ঊষার আলো রিপোর্ট : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে পায়রাবন্দরের কেনাকাটায় বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শনিবার খবরে প্রকাশ, বন্দরের মালামাল লোড-আনলোড করতে বিনা দরপত্রে ৬০ কোটি টাকার ম্যাটেরিয়াল হ্যান্ডেলার যেমন ক্রয় করা হয়েছে, তেমনি একইভাবে ক্রয় করা হয়েছে ৯ কোটি টাকার প্রাইম মুভার এবং সাড়ে ৯ কোটি টাকার ২৮টি ট্রেইলার কনটেইনারও। শুধু তাই নয়, অবকাঠামো উন্নয়নসংক্রান্ত একটি প্রকল্পের বিভিন্ন ধাপে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৮৬ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্পটিতে ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা খরচের ক্ষেত্রেও পাওয়া গেছে ব্যাপক অনিয়ম। অভিযোগ আছে, চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সাব-কনট্রাক্টরের মাধ্যমে ১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে।
উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির পরিবর্তে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে অদক্ষ ঠিকাদারের মাধ্যমে কার্য সম্পাদন স্পষ্টতই ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) লঙ্ঘন। এছাড়া কমিশন বাণিজ্য, ভুয়া প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যে বারবার প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বৃদ্ধি করাও অপরাধ। উল্লেখ্য, বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার ঠিকাদারি কাজে ঘাপলার অভিযোগ আগেও উঠেছিল। চলতি বছরের মার্চেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বন্দরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে বিভিন্ন সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিপুল অর্থ লোপাটের তথ্যও সংশ্লিষ্টদের বয়ানের সূত্র ধরে সেই প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়। বন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্য এসব অভিযোগ স্বীকার করেনি। মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছিল। পরিতাপের বিষয়, কর্তৃপক্ষের কতিপয় সদস্য ও সাব ঠিকাদারের যোগসাজশে শতকোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটলেও বিগত সরকারের আমলে তদন্তপূর্বক কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। কমেনি দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য, ফলে দুর্নীতিও বন্ধ হয়নি।
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয়। জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকার সুষম ব্যবহারের বিকল্প নেই। শুধু পায়রাবন্দরই নয়, অবকাঠামো উন্নয়নসহ সব প্রকল্পে সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালা (পিপিআর) কঠোরভাবে প্রতিপালনের প্রয়োজন রয়েছে। রক্ষক যেন ভক্ষক হয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য সরকারকে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। পায়রাবন্দরের পূর্ব ও পরবর্তী সব অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগী হবে, এটাই প্রত্যাশা।
ঊষার আলো-এসএ