UsharAlo logo
সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রযুক্তির কাছে অসহায় সাধারণ ট্রেনযাত্রীরা

usharalodesk
এপ্রিল ১৩, ২০২৩ ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : ঈদযাত্রায় যারা যুগ যুগ ধরে রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে ট্রেন ভ্রমণ করেছেন। আনন্দে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু এবার টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনলাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের শতভাগ টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ নতুন প্রযুক্তির কাছে সাধারণ যাত্রীরা অসহায়। ইন্টারনেটযুক্ত স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের অধিকারীদের অনেকে টিকিট কাটতে পেরেছেন। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের ভাগ্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট খুব একটা জোটেনি।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন নিয়মে যারা টিকিট কাটতে পারেননি-তাদের জন্য লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন রয়েছে। এসব ট্রেনের টিকিট কাউন্টার থেকে যাত্রীরা সংগ্রহ করতে পারবেন। ১১ এপ্রিল রাতে পাঁচ দিনব্যাপী ঈদ অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়। প্রতিদিন ২৫ হাজার ৭৭৮টি করে টিকিট বিক্রি হয়েছে। একই সঙ্গে তিনটি স্পেশাল ট্রেনে মোট ৫৭১৮টি টিকিট বিক্রি হয়। অর্থাৎ গত ৫ দিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৮টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী কামরুল আহসান বলেন, অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। অনলাইন অথবা কাউন্টার উভয় জায়গা থেকে যাত্রীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকিট দেওয়া সম্ভব হয়নি। সীমিত টিকিটের বিপরীতে হাজার হাজার যাত্রী টিকিট চেয়েছেন। কেউ পেয়েছেন, কেউ পাননি। এবার ১০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করা হয়। কারণ যারা টিকিট কাটতে পারবেন না তারা যেন বিকল্প পথে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। প্রকৌশলী কামরুল আহসান আরও বলেন, আমাদের টার্গেট যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করাসহ সঠিক সময়ে ট্রেন চালানো। ঈদে শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলবে-এমনটা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বিনা টিকিটে ভ্রমণ না করার জন্যও তিনি অনুরোধ জানান।

জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতেও ঈদের অগ্রিম টিকিট কাটতে কমলাপুর স্টেশনে সাধারণ মানুষ ভিড় করেন। কাউন্টার বন্ধ থাকায় তারা নিরাশ হয়ে ফিরে গেছেন। খুলনাগামী যাত্রী রহিমা বেগম জানান, স্বামীসহ তিনি রাজধানীতে দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি বাসা বাড়িতে কাজ করেন আর স্বামী ভ্যান চালান। প্রতিবছর আমরা স্টেশনে কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটি। কিন্তু এবার টিকিট কাটতে পারিনি। কারণ আমার কাছে মোবাইল ফোন থাকলেও তা দিয়ে টিকিট কাটার ব্যবস্থা নেই। লোকাল, মেইল অথবা কমিউটার ট্রেনে যাত্রার দিন টিকিট কাটতে পারব কিনা তাও নিশ্চিত নই। শুধু রহিমা নয়, সাধারণ যাত্রীদের বেশিরভাগই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার না করতে পারায় এবার তারা টিকিট কাটতে পারেননি। নতুন এমন নিয়ম তাদের বঞ্চিত করেছে। যাদের কাছে ইন্টারনেটযুক্ত স্মার্টফোন বা কম্পিউটার নেই তাদের জন্য-কাউন্টারে টিকিট রাখা জরুরি ছিল।

দিনাজপুরগামী যাত্রী মিলন মিয়া জানান, রাজধানীতে রাস্তা মেরামতের কাজ করেন তিনি। তার বাটন মোবাইল ফোন সেট থাকলেও তাতে নেট চালানোর ব্যবস্থা নেই। গত বছর স্টেশনে ২ দিন অপেক্ষা করে তিনটি টিকিট কেটেছিলেন। এবার ২০ এপ্রিল টিকিটবিহীন স্টেশনে যাবেন। লোকাল অথবা মেইল ট্রেনের টিকিট না কাটতে পারলে কীভাবে গ্রামে যাবেন-এমন প্রশ্নের উত্তর শুধু মিলন মিয়ার অজানা নয়, প্রযুক্তি না জানার পাশাপাশি স্মার্টফোন না থাকায় অসংখ্য যাত্রীরও একই অবস্থা।

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৭ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দিন শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ মানুষ রেলওয়ে ই-টিকিট অথবা রেল অ্যাপসে হিট করেছে। ২৫ হাজার ৭৭৮টি টিকিটের বিপরীতে সাড়ে ৮ হাজার (গড়ে তিনটি টিকিট) মানুষ টিকিট পেয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, টিকিট কাটতে কাউন্টারের সামনে শত শত মানুষ দিন-রাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। নির্ধারিত টিকিটের বিপরীতে ৫-৬ গুণ বেশি যাত্রী স্টেশনে অবস্থান করতেন। অনলাইন থেকে টিকিট কাটতেও লাখ লাখ মানুষ চেষ্টা করেছেন। কেউ টিকিট পেয়েছেন, কেউ পাননি।

রেলসংশ্লিষ্টরা জানান, যারা টিকিট কাটতে পারেননি-নিশ্চয় তারা বিকল্প ব্যবস্থায় রাজধানী ছাড়বেন। কিন্তু মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের আশায় যারা স্টেশনে আসবেন, তারাও টিকিট পাবেন কি না তা অনিশ্চিত। কারণ এসব ট্রেনেও নির্ধারিত টিকিট বিক্রি হবে। এছাড়া শুধু যাত্রার দিন আন্তঃনগর ট্রেনের মোট আসনের বিপরীতে ২৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট বিক্রি করা হবে। লোকাল, মেইল, কমিউটার ও ২৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট কাটতে স্টেশনে ভিড় জমাবে শত শত মানুষ। যারা টিকিট পাবেন না, বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠবেন। এমন শঙ্কা করছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. শাহ আলম কিরণ শিশির বলেন, যারা টিকিট কাটতে পেরেছেন, তাদের ভ্রমণ নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। একই সঙ্গে বিনা টিকিটি রোধ করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল থেকে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীদের ভ্রমণ শুরু হবে। কাউকে ট্রেনের ছাদ অথবা বিনা টিকিটে ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না। ঢাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ যাত্রী বিভিন্ন ট্রেনে রাজধানী ছাড়বে। যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্টেশন থাকবে র‌্যাব, পুলিশসহ রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ঊষার আলো-এসএ