UsharAlo logo
শুক্রবার, ৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘বর্তমান পদ্ধতিতে নারী এমপিদের সঙ্গে জনগণের সরাসরি সম্পর্ক গড়ে ওঠে না’

ঊষার আলো রিপোর্ট
জুন ৪, ২০২৫ ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংরক্ষিত আসনের পদ্ধতিতে নারী এমপিদের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের সরাসরি সম্পর্ক গড়ে ওঠে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জারার ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের হুবহু তুলে ধরা হলো- “আমি লিখেছি যে সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের যে পদ্ধতি আছে এ ব্যবস্থায় নারী এমপিদের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। এজন্য এনসিপি থেকে আমরা বলছি যে, নারী সাংসদরা যেন একটি নির্দিষ্ট আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মানুষের ভোটে নির্বাচিত হন। এতে করে তাদের স্থানীয় মানুষের সমস্যা নিয়ে কাজ করার সুযোগও তৈরি হবে।

এটা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক লিখেছেন, ‘ সংসদ সদস্যের কাজ কী- সেটা কী এই এনসিপি নেতা জানেন? স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যোগসূত্র কেন হতে হবে? স্থানীয় সরকারের কাজটা কী তাহলে?’ এ মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন নির্বাচন কমিশনের একজন ডেপুটি সচিবও।

ওনাদের মতো বিজ্ঞজনের মধ্যে যেহেতু কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে, তাই ভাবলাম সংক্ষেপে লিখি সংসদ সদস্যের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকা কেন জরুরি। কেন এটা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তির অংশ।

১. সংসদ সদস্য শুধু আইন প্রণয়ন করেন না। তারা আইন প্রণয়ন করেন কোনো জনগোষ্ঠীর পক্ষে, তাদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যাকে সামনে রেখে। এই কাজটি তখনই অর্থবহ হয়, যখন সাংসদের নিজস্ব একটি জনভিত্তি থাকে, যারা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং যাদের কাছে তিনি জবাবদিহি করতে বাধ্য। প্রতিনিধিত্বের ধারণাই হল, ‘আমি কথা বলছি, কারণ আমাকে কেউ পাঠিয়েছে।’

২. যদি কোনো সংসদ সদস্যের একটি নির্দিষ্ট ভোটদাতা জনগোষ্ঠী না থাকে, তাহলে তার কাজের জবাবদিহি থাকে কেবল দলের কাছে। তারা তখন দলের কথা মতো চলেন, দল যা চায় সেটা করেন। কিন্তু গণতন্ত্রে সংসদ সদস্যের প্রথম দায়বদ্ধতা থাকা উচিত জনগণের কাছে, যাদের পক্ষে তিনি আইন প্রণয়ন করছেন। ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত না হলে, এ জবাবদিহির চক্রটাই ভেঙে পড়ে।

৩. কারখানার শ্রমিকদের সমস্যার কথা আপনি রিপোর্ট পড়ে জানতে পারেন, কিন্তু সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলে সেই শ্রমিকের কান্না আপনি নিজের অফিসে শুনবেন। কৃষকের কথায় আপনি শুনবেন কীভাবে সার না পাওয়ায় তার মাঠ নষ্ট হয়েছে। মা শুনাবেন কীভাবে স্থানীয় ক্লিনিকে ইনজেকশন ছিল না। এ সমস্যাগুলোর সমাধান আইনের ভাষায় প্রতিফলিত করতে হলে মাঠের সঙ্গে বাস্তব সংযোগ থাকা প্রয়োজন। এ সংযোগ বই পড়ে হয় না, প্রক্সি দিয়ে হয় না, শুধু জনগণের সঙ্গে মেশার মধ্য দিয়ে হয়।

৪. বলা হয়, ‘তাহলে স্থানীয় সরকারের কাজ কী?’ উত্তর সোজা, স্থানীয় সরকার বাস্তবায়ন করে, সংসদ সদস্য নীতি নির্ধারণ করেন। স্থানীয় সরকার যদি বাজেট না পায়, দুর্নীতি হয়, জনগণ সেবা না পায়- এ ব্যর্থতা পার্লামেন্টে তুলে ধরার দায়িত্ব সংসদ সদস্যের। এটা কোনো দ্বন্দ্ব না, বরং গণতান্ত্রিক কাঠামোর দুই স্তরের সংযোগ।

৫. যুক্তরাজ্যের প্রতিটি এমপি সপ্তাহে একাধিকবার ‘constituency surgeries’ চালান, যেখানে এলাকার সাধারণ মানুষ এসে নিজেদের সমস্যার কথা বলেন। হাউজিং সমস্যা, বেনিফিট কাটা, ইমিগ্রেশন, সব কিছুই শোনা হয়, এবং সেই কথা সংসদে তোলা হয়। এমপির সাংবিধানিক কর্তৃত্ব আসে এ যোগসূত্র থেকেই। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কেউও বলেন না, ‘আমার জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও চলবে।’

শেষ কথা, সংসদ সদস্য মানেই একটি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। আর প্রতিনিধিত্ব মানেই ভোটার, এলাকা, সমস্যা ও সমাধানের দায়িত্ব। সেই ক্ষমতা কেবল মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র দিয়েই অর্জিত হয়। এটা নারী বা পুরুষ, কারো জন্যই ভিন্ন নয়।

আমরা চাই নারী নেতৃত্ব আসুক এবং সেটা যেন হয় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে। তারা আইন করবেন, জবাব দেবেন, এবং মানুষের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। এটাই তো গণতন্ত্র।”

ঊষার আলো-এসএ