ঊষার আলো রিপোর্ট : গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। তবে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখনো চলমান। এরই মাঝে এবার শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবের ক্ষমতা থেকে উৎখাত ও হত্যা নিয়ে কথা বললেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল।সোমবার দিবাগত রাত ১০টা ০৭ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ বিষয়ে আলোকপাত করেন।
তার সেই পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কৈশোরোত্তীর্ণ বয়সেই মুজিব-শাসনের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম শুরু করি। লীগ থেকে বেরিয়ে জাসদ গড়ে তোলা তরুণেরাও তখন সশস্ত্র যুদ্ধে নেমে গেছে। আমাদের মতো জানবাজ যোদ্ধারা যখন প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছি, তখন এক প্রত্যুষে বেতারকেন্দ্র থেকে ঘোষণা শুনলাম, স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত ও হত্যা করা হয়েছে।
যাঃ শালা! জীবন বাজি রেখে যে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি, সেটাই আচানক ঘটিয়ে ফেললো মুজিবের পাশেই কালো টুপি পরে তামাকের পাইপ হাতে বসে থাকা ছোটখাটো আকৃতির এক লোক। নাম তার খোন্দকার মোশতাক আহমদ। মুজিবেরই জানে জিগার দোস্ত তিনি। দীর্ঘকালের রাজনৈতিক সহচর।
সেনাবাহিনীতে মুজিবের যারা অতি প্রিয় ছিলেন, তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেশামেশি ও বাসায় যাদের হরদম যাতায়াত ছিল, তারাই কিন্তু মুজিব বধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্ষমতার মসনদে তারাই মোশতাককে বসিয়েছেন মুজিবকে হালাদ করে দিয়ে।
পরিবর্তনের এই বিচিত্র রসায়ন আরও অনেকবারই দেখেছি নানা রঙ্গে-রূপে। সাচ্চা লড়াকুরা অনেক সময় লাস্ট রাউন্ডে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বয়ে আনতে পারে না। অন্য কেউ ফাইনাল কিকে বলটিকে জালে ঢুকিয়ে দিয়ে বিজয়ীর মুকুট মাথায় পরে।
পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার’ -এই ধৃষ্ট উচ্চারণ শোনা গেছে মুজিবের কণ্ঠে। কিন্তু ‘কোথায় আজ খন্দকার মোশতাক’ -এই প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ তিনি পাননি। হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের (শাসনের) উৎখাতের ক্ষেত্রেও প্রায়ই একই রকম ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
রেজিম চেঞ্জের পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের অতীত কার্যকলাপ ও ভূমিকা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নানা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন হয়। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা খুব সিম্পল এবং ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট নয় অনেক ক্ষেত্রে এবং অনেকের বেলায়। পনেরো বছর আন্দোলন করে ষোড়শ বর্ষে এসে কেউ কেউ আন্দোলনের পিঠে ছোরা বসিয়ে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আবার ফ্যাসিবাদের সবকিছু অবলেহন করে শেষ মুহূর্তে এসে অনেকেই গণেশ উলটে দেওয়ার কাজে ভূমিকা রেখেছেন। কাজেই কাউকে গ্রহন ও বর্জনের ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন এবং তথ্যের পরিপূর্ণ যাচাই খুবই অপরিহার্য।
অনৈতিকতাকে উৎসাহিত করতে বলছি না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের আগাগোড়া দোসরদের পুনর্বাসনের পক্ষেও বলছি না। আমি বলছি, পাওয়ার গেম ও রাষ্ট্র পরিচালনা মানে কিন্তু কানা ঘোড়ার সোজা দৌড় কিংবা সরল অংক নয়। এখানকার জটিলতা, কুটিলতা, সমীকরণ ও বিন্যাসের গ্রন্থিতে এতো বেশি ঘোরপ্যাঁচে থাকে যে হুটহাট রায় দিয়ে ফেলা বিপজ্জনক। অতএব, বালকসুলভ চপলতা পরিহার করে তীক্ষ্ণধী হও ওহে বালককূল!’
ঊষার আলো-এসএ