UsharAlo logo
শনিবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরিবেশবান্ধব এসি উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে ওয়ালটন

ঊষার আলো রিপোর্ট
এপ্রিল ২৬, ২০২৫ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশে বর্তমানে এসির বাজার কেমন?

তানভীর রহমান : সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের এসি বাজারের ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রতিবছর অসহনীয় গরম, দ্রুত বিকাশমান নগরায়ণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত এসির সহজলভ্যতা প্রভৃতি নানা কারণে বাংলাদেশে এসির চাহিদা বাড়ছে। ২০২৪ সালে দেশে ৬.৫ লাখ এসির চাহিদা ছিল। চলতি বছর বাংলাদেশের এসির চাহিদা ৭.৫ লাখে পৌঁছাবে বলে আমরা ধারণা করছি। সামনের বছরগুলোয় ২০ শতাংশ হারে এসির বাজার বাড়বে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

দেশের বাজারে ওয়ালটন এসির অবস্থান কেমন?

তানভীর রহমান : এসির বাজারে ওয়ালটন দেশের নম্বর ওয়ান ব্র্যান্ড। রেসিডেনসিয়াল এসির পাশাপাশি লাইট কমর্শিয়াল এবং কমার্শিয়াল এসি উৎপাদনে ওয়ালটন শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। দেশের এসি বাজারে ৩০ শতাংশেরও বেশি মার্কেট শেয়ার ওয়ালটনের। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ওয়ালটন এসি দেশের বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত এসি মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করছে। এর নেতৃত্বে রয়েছে ওয়ালটন।

ওয়ালটন এসির প্রযুক্তিগত এবং অন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

তানভীর রহমান : ওয়ালটন এসির বিশেষত্ব হলো ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তিসহ বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের ব্যবহার, আন্তর্জাতিকমানসম্পন্ন, সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও দীর্ঘস্থায়িত্ব, দামে সাশ্রয়ী, অসংখ্য মডেল ও রুচিশীল ডিজাইন এবং দেশব্যাপী বিস্তৃত সর্বোচ্চ সংখ্যক সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে দ্রুত বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা। বাংলাদেশে একমাত্র ওয়ালটনই ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ৬ স্টার রেটিংসমৃদ্ধ এসি বাজারে ছেড়েছে, যা বিএসটিআই এবং বুয়েট কর্তৃক স্বীকৃত। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এসি। ওয়ালটন এসিতে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্ব স্বীকৃত সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব আর-২৯০ এবং আর-৩২ গ্যাস, যা পরিবেশ সুরক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখে চলছে। ইতোমধ্যে এসিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক সিএফসি এবং এইচসিএফসি গ্যাসের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে ওয়ালটন। দেশের প্রথম ও একমাত্র সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব আর-২৯০ সমৃদ্ধ এসি উৎপাদন করছে ওয়ালটন। ফলে পরিবেশবান্ধব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র উৎপাদনে ভারত ও চীনের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ওয়ালটনের উৎপাদিত ৯০ ভাগ এসিই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। রয়েছে সর্বোচ্চ এনার্জি এফিশিয়েন্সি রেশিও (ইইআর)। এর পাশাপাশি ওয়ালটন এসিতে রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে, অফলাইন বাংলা এবং ইংরেজি ভয়েস কন্ট্রোল, ব্লুটুথ কন্ট্রোল, এআই ডক্টর, কোটেক টেকনোলজি, স্মার্ট টেকনোলজি ইত্যাদি অসংখ্য প্রযুক্তি ও ফিচার।

ক্রেতাদের জন্য ওয়ালটনের কত মডেলের এসি রয়েছে? দাম কেমন?

তানভীর রহমান : ক্রেতাদের জন্য চলতি বছর আমরা ছয়টি সিরিজের ৭৪টি মডেলের ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী স্প্লিট এসি বাজারে ছেড়েছি। এর মধ্যে ওয়ালটনের ১ টনের ইনভার্টার এসির দাম ৪৯ হাজার ৯০০ থেকে শুরু হয়েছে। ১.৫ টন এসি পাওয়া যাচ্ছে ৬৫ হাজার ৯০০ থেকে ৮১ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে এবং গ্রাহকরা ২ টনের এসি ৭৯ হাজার ৯০০ থেকে ৯৫ হাজার ৯৯০ টাকায় পাচ্ছেন।

স্প্লিট এসি সাধারণত বাসাবাড়ি এবং ছোটো প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। মাঝারি এবং বড় স্থাপনায় লাইট কমার্শিয়াল এবং কমার্শিয়াল এসি ব্যবহৃত হয়। এসব স্থাপনার জন্য ওয়ালটনের রয়েছে ভিআরএফ এবং চিলার।

গ্রাহকদের জন্য এসি ক্রয়ে ওয়ালটন কী ধরনের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে?

তানভীর রহমান : প্রতিবছরই গরম এবং ঈদ উপলক্ষ্যে এসির গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে ওয়ালটন। চলতি বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। কুরবানির ঈদ পর্যন্ত ওয়ালটন এসি ক্রয়ে গ্রাহকদের জন্য রয়েছে মিলিয়নিয়ার হওয়ার সুযোগ। এছাড়া বছরজুড়েই গ্রাহকদের এসি এক্সচেঞ্জ সুবিধা দিচ্ছে ওয়ালটন। এ সুবিধার আওতায় যে কোনো ব্র্যান্ডের পুরোনো এসির বদলে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে গ্রাহকরা ওয়ালটনের নতুন এসি কিনতে পারছেন। এর পাশাপাশি ওয়ালটন এসিতে ফ্রি ইনস্টলেশন, জিরো ইন্টারেস্টে সহজ কিস্তি ও ইএমআই সুবিধা রয়েছে।

এসি উৎপাদন ও বিপণনে আপনারা কোন কোন বিষয় প্রাধান্য দেন?

তানভীর রহমান : ওয়ালটন দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে বাংলাদেশে প্রথম এয়ারকন্ডিশনার প্রোডাকশন প্ল্যান্ট স্থাপন করে ওয়ালটন। শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারা যেন বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও সেবা সাশ্রয়ী মূল্যে পেতে পারেন। সেজন্য এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদনে বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও পরিবেশের সুরক্ষার ওপর আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। গ্রাহক চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ওয়ালটনের নিজস্ব সুদক্ষ গবেষণা ও উদ্ভাবন (রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন) নিরলস গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এয়ারকন্ডিশনার। দেশে এসি উৎপাদন কারখানা স্থাপনের ফলে এ খাতে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর ফলে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে, তেমনই কর্মসংস্থান হচ্ছে। বাড়ছে রপ্তানি আয়। বিশ্বের মাত্র ৯টি দেশ ভিআরএফ উৎপাদন করে। তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের ওয়ালটন।

দেশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ওয়ালটন এসি রপ্তানি হচ্ছে কি না?

তানভীর রহমান : বাংলাদেশে তৈরি ওয়ালটন এসির চাহিদা বিশ্বজুড়ে রয়েছে। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে আমরা পণ্য রপ্তানি করি। এসির বৈশ্বিক বাজার টার্গেট করে আমরা ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি। গ্লোবাল এসি মার্কেটে ওয়ালটনের উপস্থিতি বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি।

বাংলাদেশে মূলত কোন শ্রেণির মানুষ এসি কিনছেন? সাম্প্রতিক সময়ে এসির ক্রেতা-শ্রেণির মধ্যে পরিবর্তন দেখছেন কি না?

তানভীর রহমান : বর্তমান সময়ে এসি আর বিলাস দ্রব্য নয় বরং প্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। সেই হিসাবে সব শ্রেণির মানুষই এসি কিনছেন এবং ব্যবহার করছেন। গত কয়েক বছরে এই চিত্রটা অবশ্য ভিন্ন ছিল। তখন উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সাধারণত এসি ব্যবহার করতেন। কিন্তু আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং সরকারের দেওয়া নীতিসহায়তার ফলে দেশে বিশ্বমানের এসি উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশে তৈরি আমাদের এসি যেমন মূল্য সাশ্রয়ী, তেমনই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব। রয়েছে দ্রুততম বিক্রয়োত্তর সেবা। ফলে বর্তমান সময়ে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পর্যন্ত সব শ্রেণির মানুষই এসি ক্রয় এবং ব্যবহার করছেন।

এসি সংক্রান্ত দুর্ঘটনা রোধে কী কী বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি?

তানভীর রহমান : বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের মানসম্মত এসি ব্যবহার করলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি নেই বলেই চলে। এসির অভ্যন্তরে যে সামান্য পরিমাণ গ্যাস থাকে, তা থেকে যদি বিস্ফোরণ হয়ও, তা খুব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে না। সঠিকভাবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এসি থেকে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে না। ঘরের মাপ অনুযায়ী এসি কেনা, সঠিক স্পেকের বৈদ্যুতিক তার ও সকেটের ব্যবহার, নিয়মিত সার্ভিসিং প্রভৃতি বিষয় মেনে চললে এসি থেকে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে না।

ঊষার আলো-এসএ