গত কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সমস্যা এড়াতে এ বছর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক কমিটি (এনসিটিবি) বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেবে, এটাই ছিল প্রত্যাশিত। বাস্তবে লক্ষ করা যাচ্ছে, এ বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের আড়াই মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও বিনামূল্যের বই এখনো সব শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছেনি। এখনো প্রায় এক কোটি বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারেনি এনসিটিবি; এখনো ২০ লাখ বই ছাপানো বাকি রয়েছে; সবই মাধ্যমিক স্তরের। অভিযোগ উঠেছে, শেষের দিকে ছাপানো বইয়ের মান ঠিক রাখছে না বেশকটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বলেছেন, আড়াই মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা এখনো সব বই পায়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
অভিযোগ রয়েছে, এবার বই ছাপানোর কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন ব্যবসায়ীরা। এ অভিযোগ আমলে নেননি এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তিনি বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু শেষ সময়ে এসে তিনিই বিদেশ থেকে কাগজ আমদানির উদ্যোগ নেন। এ কাগজ এসে পৌঁছায় ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। অথচ প্রথম থেকে উদ্যোগ নিলে এ সমস্যা অনেকটাই কেটে যেত। বস্তুত এনসিটিবির নানা অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও ধীরগতির কারণে বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন ভার্সন সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা এ সুবিধা নিতে পারছে না। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।
শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে মানসম্মত বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় আগ্রহী হয়, সে বিষয়েও তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অতীতে ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। কাজেই মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই প্রকাশে কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে যাতে কোনোরকম দুর্নীতি না হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে।
ঊষার আলো-এসএ