গণ-আন্দোলনের মুখে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুদায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের মানুষ খুঁজে পায় যেন নতুন পথের দিশা। কিন্তু দেখা গেল, এরপর থেকেই সরকারের ওপর একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন খাতসংশ্লিষ্টরা ছোট-বড় যে কোনো ইস্যুতেই সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়ছেন। একটি সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই দেখা যায় আরেকটি এসে ধাক্কা দিচ্ছে।
মনে হচ্ছে, আন্দোলন-অবরোধ যেন দেশের স্থায়ী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে, ততই দীর্ঘ হচ্ছে এসব দাবির মিছিল। এর জেরে কখনো কখনো অবনতি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। আবার হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে খুন, ছিনতাই ও চলন্ত যানবাহনে নারীদের শ্লীলতাহানিসহ ভয়ানক সব অপকর্ম। সবার মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এমন পরিস্থিতির কারণ কী? সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতারা বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের ফোনে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।
আরও জানা গেছে, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির এই ষড়যন্ত্র ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে আওয়ামী নেতাকর্মী ছাড়াও জড়িত আছেন প্রশাসন ও পুলিশের বেশ কয়েকজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এখানেই শেষ নয়, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়াকে ইস্যু করে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তৈরি হয়েছে ‘ভায়োলেন্স ক্রিয়েটার গ্রুপ’। টাকার বিনিময়ে অবরোধ, মিছিল, জ্বালাও-পোড়াওসহ বিভিন্ন সংঘবদ্ধ অপরাধের প্রস্তুতি নিয়েছে গ্রুপটি। ইতোমধ্যে গ্রুপটি কাজও শুরু করেছে।
বস্তুত, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিয়ে থাকা গত ফ্যাসিস্ট সরকারের রাঘববোয়াল ও চুনোপুঁটিরা বর্তমানে দেশে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তবে তারা হয়তো ভুলে গেছে, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কারণে এসব আর গোপন থাকার সুযোগ নেই। অবশ্য তারা এসব আমলে নিচ্ছে বলেও মনে হয় না। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালিত আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল পেজগুলোয় হরতাল, মশাল মিছিল, লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি দিয়ে তারা প্রকাশ্যেই অস্থিরতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। জিঘাংসা চরিতার্থের জন্য তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, দেশ ও দেশের মানুষকে ভয়াবহ বিপদের মুখে ফেলতেও দ্বিধা করছে না। তারা মনে করছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে পারলে তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।
এসব ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকার যদি সজাগ ও সদাতৎপর থাকে, তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা কোনোভাবেই সফল হতে পারবে না বলে মনে করি আমরা। এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক দলসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকেও সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি ষড়যন্ত্রের মূল উপড়ে ফেলতে ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী নেতাকর্মীদের দ্রুত দেশে ফেরত আনতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ কোনো দেশে অন্য একটি দেশের অপরাধীরা অবস্থান করে যদি তাদের দেশকে অস্থিতিশীল করতে থাকে, তাহলে সেটাকে হালকাভাবে দেখার উপায় নেই।
ঊষার আলো-এসএ