ঊষার আলো রিপোর্ট : আলোকচিত্রের সঙ্গে যুক্ত হলাম ২০০৯ সাল থেকে। দুই মেগাপিক্সেল ক্যামেরার মোবাইলে নানা রকম ছবি তুলতাম সে সময়। একদিন মগবাজার ফুট ওভারব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে সূর্যের ছবি তোলার চেষ্টা করছিলাম। তবে হঠাৎ মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়।
আলোর কারণে এ রকম হলো কি না ভাবতে থাকি, বলা চলে একপ্রকার গবেষণা শুরু করি। তখনো সিদ্ধান্ত নিইনি ভবিষ্যতে পুরোদস্তুর আলোকচিত্রী হব। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক শেষ করে যোগ দিয়েছিলাম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। স্নাতকে পড়ার সময় তোশিবা ব্র্যান্ডের মোবাইলে টুকটাক ছবি তুলতাম।
এক আত্মীয়র কাছ থেকে ক্যামেরা নিয়ে একবার ফিল্মে ছবি তুলেছিলাম। উনি আমার সেই ছবিগুলো দেখে পাঠশালা সম্পর্কে জানান আমাকে। তাঁর পরামর্শে ২০১১ সালে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমিতে ভর্তি হলাম। আলোকচিত্রে পড়াশোনা করব আর একটি ভালো ক্যামেরা থাকবে না, সেটি তো হয় না।
ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে নাইকন ডি-৪০ ডিসিএলআর ক্যামেরা কিনলাম। দিনভর অফিস, সন্ধ্যায় পাঠশালার ক্লাস। দিনগুলো তখন বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল। তবে ছবি তোলার ইচ্ছাটা পেয়ে বসে সে বছর ছবি মেলার একটি প্রদর্শনী দেখে। সেবারই প্রথম মনে হলো জীবনে কখনো ছবি তোলা বাদ দেওয়া যাবে না।
বলতে পারেন ছবির প্রেমে পড়ি তখন। ছবি তোলার ব্যাপারে কিছুটা বোঝাপড়া হওয়ার পর থেকেই রাতের ঢাকার ছবি তুলতাম। ছবিগুলো একদিন নিয়ে আসি পাঠশালায়। প্রতিষ্ঠানটির এক যুগপূর্তি উপলক্ষে একটি বইয়ের কাজ চলছিল তখন। আমার তোলা ছবিগুলো পছন্দ করেন বইয়ের দায়িত্বে থাকা অন্যান্য আলোকচিত্রী। আমিসহ ১২ জন আলোকচিত্রীর ১২টি ছবি প্রকাশ পায় ‘আন্ডার দ্য ব্যানিয়ান ট্রি’ নামের সেই বইয়ে। তখন ছবি তোলার নেশা পেয়ে বসে। ২০১২ সালে পাঠশালা থেকে বের হয়ে নিজের গবেষণার প্রতি মন দিলাম। তবে সেসব ছিল ছবি তোলার বিষয়েই। এখন ছবি তোলার পাশাপাশি যেই প্রতিষ্ঠান থেকে ছবি তোলা শিখেছি, সেই পাঠশালায় নতুনদের ছবি তোলা শেখাই। পাঠশালায় শিক্ষক হিসেবে আমার প্রায় এক যুগ হতে চলল। প্রতিষ্ঠানটি শুধু বাংলাদেশ নয়, আমার মনে হয় গোটা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা। এখানে নতুন নতুন শিক্ষার্থী আসছে, তারা শিখছে, আবার চলে যাচ্ছে কর্মক্ষেত্রে। একটি ইকোসিস্টেমের অংশ তারা। দিন দিন প্রতিষ্ঠানটি বড় হয়ে ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে। ভালো লাগে যখন ভাবি আমিও এই ইকোসিস্টেমের অংশ।
পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য অবশ্য নতুন কিছু নয়। এবার কলম্বিয়ার লরা হুয়ের্তাস মিলানের সঙ্গে যৌথভাবে বার্লিন আফটার নেচারের ‘উলরিক ক্রেসপো ফটোগ্রাফি পুরস্কার ২০২৪’ পেয়েছি। এর অর্থমূল্য ৪০ হাজার ইউরো।
এটি আসলে একটি নির্দিষ্ট ছবির জন্য নয়, এটি পুরো একটি গবেষণাকর্মের জন্য দেওয়া হয়। গবেষণাকর্মের মধ্যে ছবি ছাড়াও ভিডিও, টেক্সট ইত্যাদি থাকতে পারে। আমার গবেষণার বিষয় ছিল, ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাস, বিশেষ করে পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলার ব্রিটিশ কলোনিগুলোতে রেলওয়ে ও কয়লা উত্তোলনের বিকাশ ও ইতিহাস। ব্রিটিশদের শাসনামলে ২০০ বছরে কয়লা উত্তোলনের মাধ্যমে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে তা পরিবেশের জন্য কী রকম প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং এখনো তা পরিবেশের ওপর কী প্রভাব ফেলছে এ নিয়ে গবেষণা করেছি।
আফটার নেচার মূলত পুরস্কার দেয় পরিবেশকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ওপর ভিত্তি করে। আর একজন আলোকচিত্রীর কাজও তাই। আমার পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলো চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বার্লিনে প্রদর্শিত হবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রাংকফুর্টের ক্রেসপো ফাউন্ডেশন একটি উন্মুক্ত প্রদর্শনীও করবে।
সরকার প্রতীকের যত অর্জন
২০১৪ : ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো জুপ সোয়ার্ট মাস্টারক্লাস
২০১৫ : পিডিএনস ৩০ ইমার্জিং ফটোগ্রাফার
২০১৫ : ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো
২০১৮ : ম্যাগনাম ফাউন্ডেশন গ্রান্ট
২০২৪ : আফটার নেচার-উলরিক ক্রেসপো ফটোগ্রাফি পুরস্কার
ঊষার আলো-এসএ