকর্মী পরিবারছাড়া। অনেকে জেলে, বাকিরা পলাতক। তারা ও তাদের পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সজীব ওয়াজেদ জয় যদি বলতেন, যখন আমার দলের নেতাকর্মীরা মা, বাবা ও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারছে না; তখন আমি কেন করব। আমিও করব না। তার এ ধরনের শক্ত অবস্থানে সবাই উজ্জীবিত হতো। কিন্তু তিনি তা করেননি।

তারা আরও বলেন, আগেও দলের মধ্যে ন্যায়সংগত সমালোচনা করতে পারিনি। এখনো পারছি না। বাংলাদেশের রাজনীতি এক ধরনের দুষ্টচক্রে আবদ্ধ। এটা অতীতেও ছিল। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়েও এটা দূর হয়নি। শীর্ষ নেতৃত্বের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবাই সব সময় নিরাপদ থাকে। তাদের কিছুই হয় না। সব সময়ই বিপদে পড়েন সাধারণ নেতাকর্মীরা। তারাই জেল-জুলুম থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্যাতন সহ্য করেন। আমরা তো এই ধরনের রাজনীতি চাই না। আমরা রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চাই।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির একাধিক নেতা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও এতদিন তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছিল। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার ওই পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়। এরপর গত মাসে ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস সিটিজেনশিপ সেন্টারে আয়োজিত এক নাগরিকত্ব শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। শপথ অনুষ্ঠান শেষে তাকে নাগরিকত্বের সনদপত্র প্রদান করা হয় এবং এরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কয়েক দিন আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড পান। গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর থেকেই জয়ের ভারত সফর নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। অবশেষে ঈদের আগের দিন শুক্রবার তিনি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ভারত যান।

এদিকে ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভিভিআইপিদের যেভাবে পাইলট কারসহ সামরিক পোশাক পরিহিত নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে নিয়ে যাওয়া হয়, ঠিক সেভাবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে বিমানবন্দর থেকে নেওয়া হয়নি। তবে কড়া নিরাপত্তা ছিল, আর পুরোটাই করা হয়েছে অত্যন্ত গোপনে। আবার শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক। কিন্তু ভাইয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে কিনা, সেটা কোনো সূত্র থেকেই নিশ্চিত করা যায়নি।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, এবারের সফরে জয় এখন পর্যন্ত দলীয় কোনো আলোচনায় অংশ নেননি। ভারতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হয়নি। ভারত সফরে তার কলকাতায়ও আসার সম্ভাবনা নেই। বরং তিনি খুব অল্পসময়ের মধ্যেই ফিরে যাবেন।

দলটির এক নেতা বলেন, মা-ছেলের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা তো আমরা এখনো জানি না। তবে দেশ ও রাজনীতির নানা বিষয়ে তো কথা হওয়াটা স্বাভাবিক। পরবর্তী সময়ে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলেও হয়তো জানতে পারব। এটা পারিবারিক সফর। তারা সেভাবেই সময় কাটাচ্ছেন।

ঊষার আলো-এসএ